মো. আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ :: ভুয়া কাগজে আবেদন। তাও শিক্ষকতা পেশায়। শুরুতেই প্রমাণ করে তারা মিথ্যাবাদি। নিয়োগের পর কি হবে এমন লোকজনদের। এনিয়ে বিশ্বনাথে আজ ১৬ সেপ্টেম্বর দিনভর আলোচনা-সমালোচনা চলে সচেতন মহলে। চাকুরীর জন্য নিজের জন্মস্থানকে অস্বীকার করা। তাও আবার কাগজে কলমে। এমন মিথ্যাচার জাতি কিভাবে মেনে নিবে।
চাকুরী পাওয়ার পর তারা চলে যায় নিজের আপন ঠিকানায়। অবিশ্বাস, অস্বীকার করে চাকুরী পাওয়ার স্থানকে। এমন পর্যায়ে এসে ধরা পড়েছেন ৫জন ব্যক্তি। তারা ভুয়া কাগজে আবেদন করেন। তাদের বিরুদ্ধে সচেতন মহলের একজন অভিযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি গঠন হয়। তদন্ত কমিটি বিশ্বনাথে এসে তদন্ত করেন। ৫জনের মধ্যে ৩ জন ভুয়া কাগজে আবেদন করেছেন বলে জানাগেছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত (২০১৪ সালের স্থগিতকৃত) ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগ পরীক্ষায়ও বহিরাগতদের দাপট রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৭৬ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ন হন। এই ৭৬ জনের মধ্যে ২ ও ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় ২৫ জন প্রার্থী চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ন হন। এই ২৫ জনের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী।
অভিযোগ রয়েছে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ৭৬ জনের মধ্যে প্রায় ৩৫ জনই ছিলেন বগিরাগত। যারা জালিয়াতি করে ভুয়া নাগরিক সনদ নিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। স্থানীয় প্রার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করলে সাথে সাথেই মৌখিক পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ‘মুকিবুর রহমান (রোলনং ৫৩২০৫২৬) ও আহসান উল্লাহ (রোলনং ৫৩২০৫২৫)’ নামের দুই পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়।
স্থানীয় প্রার্থীদের অভিযোগ, যে ২৫ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ন হয়েছেন সঠিক তদন্ত হলে এই ২৫ জনের মধ্যেই ১০/১২ জনকে পাওয়া যাবে যারা জালিয়াতি করে ভুয়া নাগরিক সনদ সংগ্রহ করেছে। যে কারণে স্থানীয় প্রার্থীরা তদন্ত সাপেক্ষে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার সাথে সাথেই ‘সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ‘৩ জন (সঞ্জয় তালুকদার-৫৩২০১৭১, শায়ান চন্দ্র তালুকদার-৫৩২০২৩৪, জাহিদুল হাসান-৫৩১৩০১৮) বহিরাগত প্রার্থীর নাম ও রোল নং’ উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয় প্রার্থীদের সেই লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ‘জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোন্তাকিম’র নেতৃত্বে ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে। তদন্ত কমিটির অপর সদস্য ছিলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমদ। তদন্তে স্থানীয় প্রার্থীদের অভিযোগ শতভাগ সত্য মর্মে তদন্ত কমিটিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন ‘বিশ্বনাথ সদর ও রামপাশা’ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ।
স্থানীয় প্রার্থীদের আরও অভিযোগ, ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর আমরা আরও কয়েক জন বহিরাগত প্রার্থীর নাম ও রোলনং পেয়েছি। তারা আখিঁ বণিক (রোলনং ৫৩১৬৪৮৫), তমা মিস্ত্রি (রোলনং ৫৩২১২৩৭), সুনিতা শর্মা’সহ আরোও বেশ কয়েকজন। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আমরা পূর্বে ন্যায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করব।
চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ন প্রার্থীদের প্রদান করা নাগরিক সনদসহ সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে পুনঃরায় তদন্ত করে নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় প্রার্থীরা। কারণ বহিরাগতরা অবৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করে চাকুরী গ্রহন করে। আর নিয়োগ স্থায়ী হওয়ার পর নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়, ফলে বিশ্বনাথে শিক্ষক সংকট থেকেই যায়। তাই সঠিকভাবে তদন্ত করে স্থানীয়রা চাকুরী পেলে বিশ্বনাথের শিক্ষক সংকট কমে যাবে।
রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, জাহিদুল হাসান নামের ওই ব্যক্তি রামপাশা ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নন, সে (জাহিদুল) তিনি আমার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নাগরিক সনদ তৈরী করেছেন।
বিশ্বনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক বলেন, সঞ্জয় তালুকদার ও শায়ান চন্দ্র তালুকদার নামের ওই দুই ব্যক্তি বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাদের নাগরিক সনদে উল্লেখ থাকা জন্মনিবন্ধন কার্ডে ‘উপজেলা বা ইউনিয়নের যে কোড নাম্বার’ উল্লেখ করা হয়েছে তা সিলেট জেলারও নন। তাদের নাগরিক সনদটি ভুয়া।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, জালিয়াতি করে কিংবা ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে কেউ ‘সহকারী শিক্ষক’সহ কোন চাকুরীই করতে পারবেন না। সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কেউ অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নিলে তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তদন্তে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিশ্বনাথ উপজেলার স্থানীয় প্রার্থীদের করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে দাবী করে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোন্তাকিম বলেন, সঞ্জয় তালুকদার ও শায়ান চন্দ্র তালুকদার বিশ্বনাথ সদর ইউপির এবং জাহিদুল হাসান রামপাশা ইউপির স্থায়ী নাগরিক নয় মর্মে সংশ্লিস্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আর তিন জন জালিয়াতি করে ভুয়া নাগরিক সনদ তৈরী করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যানরা। আর কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে তাও তদন্ত করা।
Sharing is caring!