ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ভূল রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
জানাগেছে, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার শেরপুর গ্রামের মৃত যোগেশ বৈদ্যের ছেলে জগন্নাথপুর উপজেলা সংবাদপত্র বিক্রেতা সমিতির সভাপতি নিকেশ বৈদ্য বেশ কিছু দিন ধরে জ¦র ও কফ জনিত রোগে ভোগছেন। এ রোগের চিকিৎসা করাতে গত ২২ আগষ্ট নিকেশ বৈদ্য স্থানীয় জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ মধু সুধন ধরের শরনাপন্ন হন। এ সময় ডাঃ মধু সুধন ধর রোগী নিকেশ বৈদ্যকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করে ব্যবস্থাপত্র দেন। এতে বুক, রক্ত ও কফ পরীক্ষা করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।
ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৬ আগষ্ট রোগী নিকেশ বৈদ্য জগন্নাথপুর উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কফ ও স্থানীয় পেরুয়া কম্পিউটারাইজড ডায়াগনষ্টিক কমপ্লেক্সে গিয়ে বুকের এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করান। পরে রোগী নিকেশ বৈদ্য এসব রিপোর্ট ডাঃ মধু সুধন ধরকে দেখালে তিনি কোন সমস্যা নেই বলে সামান্য ওষুধ দেন। এসব ওষুধ খাওয়ার পর রোগী নিকেশ বৈদ্যের রোগ আরো বেড়ে যায়।
অবশেষে গত ৬ সেপ্টেম্বর নিকেশ বৈদ্য বিভিন্ন ব্যক্তির সহযোগিতা নিয়ে সিলেট স্টেডিয়াম মার্কেটে গিয়ে ডাঃ এএসএম মেছবাহ উদ্দিনের শরনাপন্ন হন। এ সময় ডাঃ এএসএম মেছবাহ উদ্দিন রোগী নিকেশ বৈদ্যকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করে ব্যবস্থাপত্র দেন। এতে বুক, পেট, রক্ত ও প্রশ্রাব পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরপর সিলেট দি ল্যাব এইড কম্পিউটারাইজড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আবার ডাঃ এএসএম মেছবাহ উদ্দিনকে দেখান রোগী নিকেশ বৈদ্য। তখন উক্ত রিপোর্ট দেখে ডাঃ এএসএম মেছবাহ উদ্দিন জানান রোগী নিকেশ বৈদ্যের “যক্ষা” রোগ হয়েছে। বর্তমানে ডাঃ এএসএম মেছবাহ উদ্দিনের চিকিৎসায় রোগী নিকেশ বৈদ্যের উন্নতি হচ্ছে।
তবে ভূল রিপোর্ট দিয়ে রোগীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার কারণে জগন্নাথপুর উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কফ পরীক্ষক ও জগন্নাথপুর পেরুয়া কম্পিউটারাইজড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে তদন্তক্রমে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী বরাবরে ডাকযোগে অভিযোগ প্রদান করেন ভূক্তভোগী রোগী নিকেশ বৈদ্য। যার অনুলিপি সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী, সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের প্রদান করা হয়।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভূক্তভোগী রোগী জগন্নাথপুর উপজেলা সংবাদপত্র বিক্রেতা সমিতির সভাপতি নিকেশ বৈদ্য বলেন, ভূল রিপোর্ট দিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। আমি যদি সিলেটে গিয়ে চিকিৎসা না করাতাম, তা হলে হয়তো মরেই যেতাম। জানিনা আমার মতো আরো কত রোগী এসব ভূল রিপোর্টের শিকার হয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। তাই আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এদিকে-১৯ সেপ্টেম্বর বুধবার এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কফ পরীক্ষা কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু সাইদ মিয়া বলেন, আমাদের হাসপাতালে কফ বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার নেই। কফ পরীক্ষার কিছু নিয়ম রয়েছে। সকাল বেলার কফ হলে সঠিকভাবে রিপোর্ট আসে। তা না হলে অনেক সময় রোগ ধরা পড়ে না।
তবে জগন্নাথপুর পেরুয়া কম্পিউটারাইজড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক এমএ নুর সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমাদের রিপোর্ট সঠিক, ভূল নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সেন্টারের এক্সরে রিপোর্ট দেন সিলেটের ডাঃ মহিতোষ রঞ্জন দাস ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেন প্যাথলজিষ্ট ডিপ্লোমা আরিফুর রহমান অপু।
জানতে চাইলে ডাঃ মধু সুধন ধর বলেন, আমরা সাধারণত বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্টের আলোকে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এ রোগীর টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়েছি।