সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার অনুমোদন না পেলেও মেলার প্রচারপত্র বিলি করে দিয়েছে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স। এ রকম একটি প্রচারপত্র বৃহস্পতিবার মেলায় স্টল নিতে আগ্রহি এক দোকানদারের কাছে থেকে হস্তগত হয়েছে। প্রচারপত্রে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে মেলা শুরু করার ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, মাঠের অনুমোদন না পাওয়া গেলেও মেলার ভেন্যু হিসেবে শাহীঈদগাহস্থ সদর উপজেলা খেলার মাঠের নাম উল্লেখ করা রয়েছে। সিলেট চেম্বার অব কমার্স কর্তৃক মেলার আগেই নিয়োগপ্রাপ্ত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের এমন প্রচারপত্রের উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। যেখানে ০১ নভেম্বর হতে মেলা করার দাবি জানিয়ে আবেদন করেছে সিলেট চেম্বার, সেখানে ১৫ অক্টোবর থেকে মেলা শুরুর ঘোষণায় নানা প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। এদিকে,যথাযথ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করতে পারছেনা সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স। ফলে টানা ৫ম মেলা’র আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে অনেকটাই সংশয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের জন্য স্থানীয় দুটি চেম্বার থেকে পৃথকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। চলতি বছরের ৬ আগষ্ট মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স। আবেদনের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার স্বাক্ষরিত ২৬ ০০ ০০০০ ১০৬.৮৬.০১২.১৭/২২৮ নং পরিপত্রে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এর অনুকুলে ০১ নভেম্বর হইতে মেলা আয়োজনের অনুমোদন প্রদান করা হয়।
এদিকে, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এর ৫ দিন পর ১১ আগষ্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবরে (২০১৭-১৮) অর্থবছরের জন্য ০১ অক্টোবর ২০১৮ই ং থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের আবেদন করে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ই-াস্ট্রিজ। সিলেট চেম্বারের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ কে এম আলী আহাদ খান স্বাক্ষরিত ২৬ ০০ ০০০০ ১০৬.৮৬.০১২.১৭/২৩৮ নং পরিপত্রে সিলেট চেম্বারের উল্লেখিত অর্থবছরকে অতিক্রান্ত উল্লেখ করে অনুমোদন বাতিল করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য আবেদন করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়। আবেদনের সাথে সিলেট চেম্বার কর্তৃক পরিশোধকৃত ২০০ ডলার সমমূল্যের অর্থ ট্রেজারি চালানে পরবর্তী সময়ে পূণরায় জমা নেওয়া হবেনা বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। সিলেট চেম্বারের অনুকুলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ প্রাপ্তির পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মোহিত ১৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের ২০১৮/১৮৯ নং পরিপত্রের মাধ্যমে সিলেট চেম্বারের মেলা আয়োজন বন্ধ করার প্রচেষ্টা শুভ নয়, উল্লেখ করে সিলেট চেম্বারের আয়োজনকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ প্রদান করেন।
এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ক্যালে-ার অনুযায়ী সিলেট চেম্বার মেলার অনুমোদন প্রাপ্ত না হলেও অর্থমন্ত্রীর এমন সুপারিশ নিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ী মহলে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। ব্যবসায়ীদের মতে, পুরো বিষয় অবগত না করে সিলেট চেম্বারের জামাতঘেঁষা একটি চক্র অর্থমন্ত্রীকে বিতর্কিত করে তুলতে উঠে পড়ে লেগে। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী বলয়ের পরিচালকদের যুক্ত করে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের হীন প্রচেষ্টা চালায় তারা। এর মাধ্যমে জামাতঘেঁষা ঐ চক্রটি নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে বিরুপ ধারণা তৈরি করা এবং অনুমোদন প্রাপ্ত সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন বন্ধ রাখার প্রয়াস চালায়।
এদিকে, অনুমোদন না পেলেও মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়োগ করেছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স। দায়িত্ব পেয়েছেন মনিপুরি তাঁত শিল্প ও জামদানি বেনারসী কল্যাণ ফাউ-েশন। সংগঠনটির সভাপতি হাজি আব্দুল গফ্ফার। তিনি জাতীয়তাবাদি রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে। মামলার কারণে বিগত সিসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন এই প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করে দেয়। এর ফলে সিলেট চেম্বারের জামাত-বিএনপি ঘেঁষা চক্রের দাপট নতুন করে প্রকাশ পেলো-এমন মন্তব্য ব্যবসায়ীদের।
তাছাড়া, বিগত দিনে সিলেট চেম্বারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন নিয়ে বিস্তর অনিয়মের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২০০৯ সালে তৎকালীন সিলেট চেম্বারের সভাপতি জুন্নুন মাহমুদ খান সহ পরিচালকদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা এখনো আদালতে চলমান। ফলে ২০১০ সাল থেকে সিলেট চেম্বার সিলেটে কোনো রকম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করতে পারেনি। তাছাড়া, গেলো বছরে মেলা আয়োজনের নামে মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকেও অগ্রিম টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সিলেট চেম্বারের উপর।
মেলা প্রচারপত্রের বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরি জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, যেখানে মেলা অনুমোদন প্রাপ্ত হয়নি সেখানে প্রচারপত্র বিলি অবশ্যই অমার্জনীয় অপরাধ। তিনি বলেন, সিলেট চেম্বারের অনুকুলে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় বরাবরে পাঠানো সুপারিশনামার প্রেক্ষিতে অনুমোদন আসলে তারা প্রচার চালাতে পারে। তবে, যেহেতু আজ অফিসে ছিলাম না, সেহেতু অনুমোদনের বিষয়টি আমার জানা নাই।
প্রচারপত্রে সদর উপজেলা খেলার মাঠের উল্লেখ থাকলেও মাঠের অনুমোদনের ব্যাপারে নিশ্চিত নন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। এ ব্যাপরে সদও উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বলেন, মেলার জন্য মাঠের অনুমোদন এখনো কাউকে দেওয়া হয়নি । তবে, অনুমোদন দেওয়া হয় আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে, কোনও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে নয়।
নিয়োগপ্রাপ্ত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট মনিপুরি তাঁত শিল্প ও জামদানি বেনারসী কল্যাণ ফাউ-েশন এর সভাপতিকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মেলার অনুমোদন হলেই কাগজগুলো প্রেস থেকে বের হবে। তবে, কিভাবে সেটি বাজারে গেলো বিষয়টি জানা নেই। তিনি বলেন, কেউ হয়তো ষড়যন্ত্র করে এটিকে বাজারজাত করছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd