বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামে অগ্নিদগ্ধে একই পরিবারের ৬জন আহত ও অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ চম্পা বেগম নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহতের ভাই উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের মৃত আব্দুল মছব্বিরের পুত্র সফিক মিয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-২১ (তাং- ১৭/০৯/১৮ইং)
মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত ১১টায় তার বোন চম্পা বেগম ও ভগ্নিপতি ফারুক মিয়া তাদের ৩পুত্র ও ১ কন্যাকে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামে নিজ বসত ঘরে দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক আড়াইটায় চম্পা বেগম তার ছোট পুত্রকে প্রস্রাব করাতে ঘুম থেকে জাগলে দেখতে পান কে বা কাহারা হঠাৎ ঘরের সামনের ষ্টিলের দরজার নিচের ভাঙা অংশ দিয়ে বাহির থেকে ঘরের ভিতরে কিছু নিক্ষেপ করার সাথে সাথে শব্দ হয়ে ঘরের ভিতরে দরজার পাশে রাখা সোফায় আগুন লেগে যায়। এসময় ঘর থেকে বাহির হওয়ার চেষ্টা করলে আগুণে দগ্ধ হন চম্পা বেগম (৪৫), তার স্বামী ফারুক মিয়া (৫০), মেয়ে রিফা বেগম ( ১৮), ছেলে এমাদ উদ্দিন (১৪), ইমরান আহমদ (১২) ও নিজাম উদ্দিন (১০)। তাদের আর্ত চিৎকারে পাশের ঘরে থাকা রাজু মিয়া (ফারুক মিয়ার পুত্র) ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা ভেঙ্গে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। আহতদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে চম্পা বেগম মৃত্যুবরণ করেন।
এজাহারে বাদি আরো উল্লেখ করেন, তার ভগ্নিপতি ফারুক মিয়ার পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা মৃত হুসন আলীর পুত্র আরশ আলী (৩৭) ও আবরুছ আলী (৪৯) এবং ফারুক মিয়ার সৎ ভাই ফরিদ মিয়ার স্ত্রী রেহেনা বেগম (২৫) গংদের সাথে কিছুদিন যাবৎ চম্পা বেগম ও তার স্বামী ফারুক মিয়ার শক্রতা ও মনোমালিন্য চলিয়া আসিতেছে। আরশ আলী ও রেহেনা বেগমের অনৈতিক সম্পর্ক ও পরকীয়া প্রেমের বিষয়ে ফারুক মিয়া প্রতিবাদ করায় উক্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে শালিস বৈঠক হয়। আর এই আক্রোশে আরশ আলী বাদির ভগ্নীপতি ফারুক মিয়াকে স্ব-পরিবারে খুন করার হুমকি দেন। আরশ আলীর অনৈতিক চলাফেরার বিষয়টি আবরুছ আলীকে ফারুক মিয়া অবহিত করলে আবরুছ তার বাড়িতে ফারুক মিয়াকে ডেকে নিয়ে অপমান ও গালিগালাজ করেন। এতে সন্দেহ হচ্ছে, আরশ আলী, আবরুছ আলী ও রেহেনা বেগম গংরা নিজে অথবা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করার উদ্দেশ্যে বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে চম্পা বেগমকে পোড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।
জানা যায়, ফারুক মিয়ার আপন বোনের স্বামী আবরুছ আলী ও সৎ বোনের স্বামী আরশ আলী। আবরুছ আলী ও আরশ তারা আপন দুই ভান। অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর থেকে আরশ আলী, আবরুছ আলী ও রেহেনা বেগম আত্মগোপনে রয়েছেন।
এদিকে, চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন অগ্নিদগ্ধরা। তারা বর্তমানে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে, সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিকান্ডের ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্বনাথের চাঞ্চল্যকর সকল ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনারও রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে।