সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জ জেলার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় বারেকটিলা হুমকির মূখে পড়েছে। তাহিরপুর উপজেলার ধলাইরগাঁও বিট অফিসের আওতাবুক্ত উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী স্থানে বারেকটিলার অবস্থান। বারেকটিলার বড়গুপ টিলায় সরকারী গাছ ও পাথর পাচারকারী প্রভাবশালী ১৫/২০জনের রয়েছে একটি চক্র। বারেকটিলার ভূমি খেকো চক্র,গাছ চোর আর পাথর উত্তোলন কারীদের দখলে চলে যাচ্ছে। এদের প্রতিহত করতে না পারার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র ও এই টিলা। সম্প্রতি ঐসব চক্রের কাজে বাধা দিলে ঐ প্রভাবশালীরা স্থানীয় লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে আহত করে। পরে ১৫সেপ্টেম্ভর স্থানীয় এলাকাবাসী প্রতিবাদে মানববন্ধন পালন করে।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়-বারেকটিলায় ৩৬৫একর জায়গা জুড়ে ছিল বাহারি রং বেরংঙ্গের গাছ-পালা ও প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযে ভরপুর ছিল টিলার চার পাশ। এক সময় বারেকটিলায় স্থানীয় আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রনে থাকাকালীন টিলায় ফলানো হতো আনারস,লেবু,কমলা,পানিজাম,বেল,কমলা লেবু,টিলাজুড়ে বেত উলুবন ও কাশ বনের বাগান শুভা পেত। টিলার গাঠ-গাছালি,দেশী বিদেশী অতিথি পাখিদের কলরবে মুখরীত ছিল। বারেক টিলার বনাঞ্চল জুড়ে ছিল হাতি,হরিণ,বাঘ,ভাল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রানী। কিন্তু প্রায় ২যুগের ব্যবধানে আম,জাম,কাঠল,জলপাই,লিচু বিভিন্ন বন্য প্রানীসহ অর্ধলক্ষাধিক গাছ প্রভাবশালীদের তৎপরতায় বর্তমানে এ টিলা থেকে কেটে বাজারে বিক্রি,জ্বালানী কাঠ হিসাবে ব্যবহৃত ও টিলা থেকে পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। বারেকটিলার পাশে বসবাসকারী গারো সম্প্রদায়গন জানান,বৃক্ষহীন বারেকটিলায় পাথর উত্তোলনের জন্য আবাধে যত্রতত্র মাটি খুরাখুড়ি,গাছ কেটে ফেলার কারনে জীববৈচিত্র হারানো টিলা গুলো দেখতে এখন কবর স্থানের মত মনে হয়। তারা আরো জানান-ভূমিখেকু চক্রের দখল থেকে টিলার বৃক্ষ,জীববৈচিত্র ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় উপজাতি ও ভূমিহীনদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হব। এখানে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা পেলে বারেকটিলা ফিরে পাবে তার হারানো সৌর্ন্দয।
এই বারেকটিলার সম্পর্কে তথ্য নিয়ে জানাযায়-তাহিরপুর থানার পাশ্ববর্তী সূর্যেরগাঁও গ্রামের নলিনী বাবু ১৯৬৭সালে বারেকটিলা থেকে আগত বাঘ দ্বারাই নিহত হয়েছিলেন। পরে এলাকার লোকজন মিলে বাঘটিকে মেরে ফেলে। ১৯৮৮সালে বন্যায় মাহারাম নদীর ভাঙ্গনের মাহারাম গ্রামটি বিলীন হয়ে গেলে শতাধিক পরিবার বসতি গড়ে তুলে এই টিলায়। ধীরে ধীরে পাঁচ শতাধিক বাঙ্গালী পারিবারের বসতি গড়ে তুলে এই টিলায়। এরপর এই টিলা থেকে নির্বিচারে কাটা শুরু হয় গাছ।
আরো জানাযায়,এ হাওরাঞ্চলে ১৯৯৪সালে ৮ই সেপ্টেম্বরে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান টেকেরঘাট চুরাপাথর খনিজ প্রকল্পের এক বিশাল জন সভায় তাহিরপুর উপজেলায় একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী,একটি কাচশিল্প ও বারেকটিলায় একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও বতর্মান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২০১০সালের ১০নভেম্বরে তাহিরপুরে বিশাল জনসভায় একেই প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতির অনুযায়ী বারেকটিলায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে অনেকেই আজও স্বপ দেখেন আজও।
মাসুদ,সাজু,সাদেক আলীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী জানান-বারেকটিলা তার সৌন্দর্য হারিয়ে এখন হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা স্বপ্ন দেখি প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয ও জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ বারেকটিলায় একটি পর্যটন হোটেল,মোটেল ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনে বিএনপি ও আ,লীগের র্শীষ নেতৃবৃন্ধের প্রতিশ্রুতির। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে এই এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবসমাজের একটি কাজে সুযোগ সৃষ্টি হবে। বেকার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। আর বারেকটিলা ধংশের হাত থেকে মুক্তি পাবে।
চাঁনপুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বারেকটিলা বনায়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর মাষ্টার বলেন,গত ১৫ই আগষ্ট শনিবার দুপুরে বড়গুপ টিলা গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুর রহমান,জলিল মিয়া,বিল্লাল মিয়া ও জাহিদ হাসানসহ ১৫/২০জনের গাছ ও পাথর পাচারকারী চক্র গাছ কেটে ও পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যায় আমি বাধা দেওয়া আমার উপর হামলা করে আহত করে। খবর পেয়ে আমার আতœীয় স্বজন বাধা দিলে তাদের উপরও হামলা চালায়। এই চক্রটি প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির একমাত্র পর্যটন স্পট সামাজিক বনায়নের সরকারি গাছ কেটে ও টিলার উপর থেকে পাথর উত্তোলণ করে বিক্রয় করছে। এদের বিরোদ্ধ আইন প্রয়োগকারীর হস্তক্ষেপ কামানা করছি।
স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ উপজেলার কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান-বারেকটিলা(বড়গোপ) ও মাঝের টিলার সম্পূর্ন জায়গা সরকারী হেফাজতে দিয়ে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির মাধ্যমে আদিবাসী ও বাঙ্গালীদের সমন্বয়ে স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করে আম,জাম,কাঠাল ও রাবার বাগান গড়ে তুলা সম্ভব। পর্যটন শিল্প গড়া হলে উপজেলাবাসীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব বলেন,বারেক টিলা রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে সব রখম চেষ্টা করা হবে। টিলায় কোন অন্যায়কারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd