সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা কোটায় ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (২০১৪ সালের স্থগিতকৃত)’ পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত হওয়া ২৫ জনের মধ্যে আরোও ৫ জন বহিরাগতদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে ভূয়া নাগরিক সনদ নিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে ইতিমধ্যে ৫ জনকে বাতিল করেছে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে তদন্ত সাপেক্ষে এসব বহিরাগতদের নিয়োগ বাতিল ও তাদের স্থলে স্থানীয় বৈধ প্রার্থীদেরকে নিয়োগ প্রদান করার দাবিতে শীঘ্রই বিশ্বনাথ নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
তদন্ত সাপেক্ষে জালিয়াতকারী আরোও ৫ জন’সহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এসব বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ‘সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি)’সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে লিখিত অভিযোগগুলো দায়ের করেছেন উপজেলা বৈধ ও স্থানীয় প্রার্থীরা।
জালিয়াতি করে ভূয়া নাগরিক সনদ সংগ্রহকারী বহিরাগতরা হলেন- আঁখি বণিক (রোলনং ৫৩১৬৪৮৫), তমা মিস্ত্রি (রোলনং ৫৩২১২৩৭), তাহমিনা ইয়াসমিন (রোলনং ৫৩২১৩৩৩), বেবী সরকার (রোলনং ৫৩৩০৫১১), হেপী সরকার (রোলনং ৫৩৩০৫২৮)। এছাড়া একই অভিযোগপত্রে উল্লেখ থাকা ‘সঞ্জয় তালুকদার (রোলনং ৫৩২০১৭১), শায়ান চন্দ্র তালুকদার (রোলনং ৫৩২০২৩৪), জাহিদুল হাসান (রোলনং ৫৩১৩০১৮)’র নিয়োগ স্থানীয় প্রার্থীদের লিখিত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্তের পর বাতিল করা হয়েছে।
এরপূর্বে ২ ও ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষার সময় স্থানীয় প্রার্থীদের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌখিক পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ‘মুকিবুর রহমান (রোলনং ৫৩২০৫২৬) ও আহসান উল্লাহ (রোলনং ৫৩২০৫২৫)’ নামের দুই জালিয়াতকারী বহিরাগতকে বাতিল করে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া নজরুল ইসলাম (রোলনং ৫৩১০৬১৬)’সহ চূড়ান্ত নিয়োগ হওয়া আরোও কয়েক জন প্রার্থীর বিরুদ্ধেও জাতিয়াতি করে নাগরিক সনদ সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জালিয়াতকারী বহিরাগতদের কারণে স্থানীয় প্রার্থীরা চাকুরী থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মনে বিরাজ করছে ক্ষোভ। অনেক স্থানে রয়েছে চাপা উত্তেজনা। বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগপত্র দায়েরকারীদেরকে নানান ভাবে হুমকি প্রদানেরও অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বনাথে প্রভাবশালী কিছু অসাধু কর্মকর্তা-ব্যক্তির কারণে এসব অপকর্ম পরিচালিত হয়ে আসছে বলে জানা গেছে। তারা অত্যান্ত প্রভাবশালী হওয়ার কারণে এসব অসাধু কর্মকর্তা-ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করেন না বলে শুনা গেছে।
স্থানীয় প্রার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের স্থগিতকৃত ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ’ পরীক্ষা এবছরের ২৬ মে অনুষ্ঠিত হয়। ওই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ন হওয়া ৭৬ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৩৫ জনই বহিরাগত ছিল বলে অভিযোগ উঠে। যেকারণে এসব বহিরাগতদের বিরুদ্ধে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় প্রার্থীরা। এরপর ২ ও ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় এসব বহিরাগতরা অংশগ্রহণ করে। মৌখিক পরীক্ষা চলাকলে ২ জন প্রার্থীকে বহিস্কার করে কর্তৃপক্ষ। তবে ওই ২ জন ছাড়াও আরোও অনেক বহিরাগত প্রার্থী কোন প্রকারের বাঁধা ছাড়াই মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। যেকারণে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ন হওয়া ২৫ জনের মধ্যেই প্রায় ১০ জন রয়েছে বহিরাগত। যারা জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া নাগরিক সনদ সংগ্রহ করেছে। আর ওই ১০জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করেন দফায় দফায় সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ’সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে স্থানীয় প্রার্থীরা।
জালিয়াতি করে কোন বহিরাগত প্রার্থী ভূয়া নাগরিক সনদ সংগ্রহ করে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে চাকুরী করতে আসলে এবং তদন্তে তা প্রমাণিত হলে সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী।
স্থানীয় প্রার্থীদের লিখিত অভিযোগের সত্যতার প্রেক্ষিতেই জালিয়াতি করে ভূয়া নাগরিক সনদ সংগ্রহকারী ‘সঞ্জয় তালুকদার, শায়ান চন্দ্র তালুকদার ও জাহিদুল হাসান’ নামের ৩ জন নিয়োগ বাতিল হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন পূর্বের তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোন্তাকিম।
৮ জনের নাম উল্লেখ করে স্থানীয় প্রার্থীদের প্রদান করা আরেকটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে, তদন্তে লিখিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সাথে সাথেই তাদের নিয়োগ বাতিল করা হবে। কেউ অবৈধ পথ অবলম্বন করে চাকুরী করতে পারবেন না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd