হাসপাতালে অনিয়ম দূর্নীতি করেছেন আরএমও

প্রকাশিত: ৬:৫৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮

হাসপাতালে অনিয়ম দূর্নীতি করেছেন আরএমও

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকরা সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসেন না।

চিকিৎসকদের পরিবর্তে জরুরি বিভাগে রোগী দেখেন সুইপার ও স্টাফরা। হাসপাতালের অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে গেলে হবিগঞ্জ জেলার ৩ সংবাদ কর্মীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চুনারুঘাটে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু হয়। সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালের কাজ সম্পন্ন হয় ২০০৯ সালের জুনে। নির্মাণকাজ শেষ হলেও হাসপাতালটি চালুর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি কর্তৃপক্ষ। মূল ভবন ছাড়াও সার্জন, ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের আবাসনের জন্য তৈরি করা হয় আরও তিনটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন।

ভবন তৈরির পর হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সার্জন, ডাক্তার, নার্সসহ কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়নি ৯ বছরেও। ফলে চালু করা যাচ্ছে না ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল। এমনকি নতুন ভবনটি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পুরাতন ভবনে অপরিচ্ছন পরিবেশে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে রোগীদের। আর এখনও হাসপাতালটি ৩০ শয্যা থাকলেও গেটের সাইনবোর্ডে শোভা পাচ্ছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল।

অন্যদিকে, জনবল নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বরাদ্দ না দেয়ায় ৫০ শয্যা চালু করা যাচ্ছে না। বরাবরই  এমন অভিযোগ দিয়ে আসছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু প্রভাকরের অনুসন্ধানে ভেরিয়ে এসেছে অন্য তথ্য।

বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়, বর্তমানে সেখানে কর্মরত কর্তা-ব্যক্তিরাই ডাক্তার নার্স ও স্টাফ নিয়োগে উদাসিন। অন্যসকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেখানে ডাক্তার নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দরবারে বার বার ধর্ণা দিচ্ছে, সেখানে এই হাসপাতালের কর্তারা যোগাযোগও করেন না। কারণ এতে করে নিজেদের ভাগে কম পড়তে পারে। আবার সৎ ও ভালো কর্মকর্তা আসলে নিজেদের অনিয়মে ভাটা পড়তে পারে সে ভয়ও আছে।

ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন ৭ জন চিকিৎসক। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ১ জনের বেশি দুইজন উপস্থিত থাকেন না। জুনিয়র কনঃ গাইনী ডাঃ মাহবুবা আফরোজ বেতন নেন চুনারুঘাট হাসপাতাল থেকে। আর প্রেষণে সেবা দিচ্ছেন কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালে।

এদিকে, যুবক ও চতুর হওয়ায় অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছে আরএমও ডাঃ মো. মোমিন উদ্দিন চৌধুরী। নিজের ইচ্ছে মতো হাসপাতালে যাওয়া আসা করেন তিনি। আর অফিস সময়ের অধিকাংশ সময়ই তিনি অনুপস্থিত থাকেন। সখ্যতা রয়েছে বিভিন্ন ঔসধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভদের সাথে। অফিস সময়ে রিপ্রেজেন্টিভদের হাসপাতালে আসা নিষিদ্ধ থাকলেও বিভিন্ন কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভরা নির্দিধায় ঘুরাঘুরি করছেন হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে। দেখলে এমন মনে হবে যেন তারাই এই হাসপাতালের কর্মকর্তা। আর তাদের এমন দূঃসাহসাকিতার পেছনে যত অবদান তার সবটুকুই আরএমও মোমিন উদ্দিন চৌধুরীর। অফিস সময়ে রিপ্রেজেন্টিভদের কক্ষে নিষেধ করাতো দূরের কথা, উল্টো তিনি নিজের টেবিলে বসে তাদের সাথে চা আড্ডায় ব্যস্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। এছাড়াও তাদেরকে পেছনে থেকে সহযোগিতা করেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী লোকজন। তাই তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহে গেলে হবিগঞ্জ জেলার ৩ সাংবাদিকের উপর উত্তেজিত হন তিনি। এক পর্যায়ে তার সাথে যুক্ত হন ‘ওয়ান ফার্মা’ নামে একটি ঔষধ কম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ ফরিদ মিয়া। তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রভাকর টিমিরে উপর হামলা চালান। পরে উপস্থিত জনগণ তাদের শান্ত করেন।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ- প্রায়ই রিপ্রেজেন্টিভদের সাথে চা-আড্ডায় ব্যস্তত থাকেন আরএমও মোমিন উদ্দিন চৌধুরী। কেউ কিছু বললে ডাক্তারের আগে রিপ্রেজেন্টিভ ফরিদ উত্তেজিত হয়ে রোগীর স্বজনদের গালিগালাজ করেন। স্থানীয় লোকজনের সাথে সুর মিলিয়ে একই কথা বললেন টিএইচও গোলাম মঈউদ্দিনও।

তিনি বলেন- আমরা রিপ্রেজেন্টিভদের অফিস টাইমে হাসপাতালে আসতে নিষেধ করে দিয়েছি। কিন্তু অনেক রিপ্রেজেন্টিভ আছে এখানের স্থানীয়। তারা তাদের লোকাল পাওয়ার দেখিয়ে অনেক সময় অফিস টাইমেও চলে আসেন। আমাদের নিষেধ শুনেন না।

নিয়মিত ডাক্তার না আসার বিষয়ে তিনি বলেন- সবাই আসেন। কিন্তু মাঝে মধ্যে বক্তিগত কাজের কারণে অনেকে আসেন না। আবার অনেকে কোন কারণে হাসপাতালের বাহিরে গেলেই রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ দিতে শুরু করেন।

এ ব্যাপারে আরএমও ডাঃ মো. মোমিন উদ্দিন চৌধুরী বলেন- আমি সব সময় অফিসে থাকি। অনেক সময় বাথরুমে গেলেই রোগীরা চেছামেছি শুরু করে।

তিনি বলেন- রিপ্রেজেন্টিভদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। রোগী ও তাদের স্বজনরা যে অভিযোগ দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যে।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..