বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: অভাবের সংসার। নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা। তাই, বিদ্যুৎ ব্যবহারে অতি সতর্ক সিলেটের বিশ্বনাথের নজির মিয়ার পরিবার একটি বাতি ও একটি বৈদ্যুতিক পাখাই ব্যবহার করে আসছেন নিয়মিত। মাসে তাদের বিদ্যুৎ আসে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকার মধ্যেই। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটে চলতি মাসে। বিল এসেছে ৮শ’ ৭২টাকা। রীতিমত ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল। বিলের কাগজ হাতে পেয়ে চোখে যেন সর্ষে ফুল দেখছেন নজির মিয়ার স্ত্রী।
তিনি জানান, গত মে মাসে মাত্র ৭৭টাকা, জুন মাসে ১শ’ ৭৬টাকা, জুলাই মাসে ১শ’ ৯৬টাকা এবং আগস্ট মাসে ১শ’ ৩৬টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে তার। সবগুলো বিলই সময়মত আদায় করেছেন। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে বিল আসে ৮শ’ ৭২টাকা। সেখানে বকেয়া হিসেবে দেখানো হয় পূর্বেই আদায়কৃত জুলাই মাসের বিল। একটিমাত্র বাতি ও একটিমাত্র পাখা ব্যবহার করে এই অতিরিক্ত বিল দেখে তিনি শরণাপন্ন হন পল্লীবিদ্যুৎ বিশ্বনাথ জোনাল অফিসের। তারা জুলাই মাসের বিল বাদ দিয়ে শুধু সেপ্টেম্বরের বিল হিসেবে ৬শ’ ৬৭টাকা হাতে লিখে দেন। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু করার নেই বলে অফিস থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়।
জানা গেছে, পল্লীবিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল বিশ্বনাথ উপজেলার গ্রাহকদের কাছে এক আতংকের নাম। বেশ কিছুদিন ধরে এ উপজেলার পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহকেরা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের অভিযোগ করে আসছেন। জানিয়ে আসছেন তাদের ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থতার দিকটাও। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্র বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়ে আসছে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের খবর। গত ১৩ আগস্ট উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায়ও এমন অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা। এর প্রেক্ষিতে সভায় বিদ্যুৎ বিল তৈরীতে সতর্কতা অবলম্বনসহ জনসাধারণ যাতে ভোগান্তির শিকার না হন এবং বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অসংখ্য গ্রাহক ভূতুড়ে বিলের অভিযোগ তুলেন ফের। গতমাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় লোডশেডিং ও ভূতুড়ে বিলের সমস্যা সমাধানের জন্যে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ায় চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এসব নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন গ্রাহকেরা। এসময় গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা সমাধান করতে জোর দাবী তুলেন সভার বক্তারা। পাশাপাশি, একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার পল্লীবিদ্যুৎ বিশ্বনাথ জোনাল অফিসের ডিজিএমের সাথে আলোচনা করে সমস্যাটি দুর করবেন বলে জানান। কিন্তু প্রস্তাব গ্রহণের ১৮দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও গঠন করা হয়নি তদন্ত কমিটি। যার ফলে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি সেপ্টেম্বর মাসেও অনেক গ্রাহক পড়েছেন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কবলে।
নজির মিয়ার স্ত্রীর ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে কথা হলে পল্লীবিদ্যুৎ বিশ্বনাথ জোনাল অফিসের নবাগত ডিজিএম সামিউল কবির বলেন, এমন কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নতুন ডিজিএম যোগদান করেছেন। তার সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।