সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০১৮
এনামুল হাসান :: ‘এই যে ভাই, একটু আয় তোরে দেইকা লই, একটা তাবিজ দেই, বিপদ আপদ থেকে বাঁইচবেনে’। এ কথাগুলো সিলেট আদালত পাড়ার দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতে বসা সুমি বেগমের। গ্রাম থেকে শহরে আসা অনেক উঠতি বয়সী তরুণ সুমির ডাকে সারা দেয়। আবার কেউ কেউ শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়। সিলেট জেলা পরিষদের উল্টো দিকে আদালত পাড়ার দেয়াল ঘেঁষা ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গেলেই এভাবেই সুমির মতো বেদে তরুণীদের ডাক শোনা যায়।
সুমী বেগমের বয়স হবে আনুমানিক ১৫ বছর। এই বয়সেই এক সন্তানের মা হয়েছে সে। সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল ফর্সা ওই তরুণী তার ছবি উঠাতে দিতে না চাইলেও কথা বলেছে। সুমির বক্তব্য ‘ছবি তুইলা কী অইব? ছবি তুইলতে দিলে কী টেহা পাব?’ যাদের সঙ্গে একবার সুমির কথা হয়েছে, সবাই ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় একবার ডাক দিয়ে বলে ‘ওই টুনটুনি’। সে বলে ‘যা ইহান তাকি (চলে যা সামনে থেকে)’।
একটা সময় আদালতের অভ্যন্তরে কাস্টমার খোঁজ করত বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা। তখন অনেক তরুণীকে দেখা যেত। এখন এর সংখ্যা কমে এসেছে। আদালতের নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের যেখানে সেখানে বসতে দেয়া হয় না। বর্তমানে অধিক কাস্টমারের আশায় আদালত প্রাঙ্গণের বাইরের মূল সড়কের ফুটপাতে বসে তারা। কখনো প্রচণ্ড রোধ, কখনো বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে তাদের জীবিকা নির্বাহের সংগ্রাম।
আদালত পাড়া সংলগ্ন ফুটপাতে বসা নারীদের কেউই শহরের বাসিন্দা নয়। ছবি তুলতে চাইলে তারা ছাতা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নেয়।
বেদে নূর জাহান বেগম (৪০) জানান, প্রতিদিন সকালে ট্রেনে করে ছাতক থেকে সিলেট আসেন। বিকেলে পুনরায় ফিরতি ট্রেনেই বাড়ি চলে যান।
তিনি জানান, সুনামগঞ্জের সোনাপুরে তাদের বাড়ি রয়েছে। তবে বসবাস করেন গোবিন্দগঞ্জে। সেখান থেকে প্রতিদিন আরও ৪-৫ জন নারীও তার সঙ্গে সিলেটে আসেন। দিন শেষে ২-৩শ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। নূর জাহানের বক্তব্য এখন আর আগের মতো কেউ শিংগা লাগায় না, তাবিজ নেয় না। কোনো রকমেই বেঁচে আছেন তারা।
রাশেদা বেগম জানান, শিংগা লাগানো আর তাবিজ বিক্রিই তার মূল পেশা। এ কাজ করে তিনি তার ১ মেয়ে আর ২ ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। স্বামীর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘হেয় বাড়িত থাহে, বাচ্চা সামলায়।’
বেদে ছফিনা বলেন,‘সবাই এখন ডাক্তারের কাছে দৌড়ায়। আমাদের কাছে আসে না। ফুটপাতে বসে ছাতা ধরে দিন পার করতে হয়। দিন শেষে যা পাই, তা নিয়েই বাজার করে বাড়ি যাই।’
সিলেট অঞ্চলের সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেদে সম্প্রদায় বসবাস করছে। তবে বেশিরভাগ সময়ই তারা নৌকায় জীবনযাপন করেন। সিলেট নগরীর অদূরে শাহপরান মেজরটিলা এলাকায়, বাদাঘাট চেঙ্গের খাল নদীর তীরে অস্থায়ীভাবে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনকে বসবাস করতে দেখা গেছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd