ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. শাহীন আলম ওরফে তারেক ওরফে লিটন ওরফে এএসপি সজিব (২৯) নামে র্যাবের ভুয়া এএসপিকে গ্রেফতার করেছেন র্যাব-১১ এর সদস্যরা।
এ সময় তার কাছ থেকে পুলিশের ভুয়া আইডি কার্ড, বিপুল পরিমাণ পুলিশের ভিজিটিং কার্ড, পুলিশ ও র্যাবের ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি, এএসপি সজিব নাম সংবলিত পরিচয়দানকারী কার্ড এবং তিনটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে র্যাব-১১-এর সিনিয়র এএসপি মো. আলেপ উদ্দিন ও এএসপি শাহ মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার সজিব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার এখলাসপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে।
বুধবার সন্ধ্যায় সজিবকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১১ সদর দফতরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হাসান।
তিনি বলেন, গ্রেফতার সজিব মূলত একজন পেশাদার প্রতারক চক্রের সদস্য। তার নিজ এলাকায় প্রতারক লিটন হিসেবে পরিচিত। র্যাব-১১ এর এএসপি পরিচয়ে এ পর্যন্ত নয় বিয়ে করেছে সজিব। তার আসল পরিচয় ধরতে পারেনি নয় বউ।
প্রতারক সজিব দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় র্যাবের এএসপি হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মামলার তদবির, আসামি ছাড়ানোর জন্য উৎকোচ গ্রহণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংগঠিত করে আসছিল।
শিমরাইল মোড় এলাকায় এএসপি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত সজিব। সবার বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নিত। ফটোশপের মাধ্যমে পুলিশ ও র্যাবের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার র্যাংকব্যাজ পরিহিত ছবির সঙ্গে নিজের ছবি এডিটিং করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংগঠিত করত সে।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী তাকে রাষ্ট্রীয় পদক পরিয়ে দিচ্ছেন সংবলিত একটি ভুয়া ছবি তার মোবাইলে পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিংরত ও পুলিশের ট্রেনিংরত অবস্থার ভুয়া ছবিও ব্যবহার করেছে সে।
র্যাবের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান আরও বলেন, প্রতারক সজিব শুধু এএসপি পরিচয় দিত এমন নয়; কখনো পুলিশের এসআই, কখনো র্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার পরিচয় দিত।
র্যাবের সদস্যরা তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিয়ের দাওয়াত কার্ড জব্দ করেছে। কার্ডগুলো তার নিজের বিয়ের। সেখানেও বর হিসেবে এএসপি সজিবের নাম লেখা রয়েছে। দাওয়াত কার্ডগুলোর ওপর র্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম-ঠিকানা লেখা ছিল।
বিয়ের বিষয়ে সজিব র্যাবকে জানিয়েছে, সাতদিন আগে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে সানারপাড় এলাকায় ৯ নম্বর বিয়ে সম্পন্ন করেছে সজিব। ১২ অক্টোবর হাজি ইব্রাহীম খলিল শপিং কমপ্লেক্স অ্যান্ড প্রিয়ম নিবাসস্থ তাজমহল চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তার বৌভাত অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
বৌভাত অনুষ্ঠানের দাওয়াত কার্ডও ছাপিয়েছিল সজিব। এছাড়া ভুয়া এএসপি সজিব নারারায়ণগঞ্জ ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।
সবশেষ সোমবার সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকায় প্রতারণার উদ্দেশ্যে তিন কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি কেনার জন্য এএসপি পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে বাড়ির মালিক অভিযোগ দেন। পরে তাকে ধরতে মাঠে নামে র্যাব। গ্রেফতার ভুয়া এএসপি সজিবের বিরুদ্ধে অাইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান।