সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা জাফলং, একাধিক পাথর কোয়ারি, লালা খাল, খাসিয়াপুঞ্জি- সবই এ এলাকায় অবস্থিত। আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ।
এছাড়া ৩ মাস বয়সী ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারির নির্বাচনে বিএনপির প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির দিলদার হোসেন সেলিম বিজয়ী হন। আগামী নির্বাচনে বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ আওয়ামী লীগের এবং দিলদার হোসেন বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী।
২০০৮ সালে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন ইমরান আহমদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির দিলদার হোসেন সেলিম পেয়েছিলেন ৯৮ হাজার ৫৪৫ ভোট।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এ দুই শীর্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধেই পাথররাজ্যে লুটপাটকারীদের হোতা লিয়াকত ও শামীম বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আগামী নির্বাচনে ভোটের মাঠে এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন তারা। তবে বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমি কখনও কোনো পাথরখেকোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিইনি।
অনুরূপভাবে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধেও এমপি থাকাকালে পাথররাজ্য লুটকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ ছিল। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম বলেন, এমপি থাকাকালে পাথর লুটকারীদের আশ্রয় দেয়ার প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। বিএনপিতে যোগদানের পর থেকে শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলে গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, সিলেট-৪ আসনে পাঁচবারের এমপি ইমরান আহমদই যে আগামী নির্বাচনে নৌকার মাঝি হচ্ছেন, তা প্রায় নিশ্চিত। তিনি ছাড়াও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ ফজলুল হক ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ফারুক আহমদ।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে হেরে যাওয়ার পর ফারুক আহমদ প্রবাসে চলে যান। এরপর থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগ নেই বলে জানা গেছে।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের ভোটে আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম। পরে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হয়ে বাজিমাত করেন দিলদার।
২০০৮ সালের নির্বাচনে দিলদার হোসেন ফের পরাজিত হন। আগামী নির্বাচনেও দিলদার হোসেন বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী। আগামী নির্বাচনে ইমরান-সেলিমের মধ্যে ভোটের লড়াইয়ের পূর্বাভাস মিলেছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দিলদার ছাড়াও মাঠে তৎপর রয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সিলেট-৪ নির্বাচনী এলাকার মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় অর্ধেক ভোট। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল। সবশেষ সম্মেলনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ এমপির সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এলাকার জনগণের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তারা আমাকে ভালোবেসে পাঁচবার নির্বাচিত করেছে। স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে এই সরকারের আমলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম আইটি পার্ক।
একসময়ের ‘ক্যান্সার’ আক্রান্ত সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পথর সন্ত্রাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব যারা করছে, তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। অন্য নেতাদের অপকর্ম নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করেন।
জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিম যুগান্তরকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে কাজ করছি। বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গেলে আমিই দলীয় মনোনয়ন পাব। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের অন্য নেতাকর্মীরা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপির আরেক প্রার্থী গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের আমলেই এই উপজেলা পরিষদে দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। দলের নেতাকর্মী এবং এলাকার সাধারণ মানুষ সুখে-দুঃখে সবসময়ই কাছে পায় আমাকে।
সে কারণেই তারা আমাকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি তুলেছে। দলের হাইকমান্ড থেকেও কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার কাজ করছি। অবাধ, সুষ্ঠু ভোট হলে আমাকে দল মনোনয়ন দিলে আসনটি ফের বিএনপিকে উপহার দিতে পরব।
এদিকে সিলেট-৪ আসনে এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এ আসনে জাতীয় পার্টির এক নেতা প্রার্থী হতে তৎপর। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের সিলেট জেলা কমিটির আহ্বায়ক এটিইউ তাজ রহমান মাঠে তৎপর।
তাজ রহমান যুগান্তরকে বলেন, পল্লীবন্ধু সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন ধরে দলকে সংগঠিত করছি। গত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু মহাজোটের স্বার্থে চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে আশাবাদী।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd