টাকা শোধ করতে না পারায় হাসপাতালে সন্তান আটক 

প্রকাশিত: ৪:৩৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০১৮

টাকা শোধ করতে না পারায় হাসপাতালে সন্তান আটক 

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে কেউ যদি এখন যান, হয়তো দেখবেন একজন মা ছোট একটা বাচ্চার হাত ধরে অস্থিরভাবে পায়চারি করছে। কখনো ফার্মেসীতে, কখনো বিল পেমেন্ট করার কাউন্টারে আবার কখনো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) সামনে। কখনো চোখ মুছছেন। কখনো মনে মনে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছেন। ফরিয়াদের ভাষা একটাই “আল্লাহ, এ বিপদ থেকে রক্ষা কর”।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা এই মায়ের নাম দিলু আক্তার। গত তেইশ দিন তিনি তার এগারো মাস বয়সী সন্তান ইয়াসমিন আলমকে নিয়ে এ্যাপোলো হাসপাতালে আছেন। ফুটফুটে শিশুটি মস্তিষ্কের এক জটিল রোগে আক্রান্ত।

হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় তার সন্তানকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই মা স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে নিয়ে এসেছিলেন এ্যাপোলো হাসপাতালে। কিন্তু তিনি তো জানতেন কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছেন সন্তানকে নিয়ে।

এ প্রসঙ্গে এ্যাপোলো হাসপাতালের ফিন্যান্সিয়াল অপারেশন বিভাগের ডিজিএম রাকিব আহসান একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, আমরা নিরুপায়। টাকার এতো বড় অংক মাফ করে দেওয়ার সুযোগ বা ক্ষমতা আমাদের নেই। এর বড় একটি অংশ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।

এবার আসুন, একটু পেছনে যাওয়া যাক। দিলু আক্তার ও বাদশা আলম দম্পতির সন্তান ইয়াসমিন আলম। তাদের ছয় বছর বয়সী আরেকটি সন্তান আছে। বাদশা আলম সৌদি আরবে থাকেন দীর্ঘদিন। সৌদি আরবে তার একটি দোকান এক সময় থাকলেও বছর কয়েক আগে নানা আর্থিক টানাপোড়েনে দোকানটি বিক্রি করতে হয়। এখন তিনি অন্যের দোকানে চাকরী করেন।

মাস খানেক আগে দিলু আক্তার ও বাদশা আলম দম্পতির মেয়ের হঠাৎ করে জ্বরে আসে। এরপর দেখা দেয় খিঁচুনী। সাথে সাথে স্থানীয় রাঙ্গুনিয়া হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা চট্টগ্রাম ডেলটা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে বিভিন্ন জনের পরামর্শে মেয়েকে এনে ভর্তি করান রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে। তখনো জানতেন না তিনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আদরের সন্তানকে।

একজন মা, যিনি এর আগে কখনো ঢাকায় আসেননি, পৃথিবীর অন্য কোন জটিল সংগ্রামের সাথে যিনি পরিচিত নন, তিনি একা মেয়েকে কোলে নিয়ে, এক হাতে ব্যাগ অন্য হাতে ছেলেকে নিয়েই গত আট সেপ্টেম্বর চলে আসেন এ্যাপোলো হাসপাতালে। তারপর লড়াই। মেয়ের অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে বাড়ী থেকে আনা সামান্য টাকা খরচ হয়। তারপর শেষ সম্বল সামান্য অলংকার বিক্রী করা হয়। সৌদি আরব থেকে বাদশা আলম ও টেনে টুনে দেশে টাকা পাঠান। এভাবে গত তেইশ দিনে খরচ হয় ৩ লাখ একুশ হাজার টাকা। এরপর হাত খালি!

হাসপাতালের হিসেব অনুযায়ী তারা এখনো পাবে ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। একজন অসহায় মা এতো টাকা কোথেকে দেবেন? কীভাবে দেবেন? মা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি তার সন্তানকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। নিজেকে ছেড়ে দেন নিয়তির হাতে। যা হওয়ার হোক। আল্লাহ যা করবে তাই হবে! কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাকি যে টাকা পাবে ( ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা) তা পরিশোধ না করলে সন্তানকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র ( রিলিজ) দেবে না। এখন কী করবেন তিনি? এদিকে হাসপাতালের নিয়মানুযায়ী টাকা বেড়েই যাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটার সাথে সাথে টাকার পরিমাণের উচ্চতা বাড়ছে। মায়ের হাত কপর্দকশুন্য।

১ অক্টোবর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দিলু আক্তারের কথা হয় এ্যাপোলো হাসপাতালে। তিনি বলেন, আমার বাচ্চাটাকে রিলিজ নিয়ে দেন। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাব। এখানে টাকা শোধ করার সামর্থ্য আমার নেই। প্রতিদিন টাকার পরিমাণ বাড়ছে। এই টাকা শোধ করার সামর্থ্য আমার নেই।

এ্যাপোলো হাসপাতালের বিজনেস ডেভলেপমেন্ট কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, এতো বড় অংকের টাকা পরিশোধ না করলে আমাদেরকেই বিপদে পড়তে হবে।

কী করবেন দিলু আক্তার? রাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরনো অংকের সাথে যোগ হবে নতুন অংক। তিনি তার মেয়েকে নিয়ে ফিরতে পারবেন তো গ্রামে?

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2018
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..