মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার এক পরিবারে গ্রাম। ওই গ্রামের জনসংখ্যা ৫জন। গ্রামটির নাম হল শ্রীমুখ। গ্রামটির অবস্থান উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে। গ্রামের ৫জন বাসিন্দার মধ্যে ৩জনই নারী, এক শিশু কন্যা। একমাত্র পুরুষ সদস্য তিনি রয়েছেন দেশের বাহিরে। ফলে বর্তমানে ওই গ্রামে ৩জন নারী ও এক শিশু কন্যা বসবাস করছেন। সরকারী গেজেটভূক্ত এই গ্রামে স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই বসবাস করে আসছেন একটি মাত্র পরিবার। তিন নারী সদস্য ওই গ্রামের ভোটার।
জানা গেছে, উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নরে ৫নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত তেলিকোনা ও পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামের মধ্যবর্তি গ্রাম হচ্ছে ‘শ্রীমুখ’। এক সময়ে উক্ত গ্রামে (শ্রীমুখ) একটি হিন্দু পরিবার বসবাস করতেন। ১৯৬৪ সালে রায়টের সময় ওই হিন্দু পরিবার তাদের বাড়িটি বর্তমান বাসিন্দা আপ্তাব আলীর পূর্ব পুরুষের কাছে বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে এই বাড়িতে আপ্তাব আলীর পরিবার বসবাস করে আসছেন। শ্রীমুখ গ্রামে মাত্র ৫ জন সদস্য হওয়ায় তারা পার্শ্ববর্তি পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামের পঞ্চায়েতের সাথে রয়েছেন। গ্রামটির যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। যাতায়াতের জন্য নেই কোন রাস্তা। ছোট একটি জমির আইল দিয়েই যাতায়াত করেন লোকজন।
সরেজমিনে আজ বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ভিতরে প্রবেশের কোনো রাস্তা নেই। অনেক কষ্ট করে অন্য গ্রামের একটি বাড়ির ওপর দিয়ে শ্রীমুখ গ্রামে প্রবেশ করেন লোকজন। ওই গ্রামে একটি মাত্র পরিবার বসবাস করছেন। তবে বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। তিনজন নারী ও একজন শিশু কন্যা বসবাস করছেন। বাড়ির ভিতরে একটি মাত্র নলকূপ রয়েছে, সেটিও দীর্ঘদিন ধরে বিকল। ওই গ্রামের নারীরা অন্য গ্রামের বাড়ি থেকে নলকূপের পানি এনে খেত হয়। আবার কখনও তাদের নিজ বাড়ির পুকুরে পানি পান করতে হয়। বষা মৌসুমে ওই গ্রামে প্রবেশ করা খুব কষ্ঠকর। গ্রামে না গেলে বুঝা যাবেনা, ওই গ্রামের নারীরা কি কষ্ঠের মধ্যে বসবাস করছেন। টিনসেটের মাটির ঘরে বসবাস করছেন ওই নারীরা। তবে গ্রামে বসবাসকারী নারীদের হল-রাহিমা বেগম (৩৫), দিলারা বেগম (৪০), আগুরা বেগম (৪৩) ও সুমাইয়া আক্তার তাহিনা (৮)। গ্রামের একমাত্র পুরুষ আপ্তাব আলী র্দীঘ ৩০ বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস করে আসছেন। গত ৪ বছর পূর্বে তিনি দেশে এসেছিলেন বলে নারীরা জানান। তবে তিনি বৃদ্ধ হওয়ায় প্রবাসে তেমন কোনো কাজ কর্ম করতে পারছেনা বলে তারা জানান। অনেক সময় অভাব অটনের মধ্যে দিয়ে তাদের পরিবার চলে। সরকারী কোনো আর্থিক সহযোগিতা পায়নি তারা। বিদ্যুৎ থাকলে মিটার দেখে বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়না বলে তারা জানান। কারণ বাড়িতে প্রবেশের কোনো রাস্তা না থাকায় বিদ্যুৎ অফিস কর্মীরা আসতে অনিহা প্রকাশ করেন। ফলে মনড়া বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যান বলে গ্রামের অভিযোগ করেন।
এব্যাপারে রাহিমা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে কোনো রাস্তা নেই। অন্যের জায়গার ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে আমার একমাত্র মেয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারেনা। আমার অনেক কষ্টের মধ্যে জীবন-যাপন করছি। আমার স্বামী প্রবাসে থাকলে সেখানে তিনি তেমন আয় করতে পারছিনা। অনেক সময় আমাদের অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চলতে হয়। বাড়িতে শুধু নারীরা বসবাস করি।
তিনি বলেন, এরআগে কখনও আমাদের গ্রামের কোনো সংবাদ কর্মী আসেননি। আমাদের খবরও কেউ নেননি। আমাদের গ্রামে এই প্রথম আপনারা এসেছেন। আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য একটি রাস্তার খুবই প্রয়োজন। তাই একটি রাস্তা জন্য সরকারের প্রতি তিনি জোরদাবি জানান।
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ওই গ্রামের নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকায় রাস্তা করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে অন্য গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে শ্রীমুখ গ্রামের বাসিন্দাদের রাস্তার বিষয়টি করে দেয়ার চেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, সম্প্রতি আমি ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি গ্রাম উপজেলায় রয়েছে শুনেছি। তবে খোজ নিয়ে এ গ্রাম সর্ম্পক মন্তব্য করবেন বলে তিনি জানান। ওই বাড়ির বিকল নলকুপটি মেরামত করার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
Sharing is caring!