সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৪২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৮
রুদ্র বিজয় :: আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। মায়ের কোল হলো তাদের নিরাপদ আশ্রয়। ক্ষুধার জ্বালায় মায়ের কোল ছেড়ে শিশুরা যখন মা-বাবার ঘর ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ায় তখনই তাদের পরিচয় হয় পথ শিশু।
কিন্তু এমন দৃশ্যই দেখা গেলো সিলেট নগরীর সুরমা মার্কেটের সিড়ির মধ্যে। সিড়ির রাস্তায় শুয়ে নিথর পড়ে আছেন মা ও শিশু। ওই শিশুকে নিয়ে সিড়ির মধ্যে রাত্রি যাপন করেন এই মা। শিশুটির বাবা কে কি পরিচয় নিয়ে সে বড় হয়ে সামাজে চলাফেরা করবে।
পথই যাদের আবাস। পথেই যাদের বসবাস। জন্মের পর থেকেই যারা জীবন যুদ্ধের সঙ্গে পরিচিত। রোদ-বৃষ্টি, গরম-শীত যাদের কাছে সমান। পরনে কাপড় আছে কি নেই তা তাদের কাছে মুখ্য নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের হাতের মজাদার খাবার দিয়ে নাস্তা করার পরিবর্তে তারা মানুষের বকুনি খায়।
যখন অন্য শিশুরা পাঠশালায় জ্ঞান অন্বেষণে ব্যস্ত তখন এরা নিজদের ক্ষুণিবৃত্তির অনুসন্ধানে লিপ্ত। ছিন্নবস্ত্র পরিহিত বা বস্ত্রহীন এরাই পথ শিশু নামে সর্বত্র পরিচিত। কিন্তু একটি শিশু কখনো পথ শিশু হয়ে জন্মায় না। জন্মের সময় প্রতিটি শিশু তার নাগরিক অধিকার নিয়ে জন্মায়। আজ যে শিশু ভালোভাবে কথা বলতে শেখেনি তাকেও জীবিকার তাগিদে ভিক্ষা করতে হচ্ছে।
তার কাছে জীবনের মানে হলো ক্ষুধা নিবারণের জন্য পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেঁচে থাকার লড়াই। এদের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। দেশের পথ শিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর আমাদের দেশে পালিত হয় পথ শিশু দিবস।
জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ সংগঠন ‘ইউনিসেফ’ শিশু অধিকার ও তাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এরা সঠিকভাবে শিশুদেরকে গড়ে তুলতে পারে না। তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থকে। তারা ছেলে-মেয়েদেরকে ঠিকমত খাবার, চিকিৎসা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার, সুযোগ-সুবিধা প্রদানে ব্যর্থ হয়।
জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে পথ শিশুরা বিভিন্ন ধরনের অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার। রাস্তাঘাটে এক টাকা-দুই টাকার জন্য তারা পথচারীকে অনুরোধ করে নানাভাবে। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব। শিশুরা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের দান।
পথ শিশুরা কারো না কারো সন্তান, ভাই বা আত্মীয়-স্বজন। সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার কারণে পথ শিশুদেরও রয়েছে ন্যায্য অধিকার। স্বাধীন দেশে এ ওদরেও সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড় হওয়ার অধিকার আছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ মৌলিক চাহিদাগুলো যথোপযুক্তভাবে পাওয়ার অধিকার তাদেরও আছে।
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ এ ধরনের বাক্য আমরা লেখায়, বক্তৃতায় হরহামেশা পড়ি ও শুনি। কিন্তু জাতির ভবিষ্যৎ সবাইকে, বিশেষ করে নিম্নবর্গীয়দের পথ শিশুদের নিয়ে আমরা মোটেই মাথা ঘামাই না।
দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে এ পথ শিশুদের মূল্যায়ন করতে হবে । তাদের দৈহিক ও মানসিক শক্তির সদ্ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে সমাজের মূল ধারায় পুনর্বাসিত করতে হবে। সরকারের উচিত পথ শিশুদের সম্পর্কে সচেতন হওয়া। প্রতিটি পথ শিশুর জন্মনিবন্ধন করা।
তবে এসব কাজ করা সরকারের একার পক্ষে হয়তো সম্ভব না, সে ক্ষেত্রে যে সংস্থাগুলো পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করছে সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। সরকারের পাশাপাশি ওই সংগঠনগুলো যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে এবং এ পথ শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র ইত্যাদির ব্যবস্থা করে, তাহলে এ পথ শিশুদের মধ্য থেকেও আমরা পেতে পারি অনেক ভালো কিছু।
মানবতার বিকাশ এবং জাতির বৃহত্তম স্বার্থে পথ শিশুদের শিক্ষা আবশ্যক। সচেতন থাকতে হবে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এরা যেন অল্প বয়সেই হারিয়ে না যায়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানহীন শিশুরা যেন পরবর্তীকালে জাতির কাঁধে বোঝা না হয়ে বসে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা সকলেরই উচিত।
পথ শিশুদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শিশুর রয়েছে সমান অধিকার।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd