ছাতক প্রতিনিধি :: জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কৌশলে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
১০ বছর ধরে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও এর আগে এ আসন থেকে এমপি হন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা।
বর্তমান এমপি মুহিবুর রহমান মানিক আগামী নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিলেও দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে মাঠে সক্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী।
তারা দু’জনই কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন লাভে চলছে ত্রিমুখী লড়াই। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রয়েছেন ঢাকা-লন্ডন কানেকশনে। নানাভাবে প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন।
স্বাধীনতার পর এ আসনে ১০টি নির্বাচনের মধ্যে ৪ বার বিজয়ী হন আ’লীগ, জাতীয় পার্টি ২ বার, স্বতন্ত্র ২ বার এবং বিএনপি ও জাসদ একবার করে বিজয়ী হয়।
বিশেষ করে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কলিম উদ্দিন মিলন, একই বছরের ১২ জুন আ’লীগের মুহিবুর রহমান মানিক, ২০০১ সালে বিএনপির কলিম উদ্দিন মিলন এমপি হন।
২০০৮ সালের ভোটে মুহিবুর রহমান ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কলিম উদ্দিন আহমদ পান ৮৫ হাজার ১৯৭ ভোট।
এ আসনে স্থানীয় আ’লীগে বিভক্তি দীর্ঘদিনের। দুই যুগ ধরে দুই নেতাকে ঘিরে দুটি বলয় সক্রিয়। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন মানিক ও অপর অংশের নেতৃত্বে আছেন পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী।
শাসক দলের এমপি মানিকের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে যে তিনজন মাঠে রয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রচারে এগিয়ে শামীম আহমদ চৌধুরী। মানিকের প্রতিপক্ষ ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালামের ছোট ভাই শামীম আহমদ। তিনি নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এর আগে ছাতক উপজেলা নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে শামীম হেরে যান বিএনপির মিজানুর রহমান চৌধুরীর কাছে। তবে স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীরা আস্থা রাখতে চান বর্তমান এমপি মুহিবুর রহমানের ওপরই। আ’লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এই দুই নেতা ছাড়াও আছেন যুক্তরাজ্য আ’লীগের আয়ুব করম আলী ও দোয়ারাবাজার উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ আহমদ তারেক।
কথা হয় এমপি মানিকের সঙ্গে। তিনি বলেন দুই উপজেলায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্পোন্নয়ন, বিদ্যুতায়ন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। শামীম আহমদের দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যাচার চলছে। এসবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
কথা হয় শামীম আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি, কাক্সিক্ষত উন্নয়ন না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন এমপির অনুসারীরা। তাদের উল্টো অভিযোগ শামীম অনুসারীদের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, শামীম অনুসারীরাই হামলা করে তাদের হয়রানি করছেন।
ছাতক পৌরসভাসহ দুই উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে বিভক্তি রয়েছে বিএনপিতেও। শাসক দলের নেতাদের চোখ রাঙানি ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের নানাবিধ চাপের মধ্যে এই বিভক্তি বেশ চাঙ্গা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সাবেক ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজানকে ঘিরে এ বিভক্তি বা কোন্দল বিদ্যমান। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও পালিত হয় আলাদাভাবে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান তৃণমূলের। তারা বলছেন, নতুন প্রার্থী দিলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত।
৪ লাখ ১৬ হাজার ভোটার অধ্যুষিত এ আসনে বিএনপির তিনজন নেতা মাঠে সক্রিয়। এর মধ্যে রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এম?পি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ছাতক উপ?জেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী।
জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এলাকার উন্নয়নের করুণ দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, উন্নয়নের নামে তারা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিটি রাস্তা পরিণত হয়েছে মিনিপুকুরে। নতুন রাস্তা তৈরি করা তো দূরের কথা, বিএনপি আমলের তৈরি রাস্তাগুলোও মেরামত করা হয়নি। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে দলের কোন্দল নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এখন কোনো কোন্দল নেই। আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।
বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ, প্রচারের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করে যাচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি জানান, মানুষ যেমন সরকারের পরিবর্তন চায়, তেমনি বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলীয় মনোনয়নে পরিবর্তন চায়। পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে আছি। ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছে। মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
কথা হয় খেলাফত মজলিসের মাওলানা সফিক উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন দুই উপজেলায়ই দলের জন্য দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছি। ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পাব বলে আশাবাদী। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে সুনামগঞ্জ-৫ আসনটি খেলাফত মজলিসকে ছেড়ে দেয়ার দাবি করছি।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক ছাতক উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসান ও জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য যুক্তরাজ্য জাপা নেতা রুহুল আমিন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল মজিদ বলেন আসনটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার দাবি আমাদের। জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাডভোকেট আবুল হাসান জানান, দীর্ঘদিন ধরে দলকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি। মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
Sharing is caring!