সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০১৮
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার প্রায় ২শ’কেয়ার জমির ধান গাছ বিনষ্ট করে দিয়েছে ইঁদুরে। জমির আইলের কিনারে গর্ত করে এবং ধান গাছের গোড়া কেটে ধ্বংস করছে ইঁদুর। কৃষকেরা ওষুধ ব্যবহার করেও ইঁদুর দমন করতে পারছেন না। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকায় কৃষকরা শঙ্কিত তাঁদের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে।
জানাযায়,জেলার সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ৫গ্রামের(ইসলামপুর,মঙ্গলকাটা,নুরুজপুর,দলাইরপাড়,জাহাঙ্গীর নগড়)কৃষকের ইতিমধ্যে অনেক ধান গাছ ইদুরের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই সকল গ্রামের ফসলী জমিতে বীনা-৭,৪৯,২২,৩২ইত্যাদি জাতের ধান গাছের ক্ষতি করেছে বেশি। কোনো কোনো স্থানে কালিজিরা ধান গাছেরও ক্ষতি করছে। এমনকি গাছের ডাব,লাউ,শিম, ঘরের কাপড়-চোপড়,খাতা-বালিশ,সাবান,বইপত্র যা ইচ্ছে তাই কেটে ফেলছে। জমিতে ধান গাছ বাঁচাতে ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি ফাঁদ পাতা,পাতাওয়ালা কলাগাছ রোপন,পুরাতন শার্ট টাঙ্গিয়ে রেখেছেন কৃষকেরা। বাতাসে কলাগাছের পাতা বা টানানো কাপড়ের শব্দে ইঁদুর সরে যাবে এমন বিশ^াসে। তবুও ইঁদুর থেকে পরিত্রাণ পান নি তাঁরা। একমাস ধরে ইঁদুরের উপদ্রব এই অবস্থায় কৃষকেরা হতাশ গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। আরো জানাযায়,মঙ্গলকাটা গ্রামের সামছুল হকের ৪কেয়ার,জাফর আলীর ৪কেয়ার,নুরুল হকের ৫কেয়ার,আব্দুল মতিনের ৫কেয়ার,ফসর আলীর ৩কেয়ার,আলাল উদ্দিনের ২কেয়ার,নুর ইসলামের ২কেয়ার জমির ধানও বিনষ্ট করে দিয়েছে ইঁদুর। নুরুজপুর গ্রামের হাওরে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা গেছে। জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের মজনু মিয়ার ২কেয়ার ও কাদির মিয়ার ২কেয়ার জমির ধানও কেটেছে ইঁদুরের দল। দলাইপাড় গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ৩কেয়ার,মইনুদ্দীন মোল্লার ৪কেয়ার,অহিদ মিয়া ৫কেয়ার ও কিবরিয়া মিয়ার ৩কেয়ার জমি ইঁদুরে কেটে নষ্ট করেছে। ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা কৃষকরা। ইসলামপুর গ্রামের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ইশতাক আহমদের ৫কেয়ার জমি,মিজানুর রহমানের ৩কেয়ার,আব্দুর মতিনের ৬কেয়ার,শাহজাহানের ৫কেয়ার,এমরান হোসেনের ৫কেয়ার, মঞ্জিল হোসেনের ৪কেয়ার,মন্নান মিয়ার ২কেয়ার,শাহ আলমের ৪কেয়ার,সিদ্দিক মিয়ার ২কেয়ার,হানিফ মোল্লার ৬কেয়ার,হেকিম মিয়ার ২০কেয়ার,গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার মিজানুর রহমানের ৪কেয়ার,পূর্বপাড়ার শিসন মিয়ার ১৫কেয়ার,পশ্চিমপাড়ার রবিকুল মিয়ার ৫কেয়ার,উছমান গণির ৩কেয়ার জমির ধান গাছ ইতোমধ্যে ইঁদুরের পেটে গেছে।
ঐ সকল গ্রামের কৃষকেরা জানান,এবার জমিতে ধানের ফসল হয়েছে ভাল। কিন্তু ধানের গোটা বেরুনোর আগেই ইঁদুরে গাছ নষ্ট করে দিয়েছে। ইঁদুরের এমন উপদ্রব জীবনেও দেখিনি। ঘরে-বাইরে সমান তালে ক্ষতি করছে ইঁদুর। জমিতে গেলে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। বাজারের কেনা ওষুধে কাজ হচ্ছে না। তারা আরো জানায়,গতবার ছিল এলাকায় শিয়ালের উপদ্রব,এবার ইঁদুরের। কৃষকরা বাঁচবে কেমনে। ইঁদুর জমির ধানগাছ কেটে বিনাশ করে দিচ্ছে। প্রত্যেকের জমিতে ইঁদুরের উপদ্রব।
ঐসব গ্রামের বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ীরা বলেন,ইঁদুর মারার ওষুধ উজ্জলা র্যাট কিলার,হিন্দুস্থানী র্যাট কিলার বিক্রি করছি। এসব ওষুধ প্রয়োগ করে একাধিক কৃষক এসে অভিযোগ করেছেন তাতে ইঁদুর মরছে না। কীটনাশক বিক্রি করি কিন্তু এবার ইঁদুরের এমন উপদ্রব ওষুধে কাজে আসছে না। এই সময়ে ভাল পরামশের্র জন্য প্রয়োজন কৃষি কর্মকর্তাদের।
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোকশেদ আলী বলেন,এলাকার কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। এবার ইঁদুর বেশি পরিমাণে ধান গাছের গোড়া কেটে ধানী জমি নষ্ট করে দিয়েছে। এটা গুরুত্বসহকারে কৃষি বিভাগের দেখা প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা বøকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ ইমরান হোসেন বলেন,ইঁদুরের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য আমরা অনেক স্থানে প্রচারপত্র বিতরণ করেছি। কৃষকদের ইঁদুর মারার ফাঁদ,ইঁদুর মারার ঔষধ জিংক পস পাইদ ও লানিরেট ব্যবহার করার জন্য বলে দিচ্ছি আমরা।
জেলার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন টিপু বললেন,আমরা ইঁদুর মারার পরামর্শ দেওয়া শুরু করেছি।বৃষ্টি হলে ইঁদুর কমবে। বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধানে ইঁদুরের আক্রমণ বেড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে অন্য বøকের একজন কৃষি উপসহকারীকে মঙ্গলকাটা বøকে আপদকালীন সময়ের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd