জৈন্তাপুরে নাগা মরিচ চাষে কৃষকদের সোনালী সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

প্রকাশিত: ১:৪০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯

জৈন্তাপুরে নাগা মরিচ চাষে কৃষকদের সোনালী সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

গোলাম সরওয়ার বেলাল, জৈন্তাপুর :: সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার খনিজ সম্পদ তৈল গ্যাস, পাথর বালু আর কৃষিজাত পন্য তৈজপাতা, কমলালেবু, জাড়ালেবু, তরমুজ ও পান পানি নারী খ্যাত জৈন্তাপুর উপজেলা নানা কারনে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এসবের সাফল্যের পিছনের মূল কারিগর কৃষক পরিবার গুলো৷ স¤প্রতি উপজেলার কৃষক পরিবার ধান চাষের পরবর্তীতে অব্যবহৃত পতিত ভূমিতে মৌসুমী সব্জী চাষ করে লাখ প্রতি হয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা৷ সব্জী চাষে সোনালী স্বপ্ন পুরন করতে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে একর পর এক নানা মূখী কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে যাচ্ছে৷ শিম, বরবটি, করলা, ভূইশষা, ক্যাপসীকাম মরিচ, তরমুজ, নাগা মরিচ উলে­খযোগ্য৷ পাশাপাশি শীতকালীন শাক সব্জী রয়েছে৷ কৃষক তাদের কৃষি বিপ্লব ঘটাতে বাজারের সাথে সঙ্গতী রেখে বাজারের চাহিদা মোতাবেক সব্জী চাষে তারা বেশি আগ্রহী৷ কম সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষে তারা নতুন নতুন সব্জির বিপ্লব ঘটাচ্ছে৷ বিগত ২-৩ বৎসর হতে হাইব্রিড নাগা মরিচ চাষে ঝুকেছে কয়েক শত কৃষক পরিবার৷ কারন হিসাবে জানাযায় কোন কোন জমিতে এক ফসলা ধান উত্তোলনের পর ঐ জমি খালি পড়ে থাকে৷ এসব জমিতে ২য় কিংবা ত্রীফসলা ধান চাষ হয় না৷ পতিত জমি গুলোকে চাষা বাধের আওতায় আনতে এবং বহুমূখী ব্যবহারের জন্য নানা প্রকার সব্জী চাষ শুরু করে কৃষকরা তাতে তেমন লাভবান হতে পারছে না। তারা বাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে খরচের তুলনায় দুই থেকে তিন গুন লাভের আশা নিয়ে নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি পরিকল্পনা অনুযায়ী নাগা মরিচ চাষে সোনালী স্বপ্ন দেখে৷ এতেই সাফল্যে পায় কৃষক পরিবার৷ এই সাফল্য দিন দিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের স্বপ্ন দেখায়, তারাও নাগা মরিচের চাষে আগ্রহী হতে শুরু করে৷ বিগত বৎসর গুলোতে কয়েকটি কৃষক পরিবার নাগা মরিচ চাষ করে খরচের তুলনায় তিন/চার গুন লাভবান হয়েছে৷ নাগা মরিচ চাষে সাফল্য পাওয়ায় গত দু বৎসরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নাগা মরিচ এর চাষাবাঁধ দ্রুত স¤প্রসারন হতে শুরু হয়েছে৷ এছাড়া জৈন্তাপুর উপজেলার উন্নত নাগা মরিচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সরে জমিনে উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের হেলিরাই চারিকাটা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ এলাকা ঘুরে দেখা যায় কয়েকশত পরিবার নাগা মরিচ চাষে ব্যস্তদিন পার করছে৷ কৃষক সামসুল হক জানান- জমিটি ধান উত্তোলনের পর ৯মাস খালি পড়ে থাকে৷ সুষ্ট পরিকল্পনা মোতাবেক কৃষির আওতায় ৫বিঘা জমিতে উন্নত প্রজাতির নাগা চাষ শুরু করেন৷ সার বীজ ক্রীটনাশক পানি সেচ সহ বিঘা প্রতি খরচ প্রায় লাখ টাকার মত হয়েছে৷ মরিচের গাছ এবং যে ফলন এসেছে এছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে প্রতি বিঘা জমিতে তিনি ৪ থেকে ৫লক্ষ টাকার ফলন পাবেন বলে আশা করেন৷ ইতোমধ্যে বিঘা প্রতি ১০ হতে ১৫ হাজার টাকার মরিচ স্থানীয় বাজারে বিক্রয় হয়েছে৷ দু-এক সপ্তাহের মধ্যে নাগা মরিচ সিলেটের বাজারে সরবরাহ করতে পারবে৷ সটিক সময়ের মধ্যে ফসল উত্তোলন করতে পারলে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা আয় হবে৷ তিনি বলেন উপজেলা কৃষিকর্মকর্তারা যদি কৃষকদের নাগা মরিচ চাষে কিংবা অন্যান্য সব্জী চাষে পরামর্শ, সহযোগিতা, রোগবালাই তার প্রতিকার সর্ম্পকে মাঠ বৈঠকের মাধ্যমে অবহিত করতেন এবং কৃষি ঋন প্রদানের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে অনেক কৃষক উপকৃত হতে পারত৷আতিকুর রহমান কৃষক জানান গত বৎসর নিজের অর্ধবিঘা জমিতে নাগা চাষ করে মোটামোটি ভাল ফলন পেয়েছেন৷ এ বৎসর তিনি আরও ৪ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে চাষাবাধ শুরু করেন৷ তিনিও লাখ প্রতি হওয়ার আশাবাদি৷ এভাবে অনেক কৃষক তাদের নাগা মরিচ চাষের ফলে লাখপ্রতি হওয়ার সোনালী স্বপ্ন পুরনের কথা প্রতিবেদককে জানান৷

কৃষক আব্দুস সবুর, খোরশেদ আলম, শাওন আহমদ দুলাল, মনজুর ইসলাম আরও বলেন- আমাদের হেলিরাই এলাকায় প্রায় ৭ হতে ৮শতটি নাগা মরিচের বাগান করা হয়েছে৷ বাগানে কিছুটা রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। রোগের আক্রমনে ফল আশা কিছু সংখ্যাক গাছ মরে যাচ্ছে৷ এটা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি৷ কৃষি বিভাগের লোকজন মাঝে মধ্যে আসেন আর মাঠ গুলো দেখে যান৷ রোগে ও পোকা মাকড় দমনে তেমন কোন পরামর্শ আমরা তাদের কাছ থেকে পাচ্ছি না৷ তবে আমাদের মাঠ প্রতি কৃষি অফিস একটি করে ক্ষতিকর পোকা নিধন প্লাষ্টিকের কন্টিনার দিয়ে গেছেন। কৃষকরা ক্ষোভের সাথে বলেন- শুনেছি কৃষকদের মধ্যে সরকার ভর্তুকির আওতায় সার বীজ ক্রীটনাশক সরবরাহ করছে কিন্তু আমরা কখনো এই সুযোগ সুবিধা পাইনি৷ কেউ পেয়ে থাকলেও আমরা জানিনা৷ তবে আমাদের হেলিরাই গ্রামের কৃষকদের মধ্যে ১জন কৃষকের মাঠে কৃষি প্রদর্শনী সাইনবোর্ড আছে ঐ কৃষক কোন সুবিধা পেয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই৷

জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের প্রদর্শনী মাঠে গিয়ে কৃষক আব্দুল গফুরের সাথে আলাপকালে তিনি জানান- উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা ফোন করে অফিসে ডেকে নিয়ে আমাকে ২০কেজী সার দিয়েছেন৷ পরবর্তিতে তারা আমার মাঠে প্রদর্শনী সাইবোর্ড লাগিয়েছেন৷ আমি ২০ কেজি সার পেয়েছি৷ এছাড়া মাঝে মধ্যে মাঠটি দেখে কিছু পরামর্শ দেন৷ তবে অন্য কোন কৃষক সার বা অন্য সুযোগ সুবিধা পেয়েছে কি না আমি জানি না৷ তবে কৃষক নিজেই প্রতিবেদককে বলেন প্রদর্শনীর মাঠের চাইতে অন্য মাঠে ফলন ভালে হয়েছে৷

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসাইন বলেন- উপজেলার হেলিরাই গ্রামের কৃষকরা নাগা মরিচ চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে৷ এখানে আমাদের সুষ্ট পরামর্শে এবং দিক নির্দশেনায় একটি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে৷ কৃষকদের সার বীজ কিটনাশক পাচ্ছে না একথটি সটিক নয়৷ সরকারি পরোদনার সহায়তার জন্য কৃষক নির্বাচিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা৷ তাদের তালিকানুযায়ী আমরা সরকারের পরোদনার সহায়তা বিতরন করি৷ অন্য প্লট এর চেয়ে আপনার প্রর্দশনী প্লটটি অবস্তা ভাল নয় প্রশ্ন করলে তিনি অন্য প্রসঙ্গে কথা বলেন৷ তার দাবী আমি নাগা মরিচের মাঠে এসে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি৷ এছাড়া একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রতিটি মাঠে কি ধরনের পোকা মাকড় অক্রমন করছে তা পরিক্ষার জন্য বিনামূল্যে প্রতিটি মাঠে একটি করে কন্টেনার স্থাপন করে দিয়েছি৷ নাগা মরিচ বা অন্যান্য সব্জী চাষে সরকারি কোন সহায়তা নেই, শুধুমাত্র পরামর্শ দেওয়াই কৃষি অফিসের কাজ।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..