সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১, ২০১৯
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী লোক উৎসব শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (০১ মার্চ) সন্ধায় শাহ আব্দুল করিম স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে বাউল সম্রাটের বাড়ি দিরাইয়ের উজান ধল গ্রামের মাঠে সমবেত গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় লোক উৎসব।
শাহ আব্দুল করিমের জীবন নিয়ে আলোচনা সভায় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একমাত্র পুত্র শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ও শাহ আবদুল করিম স্মৃতি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ আপেল মাহমুদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিউল আলম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, সমবায় কর্মকর্তা রাজমনি সিংহ, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সোয়েব হাসান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ চৌধুরী, অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাহিদ আহমদ প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় শাহ আব্দুল করিমের ভক্তবৃন্দের অংশগ্রহণে লোকগানের অনুষ্ঠান। রাতভর গান ও আব্দুল করিমকে নিয়ে স্মৃতি চারণের মধ্য দিয়ে চলবে এ লোক উৎসব। এ উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করতে ঢাকা থেকে এসছেন সঙ্গীত শিল্পী শাহনাজ বেলী ও সিলেটের শিশু শিল্পী মাহফুজুর রহমান। স্থানীয় বাউল আব্দুর রহমান, রনেশ ঠাকুর, সিরাজ উদ্দিন, ফয়সাল শাহ আব্দুল করিম রচিত বিভিন্ন আধ্যাত্মিক, মরমী ও সারি গান পরিবেশন করবেন।
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিনি বেঁচে থাকা অবস্থায় ২০০৬ সাল থেকে ধল গ্রামবাসীর উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ১৪তম লোক উৎসব হচ্ছে। আব্দুল করিমের পুত্র ও উৎসব আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক শাহ নুরজালাল বলেন, দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের অতিথিরা বাউল সম্রাটের জীবন নিয়ে আলোচনা ও দেশের বিখ্যাত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করছেন। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তবৃন্দ এসে পৌঁছে গেছেন। তবে কোনরুপ পৃষ্টপোষকতা না পাওয়ায় আমরা এখন নিজ উদ্যোগেই উৎসব করছি।
শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বয়স্ক শিক্ষা কয়েক দিন গেলেও পরে অভাবের তারনায় তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন। পরে স্কুল ছেড়ে হয়ে যান গৃহস্থের বাড়ির রাখাল। পড়াশোনা না করতে পারলেও তিনি মুখে মুখে গান রচনা করতেন। তার ভক্ত ও ছেলে এই গান লিখে দিতেন। আব্দুল করিমের গানে ফুটে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা, আছে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা।
একুশের চেতনায় স্বাধীনতার শক্তি, বিদ্রোহী এক মানব একুশে পদক প্রাপ্ত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। স্বাধীনতার পর যখন বঙ্গবন্ধু দিরাইয়ে আসেন তখন তার গান শুনে তাকে পুরস্কৃত করেন। এছাড়াও মাওলানা ভাসানীসহ দেশের অনেক বড় বড় ব্যাক্তির মঞ্চে তিনি গান পরিবেশন করেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’ যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৫৭’র কাগমারী সম্মেলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র গণ আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই তিনি গানকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন। লোকও উৎসব উপলক্ষ্যে বসেছে গ্রামীণ মেলা ও আব্দুল করিম স্মৃতি সংগ্রহশালার সামনে বিক্রি হচ্ছে আব্দুল করিমের জীবন কর্মের উপর রচিত বইয়ের মেলা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd