সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০১৯
সিলেট :: সিলেটের মাটিতে সূর্যমুখী চাষ করার লক্ষ্যে বিগত তিন বছর যাবত বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গবেষণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউড (বারি) সিলেট শাখার গবেষকরা। ইতিমধ্যে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরেও পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষে সফলতা পেয়েছে বারি। এর ধারাবাহিতকায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামাল বাজার এলাকার কৃষক আনছার আহমদের ৩৭ শতক জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করেছেন সূর্যমুখী ফুল।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউড সূত্রে জানা যায়, শীতকাল সূর্যমূখী চাষ করার উপযুক্ত সময়। নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সূর্যমুখীর বীজ বপন করতে হয়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় সূর্যমূখী ফসলে। সবকিছু মিলিয়ে খুব বেশি খরচ হয় না সূর্যমুখী চাষ করতে। ৯০-১১০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। উৎপাদিত সূর্যমুখী বীজ বাজার মূল্য মণ প্রতি ২৪০০ থেকে ৩০০০ টাকা। সে হিসেবে একজন কৃষকের খরচ বাদ দিয়েও লাভের পরিমান থাকবে বেশি।
সূর্যমুখী ফুল চাষের জন্য মাটি উপযুক্ত কি না তা পরীক্ষা করতে ২০১৭ সালে নিজের জমিতে কিছু সূর্যমুখী ফুলের বীজ বপন করেছিলেন দক্ষিন সুরমা উপজেলার কামাল বাজার এলাকার কৃষক আনছার আহমদ। ওই বীজ থেকে প্রায় ২৫টি সূর্যমুখী গাছের ফলন হয়। সেই ফুলগুলো থেকে প্রায় ৩ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন আনছার। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যম্যে জানতে পারলেন অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষ লাভজনক এবং এই ফুল চাষ করতে খরচ বেশি হয় না। এতে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হন আনছার আহমদ।
কামালবাজারের সূর্যমূখী চাষী আনছার আহমদ বলেন, ‘এই জমিতে আমি সরিষা চাষ করতাম। এই ফসলে খরচ ও আয় প্রায় সমান হয়। সূর্যমুখী ফুল যে চাষ করা যায় এটা জানতাম না। কৃষি গবেষণা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারি এই ফুলের বীজ থেকে তেল হয়। এই ফসলের বাজার দরও অনেক বেশি। তাদের উৎসাহে প্রথম বার ২০টি ও এবার ৩৭ শতক জায়গার উপড় সূর্যমূখী চাষ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এবার বীজ বপন করতে একটু দেরি করে ফেলেছি। তারপরও যে পরিমান ফুল ফুটেছে তাতে ভালো ফসল উৎপাদনের আশা করছি।’
এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউডের সহযোগিতায় ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর ৩৭ শতক জায়গায় সূর্যমুখী বীজ বপন করেন আনছার আহমদ। এই বীজগুলো থেকেও ভাল ফলন হয় সূর্যমুখীর। কামালবাজারের আনসারের মাঠ ভর্তি এখন হলুদ সূর্যমুখী ফুল। মার্চ মাসের শেষ দিকে এই ফুলগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করা হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউডের এই সূর্যমুখীর পরীক্ষামূলক গবেষণার মাঠে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক আনছার আহমদ। তাই আগামীতে আরো বেশি জায়গায় সূর্যমুখী চাষ করার ইচ্ছা তিনি।
আগামীতে ৫-৬ একর জমিতে সূর্যমূখী চাষ করার ইচ্ছা পোষন করে আনসার আহমদ বলেন, ‘আমার ফসল দেখে এলাকার অনেকেই সূর্যমূখী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেক কৃষক কিছু বীজ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।’
হাকালুকি হাওরপারের সূর্যমুখী চাষী আত্তর আলী বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউড (বারি) সিলেট এর সহযোগিতায় আমি সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়েছি। তাদের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টায় আমাদের এলাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে এগিয়ে এসেছে।
সিলেটের প্রথম সূর্যমুখী চাষী ফয়সল আহমদ বলেন, গত ৩ বছর যাবত আমি কুমারগাঁও এলাকায় সূর্যমুখী ফুল চাষের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বারির সার্বিক সহযোগিতায় আমি বিগত ২ বছরের চেয়ে এবছর একটু ভালো ফলন আশাকরছি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউড সিলেটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, ‘সিলেটের মাটিতে সূর্যমুখীর চাষ নিয়ে তিন বছর যাবত আমরা গবেষণা করেছি। গবেষণার শেষ ধাপে আমরা সরেজমিনে কাজ শুরু করি। যদিও এই এলাকার মাটি অ¤øীয় তারপরও সিলেটে বাণিজ্যিক ভাবে সূর্যমুখী চাষ করা যাবে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজারে আমাদের পরীক্ষামূলক গবেষণার মাঠে এখন পর্যন্ত ভালো সম্ভাবনা লক্ষ্য করা গেছে। তবে এখনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও বর্তমান সূর্যমুখী মাঠের প্রেক্ষাপটে বলা যায় সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তেলবীজ হিসেবে সূর্যমূখীর ফুলের চাষ করে কৃষকরাও লাভবান হবেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd