সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০১৯
জাবেদ এমরান : আঞ্চলিক প্রবাদ বাক্য- ‘কই’ত জানেনা বিছমিল্লার গুড়ি, বিয়া কর’ত চায় মিয়াছাবর পুরি’ এই টাইপের সাংবাদিকের উথ্বান বাড়ছে সিলেটে। একশ্রেণীর ধান্ধাবাজ পত্রিকার কার্ড বানিজ্যে বেড়ে চলেছে ভূয়া সংবাদিকের সংখ্যা। এসব সাংবাদিক অফিসারদের কারণে বিব্রত প্রকৃত সংবাদকর্মীরা। সদ্য সমাপ্ত হওয়া জাতীয় নির্বাচন পরিদর্শন পাসের জন্য ডিসি অফিসে নামে বে-নামে পত্রিকার পরিচয়ে আবেদন পড়ে সাত শতাধিকের অধিক। অনেকে সহজে বা যুদ্ধ করে পাসকার্ড পেলেও নির্বাচনের সারাদিন সাইনবোর্ডধারীদের তেমন চোখে পড়ে নি। তাদের আবার কার্ডের ছবিতে ফেসবুক রীতিমত ভেসে যায়। আর যে কয়জন সাংবাদিকের অফিসারকে ভোটের দিন দেখা যায় পরবর্তীতে নিবার্চন নিয়ে তাদের কোথাও কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে বলে চেষ্টা করেও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। এইসব চাঁদাবাজ সাংবাদিকরা ছবিক্যাপশন তো দূরের কথা, নিজের নাম লিখতে কলম ভাঙে। নিজেকে অন্যের কাছে সাংবাদিকের স্থলে ‘সাম্বাদিক’ পরিচয় দেয়। তাদের সাংবাদিকতা কপি পেস্ট আর ইন্টার্নেটের দোকানদারকে দিয়ে। বীরদর্পনে তারা যানবাহনে, গলায় বড়বড় সাইনবোর্ড, ক্যামেরা ঝুলিয়ে পাসপোর্ট, বিআরটিএ অফিস সহ সরকারি-বেসরকারি নানা অফিস ও অপরাধের আস্তানায় ঘুরঘুর করতে শোনা যায়। আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার সাথে কিছু পরিচিত পত্রিকাও কার্ড বানিজ্যে জড়িত রয়েছে। তাদের সৃষ্টি দালাল ও চাঁদাবাজদের কারণে প্রকৃত সংবাদকর্মীরা দায়িত্ব পালনে নানা স্থানে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। প্রকাশ্যে নিষ্ঠাবান কিছু সাংবাদিক নেতারা নিজেদের স্বার্থের জন্য গোপনে এদের মদত দেয়ায় তাদের দৌরাত্ম্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। কালো টাকা সাদা করতে, অবৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে যেমন অনেকে পত্রিকার মালিক হচ্ছেন তেমনি যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর হলে মিডিয়ার কার্ড বানিজ্যের তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে তিনমাস, ছয়মাস, বছর মেয়াদি রঙচটা ৬০ টাকার প্লাস্টিক কার্ড কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি করেণ। ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক, কাগজপত্রবিহীন অনটেস্ট বা বর্ডারক্রস যানবাহন চলাচলের বৈধতার জন্য চওড়া দামে কেনাবেচা হয় ওইসব কার্ড। আর এসব যানবাহন অপরাধ কাজে ব্যবহৃত হলেও তাদের অস্তিত্ব খোঁজে পায় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরদিকে, পুলিশ প্রশাসন সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা ও সড়কে খুব একটা গাড়ি সিগনাল না দেয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করে কাজে লাগাচ্ছে ভূইফোঁড় পত্রিকার তথাকথিত সাংবাদিকরা। মাঝেমধ্যে এদের দু-একজনকে পুলিশ সড়কে থামালে সাংবাদিকের তকমায় চড়াও হয় পথ আগলে রাখা ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ব্যাগ, ফাইল কেউবা আবার ক্যামেরা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে দালালি, অপরাধের স্পটে অবাধ বিচরণ করছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা সহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। তবে মাঝেমধ্যে খুব কম সংখ্যক ধরাও পরে। মাস কয়েক আগে পরিচিত পত্রিকার এমন’ই একজন নগরীর এক ব্যাংকে সাংবাদিক পরিচয়ে দালালি করতে গিয়ে আটক হয়ে মুসলেকা দিয়ে ছাঁড়া পায়। সংঘবদ্ধ একটি চক্র সাংবাদিকতার আড়ালে দীর্ঘদিন থেকে দালালি ও চাঁদাবাজির নেশায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছে শহর থেকে উপজেলায়। এদের কৃতকর্ম অনেকে ওয়াকিবহাল থাকলেও কোনো সাংবাদিক সংগঠনই কখনো এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেছেন বলে শোনা যায় নি। সংবাদ সম্মেলন সহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংবাদ কাভারেজ পেতে প্রেসক্লাব নেতারা নামসর্বস্ব ওইসব পত্রিকা ও তাদের বানানো ভূয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সে কারণে নিচ্ছেন না কোনো ব্যবস্থা, এমনটি মনে করছেন অনেকে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd