সিলেট ১২ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:২১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০১৯
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: থাকার জন্য একটি বাড়ি এবং ছেলে-মেয়েদের মানুষের মতো করে গড়ে তুলতে যাত্রী রাণী দত্ত হাতে তুলে নিয়েছেন অটোরিকশা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেটি চালিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
নারীর হাতে অটোরিকশার স্টিয়ারিং- এই নিয়ে সুনামগঞ্জ শহর জুড়ে ব্যাপক আলোচনা। তবে বেশিরভাগ শহরবাসীই বাহবা দিচ্ছেন তার এই কাজে।
তাহিরপুর উপজেলা থেকে ২২ বছর আগে মা ও ছোট বোনের সঙ্গে সুনামগঞ্জ শহরে আসেন যাত্রী রাণী দত্ত। তখন তার বয়স ছিল ৭/৮ বছর। মা ও সংসারের জন্য কিছু একটা করার অনেক স্বপ্ন নিয়ে শহরে এলেও প্রথম দিকে হোঁচট খেতে হচ্ছিল। মায়ের সঙ্গে তিনিও মানুষের বাসার কাজ শুরু করেন। তখন ১০০ টাকা বেতনেও তাকে কেউ কাজ দেয়নি। তবে আস্তে আস্তে সামলে নেন।
যাত্রী রাণী দত্ত বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় অনেক কিছুই সইতে হয়েছে। তবে নিজের স্বপ্নকে চার দেয়ালে আটকে থাকতে দেইনি। প্রথমে নিজ উদ্যোগে সেলাই শিখে টেইলার্সে কাজ শুরু করি। সেখানকার আয় দিয়ে ছোট বোনকে বিয়েও দিয়েছি।’
এর কয়েক বছর পর প্রেম করে বিয়ে করেন হৃদয় দত্তকে। তবে যাত্রীর অভিযোগ, ‘সেই ভালোবাসার বিয়ে মেনে নেয়নি হৃদয় দত্তের পরিবার। তাই স্বামীর ঘরে সুখ হয়নি। বিয়ের এক মাস কাটতে না কাটতেই স্বামী মারধর করেন। এরপর রোজ মারধর করতেন। এমনও হয়েছে, কয়েকদিন হৃদয় বাসায় আসতেন না। অন্য মেয়েদের সঙ্গে থাকতেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই নির্যাতন করা হত।’
যখন বড় ছেলের জন্ম হয়েছে, তখনও পাশে পাননি স্বামীকে। একাই হাসপাতালে গিয়েছেন, সেখানে বাচ্চা প্রসবের পর একাই বাসায় ফিরেছেন। এখন তিন সন্তানের মা যাত্রী রাণী দত্ত। তাদের এক ছেলে, দুই মেয়ে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিয়ের নয় বছর পরও শ্বশুর-শাশুড়ির ভালোবাসা পাইনি। নাতি-নাতনির মুখ পর্যন্ত দেখতে চান না তারা। সংসারের সব খরচ তার স্বামীই চালাতেন। তবে এখন তিনি নিয়মিত কাজ করেন না।’
তাই যাত্রী রাণী সিদ্ধান্ত নেন, ফের কিছু একটা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সে কারণেই নতুন করে এই স্বপ্ন দেখা। স্বামীর কাছ থেকে চালানো শিখে গত ৭ মার্চ অটোরিকশা নিয়ে প্রথমবার শহরে বের হন তিনি।
যাত্রী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে কিছু একটা করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অভাবের সংসারে তা যেন হয়ে উঠছিল না। এখন অটোরিকশা চালিয়েই স্বাবলম্বী হয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।’
‘অটোরিকশা চালাতে প্রথম প্রথম অনেক ভয় হয়েছিল। কিন্তু হেরে যাইনি। দুই একদিন হাত কাঁপলেও এখন সহজেই চালাতে পারছি। গত ৭ মার্চ অটোরিকশা চালানো শুরুর প্রথম দিনই আমাকে মহিলা পরিষদে ডাকা হয়। নারী দিবসের শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় তারা। আমিও খুব শখ করেই পরদিনের শোভাযাত্রায় অংশ নেই।’
যাত্রী রানী দত্ত বলেন, ‘আমি মাত্র অটোরিকশা চালানো শুরু করেছি। দৈনিক এক হাজার থেকে এগার শত টাকা আয় হয়। অটোরিকশাটি কিস্তিতে কিনেছি। প্রতি সপ্তাহে তিন হাজার টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়।’
‘আমি চাই না, আমার মতো পরিণতি কারো হোক। আমার ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হবে, সেটাই চাই।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd