স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও বীরত্বের সম্মানপাননি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুহিত

প্রকাশিত: ৯:১৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০১৯

স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও বীরত্বের সম্মানপাননি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুহিত

স্টাফ রিপোর্টার :: ‘পরাধীনতার আগল ভাঙ্গতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে পশ্চিমাদের দু:শাষণ আর বৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে। দেশকে পাকিস্থানী হায়েনাদের কবল থেকে মুক্ত করে বৈষম্যহীন রাস্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। এই ছিলো আমাদের মিশন। কোনো কিছু পাওয়ার জন্যই জীবনটাকে বাজি রাখিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহবানেই শত্রু মোকাবেলায় অবতীর্ণ হই। তারপর এক এক করে চোখের সামনে যা কিছু ঘটলো-তার বর্ণনা দিতে গেলে এখনও হিম হয়ে উঠে সারা শরীর’।

কথাগুলো বলছিলেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মুহিত। তিনি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। ‘যার যা কিছু আছে, তাই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে’- জাতির পিতার সেই আহবান গভীরভাবে নাড়া দেয় আব্দুল মুহিতকে। মুহিতের ঠগবগে যৌবন তখন কেবলই তাড়া করে শত্রু মোকাবেলায়। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে হবে- যৌবনের ২৪ বছর বয়সেই শুরু হয় তাই নতুন অভিযাত্রা।
তিনি বলেন, এই দেশ এমনি এমনিই স্বাধীন হয়নি। কারো দয়ায়ও এই দেশ পাইনি। দেশ পেয়েছি তাজা রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর এখনো এদেশের কিছু কুলাঙ্গার আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে ব্যঙ্গুক্তি করার দু:সাহস দেখায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এমন দৃশ্য আমাদের রক্তক্ষরণ ঘটায়। তিনি বলেন, দেশের বিরোধিতা করেও আজকাল অনেকেই নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিজের ভাগ্য নয়, দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই মৃত্যু ভয়কে পিছু ফেলে সম্মুখ সমরে অংশ নেই। দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসে থাকা দেশীয় মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেন । এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশী দূতাবাসে যোগাযোগ করে সহকারি হাই কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে যথাযথভাবেই সকল কাগজপত্র প্রদান করি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সকল প্রমানাধি দাখিল করার পরও আবদুল মোহিতকে তালিকাভুক্ত করা হয়নি।
একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘এখনো চোখে ভাসে একাত্তরের বিভীষিকাময় স্মৃতিগুলো। চারিদিকে কেবল মৃত মানুষের লাশ আর মুহুর্মুহু গুলি। প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যু অনিবার্য। কখনো অন্ধকার হাতড়িয়ে গুলি আবার কখনো দিনের আলোতেই ঝাঝরা হচ্ছে কারো বুক। তখন মৃত্যুভয় ছিলোনা একেবারেই । মৃত্যু দেখতে দেখতে কেমন যেনো একটা সখ্যতা ঘটে যায় মৃত্যুর সাথে। চোখে তখন স্বপ্ন একটাই- পাকসেনাদের খতম। যুদ্ধে জয়ি হতে হবে। স্বদেশের বুক থেকে পাকিস্থানী হায়েনাদের তাড়িয়ে দিতে হবে।’

আবদুল মোহিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ভারতের আসাম রাজ্যের আপার হাবলং এ। সেখানে এলএমজি, এসএমজি,একসপ্লেসিব,গ্রেণেইড ও থ্রিনটথ্রি রাইফেল প্রশিক্ষণ শেষে ৪ নং সেক্টরের আওতাধীন শমশের নগরে চলে যান আপারেশনে। জুলাই মাসে প্লাটুন কমান্ডার ড. নুরুল ইসলাম চঞ্চলের নির্দেশনায় ট্রুপস কমান্ডার খালেদ এর নেতৃত্বে চলে একের পর এক অপারেশন। টিমলিডার আকতার হোসেনের সাথে কাজ করতে গিয়ে অনেক দু:সহ স্মৃতি এখনো তাড়া করে আবদুল মুহিতকে।
তিনি বলেন, যৌবনের তাজা সময় ব্যয় করেছি দেশের জন্য। এখন জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। কিছু চাওয়ার নেই। প্রজন্মের স্বার্থে সদাশয় সরকারের আবদুল মুহিতের আর্জি-অন্তত শেষ বয়সে বীরত্বের সম্মান নিয়ে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগের সুযোগ চাই।
আবদুল মুহিতের সমরাঙ্গণের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশ স্বাধীনের পর জীবীকার তাগিদে আবদুল মুহিত পাড়ি জমান প্রবাসে। দেশে থাকলে হয়তোবা তিনি স্থানীয় রাজাকারদের আক্রমনের শিকার হতেন। তিনি সহযোদ্ধা আবদুল মুহিতের স্বীকৃতি এবং সম্মাননা প্রদানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জেলা মুক্তযোদ্ধা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমার হাতে আরো রয়েছে। একজন মুক্তযোদ্ধা হিসেবে বিষয়টি মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়’। তিনি বলেন, শুধু মাত্র লবিং করার মাধ্যমে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখাতে পারলেও সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ কিংবা স্বীকৃতি আদায় সম্ভব হচ্ছেনা।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..