সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:০১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০১৯
মবরুর আহমদ সাজু :: সিলেট নগরে মিনি চাইনিজ এবং ফাস্টফুড দোকানের আড়ালে দেদারছে চলছে অন্তরঙ্গ ডেটিং ও দৃষ্টিকটু কার্যকলাপ। ফলে দিনে রাতে সমানতালে এসব রেস্তুরায় বিভিন্ন বয়সীদের আনাগোনা থাকে। এছাড়া ‘অসামাজিক কাজে’ চাহিদা থাকায় নগরের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে গড়ে ওঠছে মৃদু আলো ও ছোট ছোট কেবিন সম্বলিত অসংখ্য চাইনিজ রেস্তুরা। পুলিশের নাকের ডগায় এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কতিপয় ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নীরবতা ও অভিযান না থাকার কারণে বিপথে পরিচালিত হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সীদের পুজি করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে একটি শ্রেণি।
সরেজমিনে নগরের বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায়, এয়ারপোর্ট রোডের গ্রিণল্যা- রেস্টুরেন্ট, নগরের বারুতখানা মোড়ে ক্যাফে অর্ক, ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট, ফেট বেলি, ফুড প্যালেস, পিপার্স রেস্তুরা, জিন্দাবাজার চিয়াং মাই চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, স্পাইসি, ইষ্টিকুটুম চাইনিজ, আম্বরখানা এলাকার হাবিব রেস্তুরাসহ নগরীর অধিকাংশ রেস্তুরায় দিবা-রাত্রির বেশিরভাগ সময়ই থাকে আলো-আঁধারির খেলা। এই আলো-আঁধারিতেই চলে তরুণ-তরুণীদের ‘অন্যরকম’ প্রেমের আদান প্রদান। কেবিনগুলো যেন মধুকুঞ্জ ভরপুর। শুধু এই রেস্তুরাগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নগরীর অলি-গলিতে নামে বেনামে বৈধ-অবৈধভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে মিনি চাইনিজ ও ফাস্টফুডের দোকান। বাহ্যিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন হলেও এসব রেস্টুরেন্টের ভেতরে কী আছে তার খবর কেউ রাখে না। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টের ভেতরে ছোট ছোট কেবিন তৈরি করা। সেগুলোতে আবার পৃথক কপাট (দরজা) আছে। ভিতর থেকে সে কপাট আটকানো যায়। বাহির থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এসবের ভেতরে কি আছে। এই সুযোগে এসব রেস্তুরায় গলাকাটা দাম নেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব রেস্টুরেন্টের প্রধান আয় আগতদের কাছে থেকে পাওয়া ‘ওয়েটিং বিল’। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীসহ তরুণ-তরুণিরা ‘ওয়েটিংয়ের’ নামে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
সিলেটের সচেতনমহল বলছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চলে এরা। এসবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস করেন না কেউ। যদিও কয়েক বছর আগে আল-হামরা শপিং সিটির সামনে এক চায়নিজ রেস্টুরেন্ট অসামাজিক কার্যকালাপের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে দেয়। পরবর্তীতে এরকম আর কোনো রেষ্টুরেন্টে অভিযান না চলার কারণে আবারো বেপোরোয়া হয়েছে এসকল রেস্টুরেন্টের কার্যকলাপ।
শুভ প্রতিদনের অনুসন্ধানে জানা যায়, অসামাজিকতার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আম্বরখানাস্থ হাবিব রেস্টুরেন্ট। এখানে কেবিন বানিয়ে ঘন্টা ভিত্তিক চুক্তিতে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এসব রেস্টুরেন্টে উঠতি বয়সী ধনীর দুলাল- দুলালীরা ডেটিংয়ে বাজিমাত করে।
এ ব্যাপারে প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে কাস্টমার সেজে বারুতখানাস্থ ফুড প্যালেসের সেল নাম্বারে কল দিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এখানে আলো আধাঁরের ব্যবস্থা রয়েছে। কাপলদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এখানে যুগল নিয়ে আসলে প্যাকেজ করে খেতে হবে। শুধু তাই নয়, এসব রেস্টুরেন্টের মালিকরা কিভাবে যুগলদের নিরাপত্ত্বা দেন তার ভিডিও অডিও প্রমাণ আছে শুভ প্রতিদিনের কাছে। রয়েছে অনেক কথোপকথন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টের কর্মচারী জানান, এসব কেবিনগুলোতে যুগলরা বুকিং নেন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা দরে। তারা টাকার বিনিময়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেষ্টুরেন্টে আসা এক তরুণ বলেন, প্রেমের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর জন্য চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আসা। এখানে সব ধরনের ব্যবস্থা করে রাখা আছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওই তরুণ জানান, তারা একে অপরের বন্ধু বটে তবে প্রথমে ফেসবুকে কথা হয়, তারপর ডেটিংয়ের বাজিমাত।
ক্যাফে অর্ক, ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট, ফেট বেলি, ফুডপ্যালেস, পিপার্স কর্মচারী ও ম্যানেজাররা বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, আমাদের রেস্টুরেন্টে সিসিটি টিভি ক্যামেরার আওতায়। এখানে কোনো অসামাজিক কর্মকান্ড হয় না। তারা বলেন, কিছু কিছু ক্যাফেতে অধিক মুনাফার জন্য অসামাজিক কাজ করার সুযোগ করে দেয় শুনেছি। তবে, পরিচয় গোপন করে যখন এই রেস্টুরেন্টগুলো ভাড়া নেয়ার কথা হয় তাদের সাথে। তখন তারাই জানান, শুধুমাত্র যুগলদের জন্য ভাড়া দেয়া হয় এসব কেবিন। ঘন্টা হিসেবে নেয়া হয় ৫শ থেকে ১হাজার। খাবার না খেলেও নির্ধারিত সময়ের টাকা দিতে হয়।
সিলেট আম্বরখানা গার্লস কলেজ ইংরেজি ব্ভিাগের প্রভাষক মো. শামিম আহমদ জানান, খাবারের রেস্টুরেন্ট। পরিবার নিয়ে‘ ভেতরে ঢুকলেই ভিন্ন পরিবেশ। জোড়ায় জোড়ায় বসা তরুণ-তরুণী। বেশিরভাগই লিপ্ত অসামাজিক কর্মকান্ডে। পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বিব্রত সাধারণ ভোক্তা। খাবারের জন্য নয় অনৈতিক কাজের জন্যই সুব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে এসব রেস্তোরায়। প্রতিদিন আগত তরুণ তরুণীদের ঘিরেই এসব ব্যবসা মোটামুটি জমজমাটই বলা চলে সিলেটের মাঠিতে। তিনি বলেন, মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুড ব্যবসার আড়ালে অবৈধ আলো-আঁধারির রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বর্তমানে জমজমাট হয়ে ওঠেছে।
এ বিষয়ে সিলেট বিএম কলেজের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই আমাদের সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা মূল্যবোধ, প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সমাজে প্রবেশ করেছে। অথচ এটাকে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তা আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, একটা মূল্যবোধকে ধারণ করতে গেলে সময় লাগবে। সেই সময় এখনও অতিক্রান্ত করতে পারিনি আমরা। সে কারণেই এ ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এটাকে ‘বদহজম’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বন্ধ করার জন্য আমাদের রেগুলেটরি এজেন্সি ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে সচেষ্ট হতে হবে। পাশাপাশি আমাদের মূল্যবোধ ও সচেতনতাকে জাগ্রত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এবিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, সিলেট অনলাইন নাগরিক সমাজ থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলা হয় ধন্যবাদ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য পবিত্র নগরীতে অপবিত্র নিপাত যাক, ফেঞ্চগঞ্জের সাব রেজিষ্টার মো. মিজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে, ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রহমান লিমন বলেন, অনেক ধন্যবাদ সত্য বিষয় গুলা তুলে ধরার জন্য, আম্বরখানা পয়েন্টের মসজিদের পাশে হাবিব রেষ্টুরেন্টের দুই তলায় এর চেয়ে ভয়ানক গঠনা গঠতেছে বিএনপি নেতা সালেহ আহমদ খসরু বলেন, নজর দিন সবাই! এই সিলেট এমন ছিলনা! কারা করলো এই সিলেট এমন! ওরা কোত্থেকে এসে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে! রোটারিয়ান বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা অতীব জরুরী আম্বরখানা গার্লস কলেজের শিক্ষক তোফালে আহমদ বলেন আধ্যাত্মিক নগরীর পবিত্রতা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসা উচিৎ।
এ প্রসঙ্গে এসএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তালিকা করে মাঠে নামছে পুলিশ। এসব রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাবো। অভিযানে যাদেরকে স্পটে পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, হোটেলের কথা বলতে পারবো তবে রেস্টুরেন্ট এসব হচ্ছে আমি জানি না এই প্রথম আপনার কাছ থেকে শুনলাম ? তবে শীঘ্রই এ্যকশনে যাবো। তথ্য সূত্রে সিলেটের সময়
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd