সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৩৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০১৯
উজ্জ্বল আহমেদ, হবিগঞ্জ :: ফাল্পুনের মাঝামাঝি সময়। হাওরজুড়ে থাকালে যতদূর চোখ যায় যেন সবুজ জলরাশীর এক মহাসমূদ্র। দক্ষিণা বাতাসে সবুজ ধান ক্ষেতের দোলানি দেখে দোল খায় কৃষকের হৃদয়ও। হাজারো স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন কৃষকরা। কিন্তু কে জানত সেই স্বপ্ন ভাটা দেবে ধানের চিটা! মাত্র কয়েক দিন আগে যে কৃষক তাঁর জমির পাশে দাঁড়িয়ে নির্ভাবনার স্বপ্ন বুনতেন, তাঁরা আজ কাঁধের গামছা দিয়ে চোখের পানি মুছছেন !
সরেজমিনে হাওর পরিদর্শন করে কৃষক এর সাথে আলাপ করে জানাযায়, হবিগঞ্জের প্রতিটি হাওরে কৃষকদের রঙিন স্বপ্নকে মলিন করে দিয়েছে ধানে চিটা। স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই দাফন দিয়ে এখন দিশেহারা কৃষক পরিবার।
জানা যায়, হাওর অধ্যুষিত এলাকা হবিগঞ্জের কৃষকরা সব সময়েই আগাম বন্যার ঝুঁকিতে থাকেন। পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে প্রায় প্রতি বছর আগাম বন্যায় তলিয়ে যায় কৃষকের সোনার ফসল।
গত বছরও ধান কাটার শেষের দিকে আগাম বন্যা এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবছর বোরো মৌসুমে অনেক কৃষক স্বল্পজীবী আগাম জাতের ব্রি- ধান ২৮ ও ৭৪ আবাদ করেন। কিন্তু ধানে ব্যাপক হারে চিটা দেখা দেয়ায় কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে।
জেলার আজমিরীগঞ্জ বানিয়াচং, ও লাখাই উপজেলার কৃষকরা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ওই সব এলাকার কৃষক ধানে চিটা দেখা দেয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১৮ হাজার ১শ’ ৯৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। গেল দুই বছর ধরে আগাম বন্যায় অনেক কৃষকের স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে যায়। এ বছর আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পেতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে অনেক কৃষকই স্বল্পজীবী আগাম জাতের ব্রি ধান ২৮ ও ৭৪ ধান আবাদ করেন। কিন্তু এতেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। ধানে ব্যাপক হারে চিটা দেখা দেয়ায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষকই। রঙিন স্বপ্ন পূরণতো দূরের কথা, সারা বছর কি করে চলবেন তার হিসেবে মেলাতেই ব্যস্ত কৃষকরা।
এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নজরা কান্দা গ্রামের কৃষক রব উল্লাহ্ বলেন- ‘ধানের গাছগুলো অনেক ভালো হয়েছিল। কিন্তু ধানে শীষ ( স্থানীয় ভাষায় তোর) আসার পর এগুলোতে অর্ধেকের চেয়ে বেশি চিটা হয়ে গেছে।’
Ÿদরপুর গ্রামের কৃষক আশীষ সূত্রধর বলেন- ‘বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য আগাম জাতের ধান চাষ করেছি। কিন্তু ধানে ব্যপক হারে চিটা পড়েছে। এখন কি করব বুঝতে পারছি না।’
গড়দাইর কান্দা গ্রামের কৃষক মতি রহমান বলেন আমরা বুক ভরা আসা নিয়া ধার-কর্য করে ব্রি- ধান ২৮ ও ২৯ চাষ করেছিলাম চিটার পাশাপাশি মাজরা পোকার আক্রমন ও বøাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় জমির ফসল ঘরে তোলতে পারব কি না এ চিন্তায় কোল কিনারা পাচ্ছি না।
বানিয়াচং উপজেলার বাগাহাতা গ্রামের মকার হাওরের কৃষক খাজা হোসেন প্রায় ৭ একর জমিতে ৭৪ ধানের আবাদ করেছিলেন। তার সম্পূর্ণ জমিতে চিটা হয়েছে।
চমকপুর গ্রামের কৃষক আজিজ মিয়া জানান, ‘আমি ৭ কের (২৮ শতকে ১ কের) জমিতে ৭৪ ধান আবাদ করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি ধানে কোনো চাল নেই।’
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, কৃষকের ভূলের কারণেই ৭৪ জাতের ধানে চিটা পড়েছে। আর ২৮ জাতের ধানে কোন চিটা পড়েনি বলে দাবি তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রচারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী বলেন- ‘৭৪ জাতের ধান নভেম্বরের পরে বুনা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কৃষকরা এর আগেই এগুলো রোপন করে নিয়েছেন। এছাড়া মার্চ মাসের ১ম দিকে ধানের ফুল আসে। এ বছর ওই সময়ে আবহাওয়ায় শীতের প্রভাব ছিল। যার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’
কি পরিমাণ ধানের ক্ষতি হয়েছে ? এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন- ‘বেশি না সামান্য’ !
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd