সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
স্টাফ রিপোর্টার :: ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে সিলেটসহ সারাদেশে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হচ্ছে। উৎসবে মেতেছে পুরো দেশ। বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রায় নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে।
নতুনের কেতন উড়িয়ে আবার এসেছে বৈশাখ। প্রকৃতির জড়তা-জীর্ণতা ধুয়ে-মুছে নিতে বৈশাখ আসে বাঙালীর দুয়ারে। এসেছে এবারও। আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৬। উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটেও ব্যাপক আয়োজনের মধ্য বর্ষবরণ শুরু হয়েছে।
সিলেটে গত কয়েক বছর থেকে কোন বৈশাখী মেলার আয়োজন নেই। সিলেটে বাংলা নববর্ষ বরণের প্রধান আয়োজন বলতে গেলে আনন্দ লোক আয়োজিত শ্রীহট্ট সংস্কৃতি কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রবিবার ভোরে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি আয়োজিত শতকন্ঠে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্ষবরণ করা হচ্ছে বর্ণাঢ্য আয়োজনে। নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও বর্ষবরণ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে।
প্রতি বছরের ন্যায় সিলেটের এমসি কলেজ ব্যাপক আয়োজনের মধ্য বর্ষবরণ শুরু করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা সদর ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ব্যাপক কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ষবরণ চলছে।
সিলেট মহানগরী আইনশৃঙখলা বাহিনী নগরবাসীর নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সিলেটে স্বতঃস্ফুর্তভাবেই বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করা হচ্ছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
ময়মনসিংহ : নানা আয়োজনে ময়মনসিংহে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় শহরের স্টেশনরোড থেকে সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট, জেলা প্রশাসন ও বর্ষবরণ উদযাপন পর্ষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জয়নুল উদ্যানে বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি।
নগরবাসীর নজর কাড়তে মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ও হারিয়ে যাওয়া সবকিছু জীবন্ত রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়। এ সময় রাস্তার দু’ধারে শতশত উৎসুক নগরবাসী ভিড় জমান।
পরে জয়নুল উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এছাড়াও জয়নুল উদ্যান ও সার্কিট হাউজ মাঠ এলাকায় বসেছে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা।
নড়াইল : নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নড়াইলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বর ও সুলতান মঞ্চে ৬ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। রোববার সকাল ৮টায় সুলতান মঞ্চে জেলা প্রশাসন ও বর্ষবরণ উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা।
এর আগে সকাল সাড়ে ৬টায় মিতালী সংঘ মন্দির প্রাঙ্গণে শ্রুতি-ছন্দ সংগীত নিকেতন ও বর্ষবরণ উদযাপন পর্ষদের শতাধিক শিল্পীর কণ্ঠে প্রভাতি গানের মধ্য গিয়ে নতুন বছরকে বরণ করা হয়। সকাল ৮ টায় নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পান্তাভোজ, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে বর্ষবরণ, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা , ঘুড়ি ওড়ানো, হাড়ি ভাঙ্গা, ঘোড়া দৌড়া, জারিগান, কবিগান ,আলপনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, লোক সংগীত, লোক নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কাবিতা পাঠের আসর, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, ভলিবল প্রতিযোগিতা, সায়ের গান, লাঠি খেলা, হাডুডু প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠান।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়। জেলা প্রশাসন আয়োজিত শোভাযাত্রা শেষে কলেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে অনুষ্ঠিত হয় পান্তা উৎসব। পরে বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্যবাহি ঘুড়ি উৎসব, লাঠি খেলা, হাডুডু, সাপ খেলা, বানর নাচ অনুষ্ঠিত হয়।
নওগাঁ : ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’ স্লোগানে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নওগাঁয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নওগাঁ জিলা স্কুল চত্বর থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন।
এতে জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার, নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল বারী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিকসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
লক্ষ্মীপুর : উৎসবমুখর পরিবেশে লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার সকালে জেলা কালেক্টরেট ভবন প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় লাঠি খেলা ও পালকি প্রদর্শনের মতো বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এতে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দলমত নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রা শেষে কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে ৫ দিনব্যাপী লোকজ মেলা ও মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জন পাল।
মেহেরপুর : নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মেহরপুরে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। এ উপলক্ষে রোববার সকাল ৭টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান শহর প্রদক্ষিন শেষে ড. শহীদ শামসুজ্জোহা পার্কে গিয়ে শেষ হয়।
জেলা প্রশাসক আতাউল গনি, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
সাতক্ষীরা : বর্ণিল আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে সাতক্ষীরায় পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। এ উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গ্রহণ করা হয়েছে দুই দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। রোববার প্রভাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়।
শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে মিলিত হয়।
বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করা হয়। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঙালিয়ানা সাজ ও হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্য নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : অবশেষে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পহেলা বৈশাখের এ শোভাযাত্রাকে ‘নগ্নযাত্রা’ আখ্যা দিয়ে সেটি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদ। পরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর সেই ঘোষণা থেকে সরে আসে কওমি শিক্ষার্থীদের এ সংগঠনটি।
রোববার সকাল ৮টার দিকে জেলা শহরের লোকনাথ দিঘির মাঠ থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন।
জেলা প্রশাসক ছাড়াও শোভাযাত্রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন অংশ নেন। এছাড়াও শোভাযাত্রায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পরে ফারুকি পার্ক সংলগ্ন ডিসি মেলা চত্বরে আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
খুলনা : সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়ে বর্ণিল আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে রোববার খুলনায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। নবীন-প্রবীণ সবাই আজ সার্বজনীন এ উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে।
সকাল থেকে পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টায় খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহানগরীর শিববাড়ি মোড় হতে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। যা হাদিস পার্ক গিয়ে শেষ হয়। সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসকের বাংলোর বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পান্থা উৎসব।
জেলা প্রশাসনের মঙ্গল শোভাযাত্রা শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শফিউল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ফেনী : ফেনীতে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে। রোববার সকালে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনার চত্তরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ।
শোভাযাত্রায় ঢাক-ঢোল বাদ্যের সুর, কাগজ ও ককশিটের তৈরি দোয়েল পাখি, বক, নৌকা, জাল, টেপা, পুতুল ও মা-শিশুসহ নববর্ষের সাজে বেরিয়েছে কিশোর-কিশোরীর দল। ফানুসিয়ানা আয়োজকরা রাঙিয়েছে শহরের পিচঢালা পথ। ঢাকের তালে আবহমান বাংলার সংস্কৃতির সংযোজন ছিল শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের বাহারি পোশাক শোভা পায়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd