ময়মনসিংহে কিশোরী গৃহবধূকে নির্যাতন করে হত্যা

প্রকাশিত: ৪:৪১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০১৯

ময়মনসিংহে কিশোরী গৃহবধূকে নির্যাতন করে হত্যা

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মাত্র ছয় মাস আগে গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে ৩৫ বছর বয়সী শারফুল ইসলামের ঘরে বউ হয়ে যেতে হয় ১৪ বছর বয়সী কিশোরী সাথী আক্তারকে। বাল্যবিয়ের অভিশাপের মধ্যেই বিয়ের মাত্র দুই মাস না পেরোতেই স্বামী, শ্বাশুরী, ননদিনীদের পক্ষ থেকে কিশোরী গৃহবধূর ওপর শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন, নিপীড়ণ।

শেষ পর্যন্ত স্বামীর পরিবারের লোকজনের নির্যাতনে প্রাণ হারাতে হয় দু’চোখ ভরে স্বপ্ন দেখা কিশোরী গৃহবধূ সাথীকে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরমছলন্দ কাঁচরিপাড়া গ্রামে। পুলিশ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী শারফুলের বোন নাসিমা আক্তারকে আটক করেছে।

নিহত সাথী আক্তার উপজেলার চরমছলন্দ জিরাতি পাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফের কিশোরী কন্যা। স্বামী শারফুল একই উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের ছয়বাড়িয়া গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে। সাথীর মৃত্যু হয় মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকালে স্বামী শারফুলের বোনজামাই কবীরের বাড়িতে।

নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে উপজেলার চরমছলন্দ জিরাতি পাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়ে চরমছলন্দ মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাথী আক্তারের সাথে রাওনা ইউনিয়নের ছয় বাড়িয়া গ্রামের চানু মিয়ার ছেলে শারফুল ইসলামের(৩৫) বিয়ে হয়। বিয়ের সময় শারফুলকে একলাখ টাকা যৌতুক দেয়া হয়। বিয়ের দুই মাস যেতে না যেতেই শারফুল তার ব্যবসার জন্য সাথী আক্তারের পরিবারের কাছে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন।

দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী শারফুল, শারফুলের মা জোসনা আক্তার, বোন নাসিমা আক্তার ও সাবিনা ইয়াসমিন কিশোরীবধূ সাথী আক্তারের ওপর সিরিজ নির্যাতন চালায়। পহেলা বৈশাখের দিন রোববার রাতে যৌতুকের জন্য স্বামী শারফুল স্ত্রী সাথী আক্তারকে শারীরিকভাবে নির্যাতন শেষে জোরপূর্বক মুখে ঘুমের ট্যাবলেট পুরে দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।

পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর স্বামীর বাড়ির লোকজন সাথী আক্তারকে শারফুলের বোনজামাই কবীর মিয়ার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এসময় স্বামী শারফুল ও তার বাড়ির লোকজনও কবীর মিয়ার বাড়িতে আসে।

সাথী আক্তারের বাবা আব্দুল লতিফ অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার সময় মেয়ের জামাই শারফুলের বোন জামাই কবীর মিয়ার বাড়ি থেকে জানানো হয় সাথী আক্তার আত্মহত্যা করেছেন। গিয়ে দেখি আমার মেয়ের লাশ কবির মিয়ার খাটে রাখা হয়েছে। গলাসহ সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে পিটিয়ে ও গলা টিপে হত্যা করেছে তারা।

তিনি আরও বলেন, একলাখ টাকা যৌতুকের জন্যই সাথীকে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন গলা টিপে হত্যা করেছে।

গফরগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ খান জানান, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত গৃহবধূর ননদিনী নাসিমা আক্তারকে আটক করা হয়েছে। শারফুলের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু বাড়ি-ঘর ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় ধরা সম্ভব হয়নি।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2019
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..