তরুণীদের সঙ্গে পর্নো ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা : ভন্ড পেয়ারের বিরুদ্ধে চার্জশিট

প্রকাশিত: ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০১৯

তরুণীদের সঙ্গে পর্নো ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা : ভন্ড পেয়ারের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : জিন ও ভূত তাড়ানোর নামে তরুণীদের সঙ্গে পর্নো ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করার অভিযোগে করা মামলায় কথিত পীর আহসান হাবিব পেয়ারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।

সোমবার (২২ এপ্রিল) ঢাকার অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের হতে সংবাদিকদের জানায়, সমপ্রতি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে কাউন্টার টেররিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপপরিদর্শক (এসআই) সজীবুজ্জামান পর্নোগ্রাফি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে আহসান হাবিব পেয়ারের বিরুদ্ধে দুটি চার্জশিট দাখিল করেন।

গ্রেপ্তারের পর পেয়ার এ মামলায় ঢাকার মহানগর হাকিম এ কে এম মঈন উদ্দিন সিদ্দিকের আদালতে পেয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট দিবাগত রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট পেয়ারকে গ্রেপ্তার করে। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। জামিনের আবেদন করা হলে একাধিকবার তা নাকচ করা হয়েছে।

চার্জশিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ্য করেছেন- আসামি আহসান হাবিব পিয়ার (২৬) ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জিন তাড়ানো বা কবিরাজি তাবিজ দেওয়ার নাম করে মেয়েদের ফাঁদে ফেলতো। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা তথা ইলেকট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়ে/নারীদের অজ্ঞাতে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করার লক্ষ্যে স্থিরচিত্র, ভিডিওচিত্র ধারণ করতো।

তা দিয়ে ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদাহানি ঘটানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করত। প্রাথমিকভাবে অভিযোগগুলো সত্য বলে প্রতীয়মান হওয়ায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ৮ (১), ৮(২), ৮(৩) ধারায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ (২) ধারা এবং পেনাল কোডের ৩৮৫/৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হলো।

ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ার ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম এ কে এম মাঈন উদ্দিন সিদ্দিকীর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে আহসান হাবিব পিয়ার বলেন-‘২০১০ সাল থেকে আমি ঢাকায় থাকি। তখন আমি জিন তাড়ানোর তাবিজ বিক্রি করতাম। পরে টাকা আয়ের নতুন বুদ্ধি বের করি। এএইচপি নামের ভুয়া টিভি চ্যানেল তৈরি করে বিভিন্ন রিপোর্ট বানাতাম আর তাতে দেখাতাম গরিব অসহায় ও অসুস্থ ব্যক্তির মাঝে টাকা বিতরণ করছি। বিনিময়ে সারাদেশ ও বিদেশ থেকে আমার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট এবং অনেকগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অনেক টাকা রোজগার করতাম।

জিন তাড়ানোর নামে তাবিজ নিতে যেসব মেয়েরা কাছে আসত আমি তাদের সাথে সেক্স করতাম এবং গোপনে তা ভিডিও করে ইউটিউবে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মেয়েদের থেকে টাকা আদায় করতাম। তাদের মধ্যে একজন হতে চার লাখ এবং অপর একজনের কাছ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা আদায় করি। এছাড়া অন্য মেয়েদের থেকেও টাকা আদায় করি।

ভুক্তভোগীদের দুই নারী জবানবন্দিতে বলেছিলেন- দুই নারী ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তারা বলেন, আসামি পিয়ারের সঙ্গে ফেসবুকে তাদের পরিচয় ঘটে। পরে তাদের সঙ্গে আসামির নিয়মিত কথোপকথন হতো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যেমে। কথা বলার একপর্যায়ে আসামি তাদের সঙ্গে অডিও-ভিডিও ফোনসেক্স করে। ভিডিও ফোন সেক্সের অংশ আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে গোপনে রেকর্ড করে রাখে।

পরে ব্ল্যাকমেইলকরে আসামি তাদের কাছ থেকে কয়েক ধাপে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং নগদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে। আসামি আহসান হাবিব পিয়ার ভুক্তভোগী নারীদের পুনরায় টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে তার আচার-আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তারা বিষয়টি সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগকে অবহিত করেন।

উল্লেখ্য, আহসান হাবিব পেয়ার দাওরায়ে হাদিসে পড়াশোনা করেছেন। নিজেকে এএইচপি টিভির সাংবাদিক বলে পরিচয় দিতেন এবং নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ধর্মেল কথা বলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন পেয়ার। তিনি নিজেকে পীর দাবি করে জিন তাড়ানোর কথা বলে মেয়েদের নির্যাতন করতেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন সময় মেয়েদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন উত্তেজক কথা বলে এবং পরে এদের অনেককে নিজ বাসায় এনে প্রতারণা করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন। এ ঘটনায় পেয়ারের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় আইসিটি ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন একাধিক ভুক্তভোগী তরুণী।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2019
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..