সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট। ৪৮৭.৭৩ বর্গ কি. মি. আয়তনের এ উপজেলাটির ৮০ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিকভাবে উপজেলাটি দেশে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে নিচু।
অপর দিকে প্রতিবেশী ভারতে বৃষ্টিপাত হলেই ডাউকি নদী উজান থেকে নিয়ে আসে পাহাড়ি ঢল। ফলে অনেক সময়ে গোয়াইনঘাট উপজেলাতে আকস্মিক বন্যা হয়। দীর্ঘদিন উপজেলাবাসী একটি মাত্র ফসল আমনের উপর নির্ভরশীল ছিলেন।
গোয়াইনঘাটের হাওর বাওরে প্রচুর বুরো ধান চাষ হয়। আকস্মিক বন্যায় প্রায় বছরই তলিয়ে যেতো ওই ধান। প্রতিবছর বুরো ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গোয়াইনঘাটের কৃষকেরা পুরোপুরি ভাবে বুরো চাষাবাদ থেকে বিরত থাকতেন।
আবার আমনধান চাষাবাদেও আশানুরূপ ফলন হতনা। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে সর্বশেষ বন্যা এসে আমনধানের চারা নষ্ট করে ফেলতো। এভাবেই গোয়াইনঘাটের কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো দিনে দিনে দারিদ্র সীমার নিচে চলে যায়।
সাম্প্রতিকালে আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে কাজে লাগিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাবেক কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান দায়িত্ব গ্রহনের পর গোয়াইনঘাটের কৃষিতে আশার আলো সঞ্চার হয়। তিনি কৃষি সহকারী সকল কর্মকর্তার সমন্বয়ে উপজেলাতে আউশ ও আমনের পাশাপাশি বুরো ও ইরি চাষাবাদে উপজেলাবাসীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আগ্রহী করে তুলেন।
একই জমিতে ৩/৪ ফসল চাষাবাদে সরকারি /বেসরকারি সকল প্রকার সহযোগীতাসহ মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিয়ত পরিদর্শনের মাধ্যমে কৃষিতে সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি গ্রাম-গঞ্জে ও হাটবাজারে আমন ও আউশ ধানের জমিতে সেঁচের মাধ্যমে বুরো চাষাবাদ করার জন্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। পাশাপাশি বর্তমান সরকার বিনামূল্যে ধানের বীজ, রাসায়নিক সারসহ কৃষকদের চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে আর্থিক ক্ষতিপূরন প্রদান করেন। সরকার আধুনিক কৃষির জন্য মাড়াই মেশিন, ট্রাক্টর, স্প্রে-মেশিনসহ নানা সহযোগীতা দেয়।
আউশ ও আমনধানের জমিতে গোয়াইনঘাটের কৃষকেরা সেচেঁর মাধ্যমে বুরো চাষাবাদ করে প্রচুর পরিমাণ ধান উত্তোলন করেন। এছাড়া সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্টান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সেচ প্রকল্পের আওতায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় বেশ কয়টি এলএলপি পাম্প বসিয়ে বূরো চাষের জন্য পানি সরবরাহ শুরু করে।
শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিল বাবত বিঘা প্রতি ৫/৬শ’ টাকা প্রদান করে কৃষকেরা ধান চাষ করতে পারেন। বুরো ধান প্রতি বিঘায় ২০/২২ মন হওয়াতে কৃষকেরা চলতি মৌসুমে কয়েক হাজার একর জায়গাজুড়ে বূরো চাষ করেছেন। এখন চলছে ধান ঘরে উটার সময়। বিএডিসি উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের লাবু, গহড়া উত্তর, গহড়া দক্ষিণ, ছাতারগাম, আমবাড়ী হাওর, দারিখেল, লেঙ্গুড়া, গোয়াইন গ্রাম।
লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের গুরুকছি, যতনাথা, দারিখাই, টুকুইর, জাতুগ্রাম, ফতেহপুর ইউনিয়নের মানিক গণ্জ, নয়াগাম, স্লুইস গেইটের মাধ্যমে ফতেপুর ইউনিয়নে রাতারগুল শিয়ালী ছড়া, বিন্নাকান্দি এবং দক্ষিণ কাছ, নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের শিয়ালা হাওরে সরকারি স্লুইস গেইটের মাধ্যমে বুরো ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে।
সরকারি প্রতিষ্টানগুলো সেচের মাধ্যমে বূরো চাষে কৃষকদের আগ্রহী হওয়ায় অধিক ফলন উটছে কৃষকের ঘরে। সরকারি সেচ প্রতিষ্টানকে অনুসরণ করে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ব্যক্তি মালিকানাধীন হাজার হাজার সেচ প্রকল্প চালু হলে পূরোদমে ব্যাপকহারে বুরো ধান চাষ করে অধিক ফলন ঘরে তুলছেন কৃষকেরা।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন বলেন, গোয়াইনঘাটের কৃষকদের নানা সমস্যা রয়েছে। বুরোধানে পোকা মাকড় নির্মূলসহ প্রতিটি সমস্যা সমাধানে আমরা সকলে একযুগে কাজ করছি।
সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি বলেছেন, বুরো মৌসুমে গোয়াইনঘাট উপজেলার সকল অনাবাদী জমিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমার পরিকল্পনা রয়েছে। সারী ও গোয়াইন নদীর পানি ব্যবহার করে কি ভাবে জমিতে বুরো ফসল চাষ করা যায় সে লক্ষ্যে আমি কাজ করছি। আপনারা জানেন আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। এ সরকার কৃষিকে সর্বাদিক গুরুত্ব দেয়ায় আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিকে আরো সমৃদ্ধকরণে সরকার বিনামূল্য রাসায়নিক সার, ধানের বীজ আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ আধুনিক হাল-চাষের মেশিন, ধান কাটার মেশিন, ধান মাড়াইয়ের মেশিনসহ অসংখ্য সুযোগ সূবিধা সরকার অব্যাহত রেখেছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd