সিলেটে ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্চিত নারী চিকিৎসক

প্রকাশিত: ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ, মে ১০, ২০১৯

সিলেটে ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্চিত নারী চিকিৎসক

বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে চিকিৎসক, সিকিউরিটি গার্ড ও লিফটম্যানের এমন লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে।

লাঞ্চিত চিকিৎসক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘটনা প্রসংগে লিখেন:

“ সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের আজকে দুপুরের ঘটনা। ইউরোলজির এক প্যাশেন্ট আসলো। ডিউটি ডাক্তার এর অনুরোধে আমি গেলাম পেশেন্ট রিসিভ করতে। কারণ আমার এডমিশন ছিল। গিয়ে দেখি প্রায় ১৫/১৬ জন ছেলে সাথে আছে। পেশেন্ট এর হিস্ট্রি নিতে নিতে খুব বিনয়ের সাথে বললাম, আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান। একজন বললেন, আমাদের সামনেই ট্রিটমেন্ট দেন। আমি বললাম, পেশেন্ট কে এক্সপোজ করতে হবে। আর হসপিটালের তো একটা প্রটোকল আছে। তারা বললেন তারা সবাই থাকবেন এবং সবার সামনেই আমাকে ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। তারপর এদের মধ্যে একজন এর অনুরোধে বাকিরা বেরিয়ে গেলেন। তিনজন দাড়িয়ে থাকলেন। পেশেন্ট কে এক্সামিন করতে করতে আবার মানুষ ঢোকা শুরু করলো। আমি তখন বললাম, “দেখুন আপনাদের আমি বারবার বলেছি আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান। ” যথেষ্ট বিনয়ের সাথে। তখন এদের মধ্যে সরোয়ার নামের একজন বললো, “তোমার এমডিকে আমি কানধরে এনে দাড় করাবো। কর ট্রিটমেন্ট”। আমি তখন বললাম , কি বললেন আপনি? সে বললো, (আগুল উচিয়ে) “কিছু বলি নাই। পেশেন্ট ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। ট্রিটমেন্ট দাও”। আমি বললাম, “দেখেন ক্ষমতাধর ব্যাক্তির জন্য যে ট্রিটমেন্ট , আপনার পেশেন্টের জন্যও একই ট্রিটমেন্ট। সবাইকে আমরা একই ভাবে চিকিৎসা দেই। এবং সবার জন্য একই নিয়ম। সুতরাং আপনাদের বের হতে হবে। “। এরমধ্যে আমি পেশেন্টের বিপি মাপা শুরু করে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে তুই তুকারি শুরু করলেন। আমি আর সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে করতে CA, IMO রুমে গিয়ে ভাইয়া, আপুদের ঘটনা জানাই। তারপর সেই ছেলে আমার পিছন পিছন এসে কোমর থেকে ছুরি দেখিয়ে বলে ,” তোর সাহস কত। লাশ ফেলে দিবো। **, ***,**** ,বাইরে বের হ একবার। রেইপ করে ফেলবো।আমার পা ধরে তোকে মাফ চাওয়া লাগবো. ..” আরো অকথ্য ভাষায় গালাগালি। তারপর সি এ ভাইয়ার গায়ে হাত তোলার উপক্রম করে। তার গালাগালির ভিডিও ও আছে। এই হল একজন ডিউটি ডক্টর এর নিরাপত্তার অবস্থা। আমরাও রোজা রাখি। আমাদেরও ক্লান্তি হয়, ক্ষুধা লাগে। কিন্তু পেশেন্টের প্রতি এসবের কোন আঁচ পরতে দেইনা। এত ঘটনার মধ্যেও সেই পেশেন্টের কাগজপত্র শক্ত করে আমার হাতে ধরা ছিল। তার ট্রিটমেন্ট ও দেয়া হয়েছে। যদিও তারা পরে DORB নিয়ে চলে যায়। কোথায় আমাদের নিরাপত্তা? রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে আমরা কতকাল জিম্মি থাকব???

ডা: নাজিফা আনজুম নিশাত
ইন্টার্ন ডক্টর। 
সিউমেক।”

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরী তার ১৪/১৫ জন সহকর্মীসহ অ্যাপেন্ডিসাইটিসের এক রোগীকে নিয়ে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। হাসপাতালে প্রবেশের সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড ও লিফটম্যানকেও লাঞ্ছিত করেন তারা। পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এপেন্ডিসাইটিসের বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দায়িত্বরত মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসক সবাইকে একটু ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে রোগীকে সিনিয়র চিকিৎসক দেখবেন বলে জানান।

ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন।

এ সময় সারোয়ার চৌধুরী নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি পরিচয় দিয়ে তিনিসহ সবাই ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে উদ্যত আচরণ ও গালিগালাজ করেন। এতে ভয়ে লজ্জায় কেঁদে ফেলেন ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক। ঘটনার একপর্যায়ে সারোয়ার চৌধুরী ছুরি নিয়েও ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধাওয়া করেন। পরে হাসপাতালে দায়িত্বরতদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এ ঘটনার পর হাসপাতালের দুজন চিকিৎসককে মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়।

এ ব্যপারে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসকদের সাথে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমার বন্ধুর শরীর বেশি খারাপ থাকার কারণে আমরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। যা ঠিক হয়নি। তবে এ ভুল বোঝাবুঝির সমাধান হয়ে যাবে।

এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে চিকিৎসকসহ স্টাফদের এমন লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যার পর থেকে কর্মবিরতিতে নামেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা কাজে যোগ দেয়। কর্মবিরতি পালনকালে তারা এ ন্যক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফেরদৌস হোসেন বলেন, তারা সন্ত্রাসীর মতো আচরণ করেছে। আমরা তো তা করতে পারি না। চিকিৎসা সেবাও বন্ধ রাখতে পারি না। এটা মেনে নিয়েই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি কেউ ভিডিও ধারণ করলে তা ফেইসবুকে পোষ্ট করার সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় ।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..