সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:২১ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০১৯
জাকির ছিলেন সমাজে মধ্যবিত্ত। বাড়ির সামনে নিজ জায়গাতেই ছিল মুদি দোকান। তুরস্ক যাওয়ার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের তবে সাগরপথে ভীতি থাকায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল সরাসরি বিমানে। সেই মতেই নুর নবী খলিফার সঙ্গে সাড়ে ৬ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। কিন্তু জাকিরকে সুদান হয়ে নেয়া হয় নুর নবীর ভাই লিবিয়ার দালাল নুরুল ইসলাম খলিফার কাছে। এরপরই জাকিরের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। পরিবারটির কাছ থেকে কয়েক দফায় আদায় করা হয় প্রায় ৯ লাখ টাকা। শেষে গত বৃহস্পতিবার সাগর পথে লিবিয়া থেকে ইটালি যাত্রাপথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মারা যান জাকির হোসেন (২৮)।
এদিকে দালাল নুরুল ইসলাম বর্তমানে নিজ গ্রামের বাড়ি শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নে অবস্থান করছেন। তার ভাই নুর-নবী ঢাকায় আছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের সেকান্দার হাওলাদারের ২ ছেলে ,৩ মেয়ের ৪র্থ সন্তান জাকির হাওলাদার। বড় ভাই বেলায়েত হাওলাদার স্পেন প্রবাসী। জাকির বাড়ির সামনেই মুদি দোকান করতেন। ৪ বছর আগে শান্তা আক্তারকে বিয়ের পর ঘরজুড়ে আসে ২টি মেয়ে সন্তান। ইচ্ছা ছিল তুরস্ক গমনের। তবে সাগর পথে ভীতি থাকায় সেটা আর হয়ে উঠছিল না। এমন সময় সরাসরি বিমানে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে জাকিরের কাছে আসে নুর-নবী। চুক্তি হয় সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিতে হবে। সেটাও তুরস্ক পৌঁছানোর পর।
চুক্তি অনুযায়ী ৬০ হাজার টাকা দেয়ার পর গত বছরের রমজান মাসে জাকিরকে প্রথম নেয়া হয় সুদানে। কয়েকদিন পর নেয়া হয় লিবিয়ায়। লিবিয়ায় সেদেশের দালাল নুর-নবীর বড়ভাই নুরুল ইসলাম খলিফার কাছে তাকে নেয়া হয়। এরপরই শুরু হয় জাকিরসহ সেদেশে আটকা কয়েকজনের ওপর অমানবিক নির্যাতন। কখনো মাফিয়া, কখনো ডন, কখনো সেদেশের পুলিশের কথা বলে পরিবারটির কাছ থেকে আদায় করা হয় প্রায় ৯ লাখ টাকা।
শেষমেশ বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার উপকূল থেকে ৭৫ জন অভিবাসী নিয়ে ইটালির উদ্দেশে রওনা হওয়া ট্রলার ডুবিতে মারা যান জাকির হোসেন। এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়ার আজিজ শিকদারের ছেলে সজিব শিকদার নিহতসহ আরও ৪ যুবক নিখোঁজ হন। জাকির হোসেনকে হারিয়ে এখন দিশেহারা স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের লোকজন। স্বামীকে হারিয়ে কান্না যেন থামছেই না স্ত্রী শান্তা আক্তারের। অবুঝ দুটি কন্যা সন্তানকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই পরিবারের লোকজনের।
জাকিরের অসুস্থ বাবা সেকান হাওলাদার বলেন, ‘নূরনবী ও নুরুল ইসলাম আমার পুলারে তুরস্ক পর্যন্ত বিমানে নেয়ার কথা বলে সুদান দিয়ে লিবিয়া নিয়ে আটকায়। এরপর ব্যাপক মারধর কইরা দফায় দফায় সাড়ে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা নিছে। তারপর সমুদ্রে নিয়া মাইরা ফেলাইল। আমি ওগো বিচার চাই।’
একই ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মেরাজুলের মা তার ছেলের বরাত দিয়ে বলেন, নুরুল ইসলাম ও নুর নবী খুবই দুর্ধর্ষ। ওরা মেরাজুল ও জাকিরসহ অনেককে আটকে মারধর করেছে। ভয়ে আমি ছেলের জন্য ৯ লাখ টাকার বেশি দিয়েছি। বৃহস্পতিবার সমুদ্রে আমার ছেলে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। আর জাকির সাগরে ডুবে গেছে।
ইউপি সদস্য ইউনুছ মোল্লা বলেন, জাকির ব্যবসা বাণিজ্য করে ভালোই ছিল। এ গ্রামের জাকিরসহ ২ জনকে তুরস্ক নেয়ার কথা বলে লিবিয়া নিয়ে যায়। দালালরা এখন দেশেই আছে। ওদের দ্রুত গ্রেফতার করে চক্রটিকে ধরা দরকার।
শিরুয়াইলয়ে দালাল নুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তার কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, জাকির ও মেরাজুলকে লিবিয়ায় অন্যরা আটকিয়ে রেখেছিল। আমি ৯০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিলাম। সেই টাকাই ওর বাড়ির লোকদের থেকে নিয়েছি। আর কোনো টাকা নেইনি। সবই মিথ্যা। আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে সব কথাও মিথ্যা। বরং আমিই ওই দেশে গিয়ে অনেকবার মাফিয়ার কাছে ধরা খাইছি। আমি কোনো দালালি করি না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd