সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার পালেরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী’ পদে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে এবং পূর্ব শক্রতার প্রতিশোধ নিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হেকিমের বিরুদ্ধে ফেইসবুক, বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ম্যানেজিং কমিটি। বুধবার (২২ মে) দুপুরে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- বিশ্বনাথ উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহি বিদ্যালয় পালেরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৫ সালে উপজেলার ৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী’ পদে লোক নিয়োগের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনা প্রদান করেন। উক্ত নির্দেশনা অনুসারে পালেরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে মৌখিক ও লিখিতভাবে (বিদ্যালয়, গ্রামের মসজিদ, নিকটবর্তি বাজার, তহশিল অফিস ও ইউপি পরিষদ কার্যালয়’সহ দৃশ্যমান স্থানে) বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। এরপর উক্ত পদে নিয়েগের জন্য ৩টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। তৎকালীন নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার
বিশ্বনাথের সকল প্রার্থীর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই কার্য সম্পন্ন করেন এবং আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত প্রার্থীদের ৩জন নিয়ে প্যানেল তৈরী করা হয়। কিন্ত বাচাই পরবর্তি সময়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়েরের প্রেক্ষিতে সারাদেশের ‘দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী’ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তিতে উক্ত রিট নিস্পত্তি হলে গত ফেব্রæয়ারি মাসে ঐ নিয়োগ প্রক্রিয়া আবার শুরু হয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক ইস্যুকৃত আদেশের পেয়ে ২০১৫ সালের বাছাইকৃত ওই তিন প্রার্থীর মধ্যে ১ম প্রার্থী আমির হোসেনের কাছে যোগদান পত্র প্রেরণ করা হলে তিনি চাকুরী করতে অসম্মতি জানান। এর এক সপ্তাহ পর ২য় প্রার্থী জাহাঙ্গির হোসেনের কাছে যোগদান পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্ত সে কাতার অবস্থান করায় প্রধান শিক্ষিক ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়ে ২য় সপ্তাহ ৩য় প্রার্থী সুনুল হকের কাছে নিয়োগ পত্র পাঠান। এরপর ১ এপ্রিল সুনুল হক যোগদানের আবেদন করলে তা গ্রহণ করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিদের্শনা অনুযায়ী হয়েছে। ফলে কাউকে অবৈধ কোন সুযোগ দেওয়া বা অবৈধ কোন সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। এছাড়া প্রতিটি বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সভাপতির সাথে কথা বলে সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের পিটিএ সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফোন করে নিয়োগপ্রাপ্ত সুনুল হকের নিয়োগ বাতিল করতে প্রধান শিক্ষককে বলেন এবং ২য় প্রার্থী জাহাঙ্গির হোসেনকে কাতার থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাকে নিয়োগ দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে জানান। এতে প্রধান শিক্ষক অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হুমকি দিয়ে কল কেটে দেন আনোয়ার হোসেন। পরবর্তিতে ২৩ এপ্রিল আনোয়ার হোসেনের উস্কানীতে তার ছোট ভাই প্রবাসী আলম হোসেন তার ফেসবুক আইডিতে ‘পালেরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এক লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে নৈশপ্রহরী নিয়োগ দিয়েছেন’ বলে একটি স্ট্যাটাস দেন। এর একদিন পর আনোয়ার হোসেনের ভাই ফারুক মিয়ার ছেলে রাব্বি আহমদ রবিন ৩/৪ জন যুবককে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিসে প্রবেশ করে নৈশ প্রহরী নিয়োগ বাতিল করতে প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেয়। সম্প্রতি কয়েকটি অনলাইন এবং দৈনিক পত্রিকায় ‘দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী’ বিষয়ে মিথ্যা, কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির মানহানি হয়েছে। তাই অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহবান এবং একই সাথে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের প্রতি জোড়দাবী জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আসলম রাজ, রাজু আহমদ, রামপাশা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়জুন নূর, সাধারণ সম্পাদক বদর নূর খান, পালেরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ সভাপতি সাইফ উদ্দিন, সদস্য আবদুল মতিন, শেকুল বেগম, পিটিএ কমিটির সহ সভাপতি মজম্মিল আলী, সদস্য সুন্দর আলী, শরীফ মিয়া, ফয়জুল ইসলাম, এলাকার মুরব্বী নূরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, প্রবাসী দাদু ভাই ছইল মিয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি কামাল উদ্দিন প্রমুখ।