সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৫৬ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০১৯
বাংলাদেশ পুলিশের একটি নারী কন্টিনজেন্ট জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর কঙ্গো মিশনে যোগ দিয়েছে। ১৮০ পুলিশ সদস্যের এ দলটি বাংলাদেশ ফরমড পুলিশ ইউনিট-১ কন্টিনজেন্টকে প্রতিস্থাপন করবে। তারা গত সোমবার (২৭ মে) গভীর রাতে জাতিসংঘের ভাড়া করা একটি বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জাতিসংঘ মিশনগামী ‘ব্লু হেলমেট’ পরিহিত নারী শান্তিরক্ষী বাহিনীর পুলিশ সদস্যদের বিমানবন্দরে বিদায় জানান। কন্টিনজেন্টটির কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সুপার সালমা সৈয়দ পলি।
কঙ্গো মিশনে ১৮০ সদস্যের নারী পুলিশের এই দলে রয়েছেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রিয়াংকা দত্ত। আগামী এক বছর প্রিয়াংকা দত্ত আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে অবস্থান করবেন। সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করবেন তিনি।
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা সদরের ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের হাজরাপাড়া মহল্লার কৃষক বাবা ভানু দত্ত ও গৃহিণী মা বিজয়া দত্তের মেয়ে প্রিয়াংকা দত্ত। ২০১২ সালে প্রথম বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন প্রিয়াংকা। চার ভাইবোনের মধ্যে প্রিয়াংকা সবার বড়।
প্রিয়াংকা প্রথম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এ যোগদান করেন ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পরে মৌলভীবাজার জেলার এসপি অফিসে।
দেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে প্রিয়াংকা সিলেটভিউকে জানান, ডিউটিতে যাওয়ার সময় সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় দুইবার বড় ধরনের দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছি। এ ছাড়া আর কোনো সমসায় পড়তে হয়নি আমাকে। যেখানেই গিয়েছি মূল্যায়ন পেয়েছি। স্যাররা খুব মূল্যায়ন করেন আমকে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রিয়াংকা জানান, পুলিশের পেশাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। ছোটবেলা থেকেই চ্যালেঞ্জিং পেশার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল আমার। তাছাড়া পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে পরিবারের দায়িত্বটাও আমার উপরে পরে যায়। তাই এসএসসি পাশ করেই পুলিশের চাকরিতে যোগদান করি। এছাড়াও আমার গান শেখার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু পারিবারিক টানাপোড়নের কারণে সেইদিকে বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারিনি। তবে পুলিশের চাকরিতে এসে আমি বিভিন্ন বড় বড় মঞ্চে এমপি, মন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজিপি স্যারদের সামনে গান গাইতে পেরেছি। এখানে আমার গান গাওয়ার ইচ্ছাটাও পূরণ হচ্ছে।
কঙ্গোতে অবস্থান করে কেমন লাগছে জানতে চাইলে প্রিয়াংকা জানান, বিমানে উঠার সাথে সাথে খুবই এক্সাইটমেন্ট কাজ করছিল ভিতরে। সিলেটি হিসেবে বিমানে উঠার স্বপ্ন ছিল অনেক আগে থেকেই কিন্তু সেই স্বপ্ন চাকরিতে এসে পূরণ হবে কখনও ভাবিনি। আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর মাটিতে পা রাখার পর অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। শুনেছি কঙ্গোতে খুব গরম। তবে এখন শীতকাল চলছে। শীতকাল হলেও খুব ঠান্ডা পরেনি। রুমে এসি ব্যবহার করতে হয়। আশা করছি এখানকার পরিবেশের সাথে খুব শীঘ্রই নিজেকে মানিয়ে নিব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিয়াংকা বলেন, ইচ্ছা ছিল এবার সরাসরি সাব-ইন্সপেক্টর পদে পরীক্ষা দেব। সেই আশায় ডিগ্রি পাশও করি। তবে এরই মধ্যে আমি চূড়ান্তভাবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য মনোনীত হয়ে গেছি। তাই আর পরীক্ষা দেয়া হয়নি। এখন আমি চাই ডিপার্টমেন্ট থেকেই ধাপে ধাপে প্রমোশন নিতে। আর আজীবন সৎভাবে মানুষের সেবা করে যেতে চাই।
যোগাযোগ করা হলে প্রিয়াংকা দত্তের মা বিজয়া দত্ত এই প্রতিবেদককে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, মেয়েটাকে বিদায় দেয়ার পর আমার বুকটা খালি হয়ে গেছে। বিমানে উঠার সময় মনে হয়েছিল আমার মেয়েটা আমাদের ছেড়ে একেবারেই চলে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমার মেয়ে অবদান রাখছে ভেবে গর্ববোধও করছি আমি।
আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে শান্তি স্থাপন ও শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ শান্তিরক্ষীদের সাথে অনন্য অবদান রেখে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর প্রশংসা অর্জন করেছেন প্রিয়াংকা দত্ত, যা এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচংয়ের জন্য বয়ে এনেছে বিরল সম্মান ও গৌরব।
কঙ্গোতে শান্তিরক্ষা মিশনে পেশাদারিত্ব ও সুনামের সাথে যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেজন্য এলাকাবাসীর দোয়া ও আষীর্বাদ চেয়েছেন প্রিয়াংকা দত্ত।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd