সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০১৯
সাইফুল আলম:: ১৫ ই আগস্ট ১৯৭৫ সাল! ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম ও জগন্য হত্যাকাণ্ডের দিন।এই দিন দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তৎকালীন সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চবিলাশী ও বিপথগামী সদস্যরা হত্যা করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।হত্যা করেছিল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে।একই সাথে হত্যা করেছিল বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট কয়েকজন স্বজনদের।সেদিন জার্মানীতে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনা।বঙ্গবন্ধু সহ সেই দিন শাহাদত বরনকারী সকল সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দু একটি কথা লিখছি।ভূল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বাংলাদেশ পুলিশ সবসময়ই একটি অবহেলিত নাম। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কাল রাতে পাক-হানাদাররা যখন ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে পরিকল্পিতভাবে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঘুমন্ত নিরস্ত্র পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা করে তখন বাঙ্গালী পুলিশ সদস্যরা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অস্ত্র ( ত্রি-নট ত্রি রাইফেল) দিয়ে পাক-হানাদারদের প্রতিরোধ গড়ে তুলে।একরাতেই কয়েকশত বাঙ্গালী পুলিশ সদস্য শহীদ হন।সেইদিন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সকল থানার বাঙ্গালী পুলিশ সদস্যরা থানার অস্ত্রাগার লুট করে সকল অস্ত্র মুক্তিযুদ্ধাদের দিয়ে দেয় এবং নিজেরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। পুলিশের ডিআইজি সহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কয়েক হাজার বাঙ্গালী পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।এত আত্বত্যাগের পরও স্বাধীনতা অর্জনের পর বীরশ্রেষ্ট খেতাবে স্থান হয়নি কোন অকুতোভয় শহীদ পুলিশ সদস্যের নাম। শুধু তাই নয় স্বাধীনতার চার দশকেও পাঠ্য পুস্তকে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদানের কোন স্বীকৃতি পায়নি। দেরিতে হলেও ২০১১ সালে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন।উপযুক্ত স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ নিশ্চয়ই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞ থাকবে।
ইতিহাস বলে যুদ্ধ বিদ্ধস্থ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু যখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন তখন স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র যারা বিশ্বাস করে না সেই সকল দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চক কসতে শুরু করে।তাতে নেতৃত্ব দেয় বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মুস্তাকরা।সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৪ ই আগস্ট দিবাগত রাতে অর্থাৎ ১৫ ই আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর উচ্চ বিলাশী কিছু বিপথগামী সদস্যরা ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হানা দেয়।পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তৎকালীন পিজিআর এর মেজর সুবেদার ওহাব জোযার্দার বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পিজিআর সদস্যদের অস্ত্রের গুলি নিজের জিম্মায় নিয়ে নেয়।ঘাতকরা যখন বঙ্গবন্ধু ভবনে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য হানা দেয় তখন গুলি বিহীন অস্ত্র নিয়ে পিজিআর সদস্যরা ঘাতকদের কাছে আত্বসমর্পণ করে। কিন্তু গেইটে দায়িত্বরত বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরা বঙ্গবন্ধু কে বাঁচাতে তাদের নিকট থাকা ক্ষুদ্র অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে।তখন ঘাতক সেনা সদস্যদের গুলিতে পুলিশের বিশেষ শাখার এএসআই সিদ্দিকুর রহমান শহীদ হন। গুরতর আহত হন ডিএসপি নুরুল ইসলাম।এক পর্যায়ে ঘাতকরা পুলিশের অন্যান্য সদস্যদের বন্দী করে ফেলে। ১৫ ই আগস্ট ট্র্যাজিডিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্নেল জামিল সাহেবের নাম স্থান পেলেও উপেক্ষিত থেকে যায় পুলিশের সিদ্দিকুর রহমানরা।বঙ্গবন্ধু শাহাদত হবার পর তৎকালীন সরকার শহীদ এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের পরিবারকে পেনশন পর্যন্ত দেয়নি। তখন ঐ ট্র্যাজিডিতে গুরতর আহত হয়ে বেঁচে যাওয়া ডিএসপি নুরুল ইসলাম যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী তাকেও ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ফ্রিডম পার্টির সদস্যরা হত্যার চেষ্টা করে যেন ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারে সুবিধা নিতে পারে।
ইতিহাস এ-ও বলে বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার বাংলাদেশ পুলিশ কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং দেশ মাতৃকার সাথে বেঈমানী করেনি।তাইতো ১৯৭৫ সালে পিজিআর গঠনের পূর্ব পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর গার্ড অব অনার থেকে শুরু করে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করে বঙ্গবন্ধুর আস্থায় জায়গা করে নিয়েছিল। যদিও স্বীকৃতির পাতায় বরাবরই বাংলাদেশ পুলিশের অবদান উপেক্ষিত থেকে যায়।বঙ্গবন্ধু ট্র্যাজিডিতে পুলিশের আত্বত্যাগের স্বীকৃতি পাক না পাক বর্বরোচিত এ জগন্য হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত পলাতক খুনীদের রায় দ্রুত কার্যকর হবে এটা আশা করছি।পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ৪৪ তম শাহাদত বার্ষিকীতে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ শহীদ সকল সদস্যদের আত্বার মাগফিরাত কামনা করছি।
লেখক- সাইফুল আলম
অফিসার ইনচার্জ
জেলা গোয়েন্দা শাখা (উত্তর)
সিলেট।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd