এমপি রতন চাঁদাবাজদের গডফাদার’ সুনামগঞ্জে তোলপাড়

প্রকাশিত: ৯:২৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০১৯

এমপি রতন চাঁদাবাজদের গডফাদার’ সুনামগঞ্জে তোলপাড়

এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ মুরাদ। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এমপিকে তিনি বলেছেন ‘চাঁদাবাজদের গডফাদার’। গতকাল বুধবার সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর) আসনসহ সর্বত্র এটি ছিল আলোচনার বিষয়। শামীম আহমদ মুরাদের বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন অবশ্য বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সংরক্ষিত আসনের এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা ষড়যন্ত্র করে এ কাজ করিয়েছেন।’ তিনি দাবি করেন, মিথ্যা বক্তব্য কেবল নয়, এ বক্তব্য ভাইরালের ক্ষেত্রেও ষড়যন্ত্র রয়েছে।

মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা মিলনায়তনে প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ মুরাদ বলেন, ‘আমি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিলাম। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন। কিন্তু সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন আমার বিরোধিতা করেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিলকিছ ও আপন ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনকে বিদ্রোহী প্রার্থী করেন। সাংসদ রতন নির্বাচন প্রভাবিত করায় তার ভাই জয়ী হয়েছেন। দলীয় প্রতীক নৌকার পরাজয় হয়েছে।’

নির্বাচনী এলাকা তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীতে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শামীম আহমদ মুরাদ বলেন, ‘জাদুকাটা নদীতে চাঁদাবাজির খবর পত্রপত্রিকায় এসেছে। এসব চাঁদাবাজির গডফাদার হচ্ছেন সাংসদ রতন। তিনি সব নিয়ন্ত্রণ করেন। বিএনপি-জামায়াতের লোকদের দলে টেনেছেন তিনি। নিজেও নব্য আওয়ামী লীগার। ২০০৮ সালে দলে এসেছেন।’ শামীম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘সাংসদ রতন ২০০৮ সালের আগে আওয়ামী লীগ করেছেন- এটা প্রমাণ করতে পারলে আমি জুতার মালা গলায় দিয়ে দল থেকে বের হয়ে যাব।’

শামীম আহমদ মুরাদ যখন এসব বলছিলেন, তখন সভামঞ্চে বসে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান প্রমুখ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের জেলা সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মতিউর রহমান। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সব উপজেলাসহ উপজেলার সমমানের ১৪ ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ৮৮ ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

শামীম আহমদ মুরাদের এ বক্তব্যের ভিডিও তাৎক্ষণিক ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে। বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ বক্তব্যের আংশিক ছাপা হয়। নিজের সাবেক পিএসের এমন বক্তব্য গতকাল বুধবার ছিল সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নিজ নির্বাচনী এলাকাসহ সুনামগঞ্জ শহরে আলোচনার বিষয়। তবে এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কোনো কর্মসূচি বা বিবৃতি দেননি দায়িত্বশীল কোনো নেতা।

ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস অবশ্য জানিয়েছেন, তারা শামীম আহমদ মুরাদের বক্তব্য আমলেই নেননি। সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, শামীম আহমদ মুরাদকে দিয়ে এ বক্তব্য দেওয়ানো এবং পরে বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট-সুনামগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহ্‌রিয়ার এ কাজ করিয়েছেন। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যের স্বামী শাহরিয়ার বিপ্লবও এ ষড়যন্ত্রে যুক্ত। উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কারও এ প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার কথা নয়। অথচ তিন নম্বর যুগ্ম সম্পাদক মুরাদকে ওখানে বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে। শামীম আহমদ মুরাদ কখনোই আমার ব্যক্তিগত সহকারী ছিল না। সে পেট্রোল বিক্রির দোকানদারি করত। পরে তাকে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পায়েল ট্রেড করপোরেশনে চাকরি দিয়েছিলাম। সে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে আমার পিএস পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করত বলে আমি গত জানুয়ারি মাসেই তাকে চাকরিচ্যুত করি। আমি ব্যথিত, মর্মাহত- দোষ না করেও দোষী বানানোর চেষ্টা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘যুগ্ম সম্পাদক সবাই একই সম্মানের। গঠনতন্ত্রে এক, দুই বা তিন নম্বর সম্পাদক উল্লেখ নেই। রতনের বিরুদ্ধে আসলে ষড়যন্ত্রের কিছু হয়নি।’

সূত্র-সমকাল

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..