সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:২৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০১৯
সিলেটে র্যাব-পুলিশের ভূয়া এসপি,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মেজর, কর্ণেল পরিচয়ে গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট।
এ সকল সিন্ডিকেট বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন করে সাধারণ মানুষজনের কাছে চাঁদা দাবি ও নানা ধরণের হুমকী প্রদান করে আসছে। ইতিপূর্বে কয়েকজন পুলিশের ভূয়া কর্মকর্তাদের আটকও করেছেন পুলিশ ও র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৯ এর সদস্যরা। তবুও থেমে নেই ওই সিন্ডিকেটের প্রতারণা।
সোমবার সকাল ১১টা ৪২ মিনিটে র্যাব’র এসপি মেহদি পরিচয়ে এক পাথর ব্যবসায়ির কাছে ফোন করে হুমকী ও চাঁদা দাবি করা হয়।
তিনি এ বিষয়ে সোমবার বিকালে র্যাব-৯ এর কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন। এর আগে গত শনিবার কুলাউড়ার বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাঈদ খাঁন শাওনের কাছে র্যাব-৯ এর ক্যাপ্টেন মাছুম পরিচয়ে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে তিনি র্যাব-৯ এর কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানতে পারেন ক্যাপ্টেন মাছুম নামের কেউ র্যাব-৯ এ নেই।
পাথর ব্যবসায়ি খালেদ শাহ র্যাব-৯ এ দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করেন, সোমবার ১১ টা ৪২ মিনিটে ০১৮৪৬-২৫১৫৬৫ নাম্বার থেকে তার ছোট ভাই শাহ ওলিদের মোবইলে ফোন আসে, ওর কাছ থেকে খালেদের কথা জিজ্ঞেস করে বলে তিনি ফোন করার জন্য।
তখন তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার থেকে ওই নাম্বারে ফোন করেন। ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে র্যাব হেডকোয়ার্টার ঢাকার এসপি মেহদি পরিচয়ে কথা বলা হয়। ওই এসপি পরিচয়দানকারী বলেন, পাথর ব্যবসায়ি ও তার চাচার নামে অভিযোগ রয়েছে।
তাই সপ্তাহ ১০ দিন মোবাইল বন্ধ রাখবেন, আর বাড়িতে থাকবেন না, যে কোন সময় র্যাব গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। আর বাঁচতে হলে ওই এসপির সাথে অন্য নাম্বারে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার কথা বলা হয়। ওই পাথর ব্যবসায়ি বিষয়টি তার খালাতো ভাই এক সাংবাদিকের সাথে আলাপ করেন।
তাৎক্ষনিক ওই সাংবাদিক এসপি’র নাম্বারে যোগাযোগ করে তার পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চান। কিন্তু ৩০ সেকেন্ড কথা বলার পর আর কোন কথা বলেননি ওই এসপি পরিচয়দানকারী। পরে বিকাল ৩টা৫৭ মিনিটে ওই এসপি পরিচয়দানকারি তার নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে সাংবাদিককে অকথ্য বাষায় গালাগাল করেন ও মামলার ভয় দেখান।
আর বলেন যে, এ ব্যাপারে বেশি বাড়াবাড়ি করা যাবে না। ওই এসপি পরিচয়দানকারী যেভাবে বলবেন, সেভাবে কথা শুনতে হবে।
খালেদ শাহ তার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, ওই ফোনের পর থেকে সে ও তার পরিবারের লোকজন ভীতিকর অবস্থায় রয়েছেন।
অপরদিকে, গত শনিবার কুলাউড়ায় সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক সাঈদ খাঁন শাওন।
তার সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার কিছু পরেই ০১৩০৩৮৬৬৯৫৭ নাম্বার থেকে শাওনকে ফোন করা হয়। তখন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে র্যাব-৯ এর ক্যাপ্টেন মাছুম পরিচয়ে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। তাৎক্ষনিক শাওন বিষয়টি বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুলাউড়ার শরিফ আহমদকে অবহিত করেন। শরিফ আহমদ পরে র্যাব-৯ এর কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানতে পারেন ক্যাপ্টেন মাছুম নামের কেউ র্যাব-৯ এ নেই।
এদিকে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে এক প্রতারককে গ্রেফতার করে পুলিশ। গভীর রাতে ওসমানীনগর থানার রাউতখাই গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামাল মিয়ার বাড়ি থেকে ওই ভুয়া এডিশনাল এসপি কে আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃত প্রতারক আবু বকর শাকিল ওরফে নাজমুল শাকিল চাঁদপুর সদর উপজেলার আমজদ আলী (দাসপাড়া) এলাকার আবুল হোসাইন ঢালী’র ছেলে।
তখন সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়, এএসপি পরিচয়দানকারি ওই ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে নিজেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের নজরে আসলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম আল মামুন এর নেতৃত্বে অফিসার ফোর্সসহ প্রতারক ব্যক্তির অবস্থানে পৌছে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ব্যাপক ধারাবাহিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা নয় এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যে নিজেকে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়েছে বলে স্বীকার করে। আর গত ৩ মার্চ সিলেটের মেজরটিলা থেকে ভূয়া সিআইডি’র এএসপি/এসপি/এডিসি/কর্ণেল/মেজর আটক করা হয়। আটককৃতের নাম চিন্তাহরণ উরফে শান্ত বিশ্বাস।
বাড়ী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। তিনি হিন্দু হলেও পরিচয় দিতেন মুসলমান বলে। পেশা তার বেকার সুন্দরী নারীদের চাকুরী দেওয়া। শিক্ষিকাদের বদলী করা। পুলিশে চাকরি দেওয়া।তিনি সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইলের দায়িত্ব পালন করতেন।
তবে এসপি অফিসস্থ সিআইডি অফিসে কখনো বসতেন না। মেজরটিলায় নিজের বাসায় বানিয়ে ছিলেন সিআইডি অফিস। ওই সময় সিআইডিতে গোপন খবর আসে, কথিত এসপি মেজরটিলায় চাকুরী সংক্রান্ত মিটিং করছেন। তখনই সিআইডির বিশেষ টিম নামে অভিযানে। আটক করে কথিত সিআইডির এসপিকে। ওই সময় তার বাসা থেকে বাসা থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক সিভি/ বায়োডাটা উদ্ধার করে সিআইডি। এ বিষয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা হয়েছে যাহার নং ৩(৩)২০১৯ইং।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, এ সকল ব্যপারে পাবলিককে সচেতন হতে হবে। আর বিচলিত না হয়ে আইনশৃংঙ্কলা বাহিনীর দারস্থ হয়ে বিষয়টি অবগত করতে হবে। তিনি আরো জানান, অনেক ভূয়া কর্মকর্তারা ইতিপূর্বে গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের শাস্তি নিশ্চিত হলে এধরণের কান্ড কেউ করতে সাহস পাবে না।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশের অরিজিন্যাল কোন এসপি র্যাঙ্কের কেউ সাধারণত জনগণের সাথে ফোন করে হুমকী বা টাকা পয়সা চায় না। তাই এসকল ব্যাপারে সাধারণ জনগণের কাছে কোন ফোন বা হুমকী গেলে তাৎক্ষনিক স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে আইনি প্রতিকার চাইতে পারেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল-মুসা জানান, পুলিশের সাধারণত ০১৭১৩ অথবা ০১৭৬৯ সিরিয়েল নাম্বার থাকে। এর বাইরে যদি কোন নাম্বার থেকে কেউ ফোন দেয়, তাহলে তাৎক্ষনিক স্থানীয় থানাকে অবগত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরও জানান, পুলিশের কেউ ফোন দিলে প্রথমেই তার নাম, পদবি ও অবস্থান সর্ম্পকে জানানো হয়। তাই এর বাইরে কোন ধরেণের ফোন জনগণের কাছে গেলে বিছলিত না হয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
র্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রশাসনের কর্মকর্তা পরিচয়ে ভূয়া পরিচয়দানকারীদেরকে গ্রেফতারে তৎপর রয়েছেন র্যাব। আর কেউ যদি র্যাব-৯ এর পরিচয় দিয়ে ফোন করে টাকা পয়সা চায় বা হুমকী প্রদান করে, তাহলে তাৎক্ষনিক বিষয়টি র্যাব-৯কে অবগত করা দরকার।
সূত্র- সিলেট সান
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd