সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৩৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০১৯
এদিকে, দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পৌরসভা ঘোষণার সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর মাঝে বিরাজ করছে আনন্দের বন্যা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক আনন্দ সভা অনুষ্ঠিত হয় ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
বিশ্বনাথ উপজেলার অনেক লোক প্রবাসে থাকেন। এ কারণে এ উপজেলা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। সিলেটের কয়েকটি উপজেলা দীর্ঘদিন আগে পৌরসভায় উন্নীত হলেও এ থেকে বঞ্চিত ছিল বিশ্বনাথ। জাতীয় সংসদের ২৩০ নং আসন হচ্ছে সিলেটে-২ হিসেবে পরিচিত বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা। এই আসনে ১১টি সংসদ নির্বাচনে বিশ্বনাথের ৫ জন প্রার্থী ৬ বার নিজ যোগ্যতাবলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং এ সকল নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দেশের অন্য অনেক সাধারণ সংসদ সদস্যদের মত নন। তাদের প্রভাব, যোগ্যতা ও দল এবং দলীয় প্রধানের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও ছিলো ব্যাপক। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক উন্নয়ন হলেও পৌরসভাসহ কিছু মৌলিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থাকেন বিশ্বনাথবাসী। ফলে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক রাজস্ব প্রদানকারী উপজেলাবাসী ও রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স প্রদানকারী প্রবাসী বিশ্বনাথীদের মনে বিরাজ করে ক্ষোভ। তবুও বিশ্বনাথে পৌরসভা বাস্তবায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ দাবিসমূহ পূরণের প্রত্যাশায় আশায় বুক বেঁধে থাকেন উপজেলাবাসী।
১৯৯৬ সালে স্থানীয়রা বিশ্বনাথ পৌরসভা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। পৌরসভার দাবিতে তখন একাধিক সভা-সমাবেশ সহ সরকারের উপর মহলে স্মারকলিপি প্রদান করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ বিশ্বনাথকে পৌরসভা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই সময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিশ্বনাথকে পৌরসভায় রূপান্তর করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০০ সালেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সীমানা নির্ধারণ, প্রশাসনিক কার্যক্রমের আনুষাঙ্গিক রোডম্যাপ তৈরি সহ বিভিন্ন বিষয়াদি গুছিয়ে আনা হয়। তৎকালীন সংসদ সদস্য শাহ আজিজুর রহমান এক অনুষ্ঠানে দৃঢ়চিত্তে বলেছিলেন, এ সরকারের আমলেই বিশ্বনাথকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হবে। অবশ্য তার ঘোষণা পর্যন্তই থেমে পড়েছিল এটি। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী এম. ইলিয়াস আলী একাধিক জনসভায় পৌরসভাকে নির্বাচনী ইস্যু করে নির্বাচিত হলে পরবর্তীতে তিনিও এ প্রতিশ্রুতি অন্যদের মতো ভুলে যান। সেই সময়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট পৌরসভায় উন্নীত হলেও বিশ্বনাথ থেকে যায় অবহেলিত।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীও চেষ্টা করেন বিশ্বনাথকে পৌরসভায় উন্নীত করার। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া এমপি নির্বাচিত হয়ে পৌসভার ঘোষণার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন এবং ২০১৫ সালে পূর্বের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়ার অনুরোধে পুনরায় খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। ওই খসড়া প্রস্তাবে স্থানীয় সরকারের আইনে পৌরসভার জন্য যে প্রয়োজনীয় সুবিধাসমূহ থাকার কথা রয়েছে, তার প্রায় সবকয়টি প্রবাসী অধ্যুষিত প্রস্তাবিত বিশ্বনাথ পৌরসভায় বিদ্যমান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব কাজ সম্পন্ন করে অনুমোদনের জন্য ফাইল উপযোগী করে পাঠানো হলেও ফাইলে ত্রুটি থাকায় তখন পৌরসভা ঘোষণা হয়নি। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বৈঠক করেন ইয়াহইয়া চৌধুরী। তখন তিনি খসড়া প্রস্তাবনার ফাইলটি ত্রুটিমুক্ত করে যা যা করণীয় তা করে এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় প্রস্তাবনা প্রেরণ করতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব কাজ সম্পন্ন করে অনুমোদনের জন্য উপযোগী করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পুনরায় ফাইল পাঠানো হয়। ওই খসড়া প্রস্তাবনায় পৌরসভা এলাকার ভিতরে প্রায় ৫০ হাজার জনশক্তি বসবাসের ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয় সীমানা। এরপর পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-২ থেকে বিশ্বনাথকে ‘শহর’ হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ গেজেট রেজিস্ট্রার নং ডি এ-১ প্রকাশিত বিশ্বনাথ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ২২টি মৌজা নিয়ে এ গেজেট প্রকাশ করা হয়। মৌজাগুলো হলো- বিশ্বনাথ ইউনিয়নের আহমদাবাদ মৌজা, পূর্ব জানাইয়া মৌজা, বিদাইলসুপানি মৌজা, কানাইপুর মৌজা, মজলিস ভোগশাইল মৌজা, চান্দসিরকাপন মৌজা, মিরেরচর মৌজা, মশুল্লা মৌজা, সেনারগাঁও মৌজা, ধোপাখোলা মৌজা, তাজপুর মৌজা। দেওকলস ইউনিয়নের আলাপুর মৌজা, ধোপাখোলা মৌজা, দত্তা, অলংকারী ইউনিয়নের পূর্ব জানাইয়া, কামালপুর, ভাগমতপুর, অলংকারী, দৌলতপুর ইউনিয়নের দূযার্কাপন, চরচন্ডি ও রামপাশা ইউনিয়নের পশ্চিম জানাইয়া, মশুল্লা। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সচিব কমিটির সভা, মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদন হয় এবং প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় অনুমোদনের অপক্ষোয় থাকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে গতকাল সোমবার প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় বিশ্বনাথ পৌরসভা’র অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে প্রায় ২ সহ¯্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রায় ৫ সহ¯্রাধিক আবাসিক বাসা-বাড়ি রয়েছে। বিশ্বনাথবাজার থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইজারা পাওয়া যায়। পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হলে সরকার যেমন বছরে কোটি টাকার রাজস্ব পাবে, তেমনি এ উপজেলার মানুষজনও পাবেন তাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়নের ছোঁয়া। বন্ধ হবে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বাসা-বাড়ি নির্মাণ, সমাধান হবে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংকটের। উপজেলা সদরের যত্রতত্র থাকবে না ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। পাশিপাশি বিশ্বনাথে গ্যাস পৌঁছবে এমনটাই আশাবাদী উপজেলাবাসী।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্ণালী পাল বলেন, আমি শুনেছি ‘পৌরসভা’র অনুমোদন হয়েছে। তবে এখনো অফিসিয়ালভাবে কোনো তথ ্য পাইনি।
এদিকে, বিশ্বনাথ পৌরসভা ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খান বলেন, এটি আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ। অবহেলিত বিশ্বনাথকে পৌরসভা’য় উন্নীত করায় বাংলার সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীকে বিশ্বনাথবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর বৃহত্তম এই দাবিটি পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি এই পৌরসভা করার লক্ষ্যে যারা বিভিন্নভাবে কাজ করেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে আজ বিশ্বনাথবাসীর দীর্ঘদিনের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd