সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০১৯
অনেক ধর্মাবলম্বীর মানব মানবীরাই প্রথমে পৃথিবীতে এসেই শুরু করলেন ভাল-মন্দের খেল। কেউ কেউ আবার আসারও আগেই ঘটিয়েছিল ঘটনা। তবে সেই মানব-মানবী পথ ধরে আজকের শাখা প্রশাখায় বা বিভিন্ন ধর্ম মতেই এ মানুষ, তারা নিজেরা যেমন অন্যকে ঠিক তেমনি মনে করে। মানুষ হিসেবে যে ভালো, সে অন্য মানুষের মন্দ দিকটি ঢেকে রেখে ভালো দিকটি তুলে ধরে। আর যে মানুষ নিজে মন্দ, সে অন্যের ভালো দিকটির পরিবর্তে মন্দ দিকটিই তুলে ধরে। মুলত এভাবেই মানুষ তার প্রকৃত রূপটি প্রকাশ করে।জীবনযাপনে সর্বক্ষেত্রেই এক একটা সময়ের অনেক গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। সময়ের সঙ্গে যেমন বদলে যায় সব কিছু, ঠিক তেমনি অনেক বেশিই পরিবর্তন হয়, যেমন: দৃঢ় হয় মানুষের ভাবনা, বিশ্বাস কিংবা উদ্যম। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কিংবা দশকের পর দশক এ মানুষরাই অতিক্রান্ত করে অনেক কিছু। ঘুষ-দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, জীবনের চাহিদায় অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষান্তে কর্মসংস্থান, প্রয়োজনে নানাবিধ আইন কানুন কিংবা তার প্রয়োগ এবং অপ্রয়োগ প্রায় সব গুলোই প্রত্যক্ষ করছে মানুষ। সেই মানুষ গুলো ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দেখা যায় যে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী কিংবা ধর্মাবলম্বীর মানুষের মধ্যেই কম হোক বা বেশিই হোক সবকিছুতেই যেন অবক্ষয়ের মাত্রাটা লক্ষ করা যায়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝেই কিছু মানুষ নিরাবতায় থাকে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকট অস্থিরতা তাদের মাঝে বিরাজ করে। যুগে যুগে এই অস্থিরতা সৃষ্টিকারীরাই যেন উপঢৌকন প্রাপ্তির জন্য অথবা লোভ-লালসার আশায় হয়তো এমন কাজ গুলো করে আসছে। সত্তর হাজার বছর আগেও মানুষ ছিল প্রাণী জগতের মধ্যে বন্যপ্রাণীর মতো আবারও সেই মানুষের মতোই মানুষ হিংস্র হয়েই উঠছে। দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ, কবি সাহিত্যিক, সাহিত্য সংস্কৃতি, ছাত্র শিক্ষক, মওলানা মুন্সী, কর্মকর্তা কর্মচারী, গ্রগতিশীল সুশীল নাম ধারী মানুষ, অনেক বড় বড় গডফাদার বা দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিবিদ কিংবা আমলারাই যেন তার মধ্যেই পড়ে। তাঁরা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ এমন ভাব দেখিয়ে চলে, আবার সুযোগ পেলেই অন্যকে অকপটে দোষ দেওয়ারও প্রবণতা সৃষ্টি করে।
বন্য মানুষের বিচরণ ও সীমাবদ্ধ ছিল কেবল মাত্রই যেন আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে আর এখন সেই সব মানুষের মতো মানুষ হিংস্র হয়ে উঠছে সারা বিশ্বে। অবশ্য সেই সময়ের পরে ধীরে ধীরে সমস্ত পৃথিবীর শাসক হয়েছিল। কিন্তু এখনকার মানুষ নিজেই ঈশ্বর হয়ে উঠার দ্বারপ্রান্তে, চিরজাগ্রত তারুণ্যকে কেবল গ্রাসই করতে চাচ্ছে না, সৃষ্টি কিংবা ধ্বংসের মতো স্বগীর্য় ক্ষমতা গুলোকেও নিজের আয়ত্তে আনার জন্যই বদ্ধপরিকর। জানা যায় যে, প্রাণী কুলের মধ্যে এমন মানুষরাই ধীরে ধীরে সামাজিক জীব হয়ে উঠে, পৃথিবীর শুরুতে এই মানুষ এতোটা চতুরও ছিল না। তারা সকল প্রাণীর চেয়েও তীক্ষ্ম এবং গভীর বুদ্ধি সম্পন্ন ছিল তা স্বীকার করতেই হয়। জীবতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এমন মানুষেরাই পৃথিবীতে প্রাণী কুলের মধ্যেই যেন বংশ বিকাশে কৌশলে চৌকশ ছিল, বলা যায়, প্রাণী কুলের একটি পরিপূর্ণ রূপ এই মানুষ। সুজন-কূজন, ভালো-মন্দ সব ধরণের মানুষকে নিয়েই তাদের হয়ে উঠে মানব সংসার। এমন প্রাণী জগতের একমাত্র মানুষই বিবেক সম্পন্ন আর আস্তে আস্ত কথা বলতেও সমর্থ হয়। কিন্তু এই পৃথিবীতে তাঁরা প্রথমেই বনে জঙ্গলে, গাছের নিচে কিংবা বিভিন্ন গুহায় বসবাস করে আসছিল। সেই মানুষ ধীরে ধীরেই পছন্দ মতো নিজস্ব পরিবার গঠন করে, গোষ্ঠী বা সামাজিকতা তৈরি করে ফেলে। চৌকশ বুদ্ধি দিয়েই তাঁরা সেই আদি কাল থেকেই নানান কর্ম করে আসছে। তখনকার যুগকে এখনকার মানুষরা বলছেন, তখন ছিল বর্বর বা অসভ্য যুগ। কিন্তু জানা যায় যে, সেখান থেকেই তো এমন মানুষের বংশ বিস্তারের সৃষ্টি। এখনও কি সেই মানুষই ফিরে আসছে। এই সময়ের মানুষের অর্জিত বিপুল ক্ষমতা মানুষের জন্য নিয়ে এসেছে কান্না-হাহাকার এবং ধ্বংসযজ্ঞ। মানুষের নিজের মানসিকতার উন্নতি যেন হয়ই নি, বরং মানুষের কারণেই দিনে দিনে বাড়ছে মানুষের মৃত্যু এবং অন্যান্য প্রাণীর জীবন ক্রমাগত দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
আরো জানা দরকার আছে এমন মানুষ সম্পর্কে, সৃষ্টি কর্তা মনের মাধুরী দিয়েই যেন আদমকে সৃষ্টি করে তাঁর সঙ্গী হিসাবে হাওয়াকে সৃষ্টি করে দিলেন। এই মানব আর মানবী ভুল করেই পৃথিবীতে এলেন। কিন্তু কি ভুলে তাঁরা এলেন সে দিকে আর যেতেও চাই না। বলতে চাই যে, মানব জাতির পিতা আদম (আ:) ও মাতা হাওয়া (আ:) থেকেই তো মুসলমানরা বলছেন মানব জাতির সৃষ্টি। আসলে এ আলোচনায় বিস্তারিত জানানো না গেলেও বলতেই হয়, হযরত আদম (আ:) ও বিবি হাওয়া (আ:) উভয়ে জান্নাতের মতো সুুুুসজ্জিত এক বাাগানে বসবাস করে ছিল। আর সেখানেই নাকি পিছু লাগলো এক ‘ইবলিশ’ নামক পাপিষ্ঠ শয়তান। তাঁর প্ররোচনায় পড়ে বা ভুল করেই এই পৃৃথিবীতে উভয়ে এলেন। তাদের জোড়ায় জোড়ায় সন্তান জন্মের শুরুতেই হযরত আদম ও হাওয়া (আ:) পৃথিবীতে প্রথম প্রজনন ও বংশ বিস্তারে বিবি হাওয়া (আ:) যমজ একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। তখন ভাই বোন ছাড়া হযরত আদম (আ:) এর আর কোন সন্তান ছিল না। পরে আরো একটি পুত্র ও কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করান। এখন বংশ বিস্তারের জন্য আল্লাহ তাআলার নির্দেশেই প্রয়োজনের তাগিদে একটি নির্দেশ জারি করলেন যে, ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ করতে পারবে না সেহেতু একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা সন্তান তাঁরা পরস্পর সহোদর ভাই বোন বলেই গন্য হবে আর পরবর্তী গর্ভ হতে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্যে সম্পর্ক প্রথম গর্ভ হতে জন্মগ্রহণকারী কন্যা সহোদরা বোন হিসেবেই নাকি তাঁরা গন্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটা ছিল বৈধ। কিন্তু ঘটনাচক্রে কাবিলের সহজাত সহোদরা বোনটি ছিল পরমা সুুুন্দরী এবং হাবিলের সহজাত বোনটি ছিল কুশ্রী এবং কদাকার। বিবাহের সময় হলে শর’য়ী নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহজাত কুুশ্রী বোন কাবিলের ভাগে পড়লো। এতেই কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রু হয়ে গেল। কৌশলী এই জেদ আমার সহজাত বোনকেই আমি কাছে পেতে চাই এবং তাকে আমিই বিবাহ করবো। আর হযরত আদম (আ:) তাঁর সৃষ্টি কর্তা কিংবা শরীয়তের আইন অনুযায়ী কাবিলের আবদার প্রত্যাখান করলেন। এখানেই ঘটনার শেষ হবার নয়, একপর্যায়ে ঘটিয়ে ফেলে কাবিল এক ভয়ানক মৃত্যু, মানে কাবিলের হাতেই হয়ে যায় হাবিলের মৃত্যু। কারণটা হলো তাঁদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে। বলাই যায় যে, কাবিলের নারীর রূপ সৌন্দর্যের প্রতি ছিল লোভ লালসা। এই আলোচনায় তাদের ঘটনাটিকে অনেক দীর্ঘ না করেই বলা প্রয়োজন যে, মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই ইতিহাসের শিক্ষা দিয়ে মন্দ মানুষ আর ভালো মানুষকে বুঝতেই একটি উদাহরণ। কিন্তু অন্যান্য জাতি ও গোষ্ঠীর মানুষরা এমন এই ইসলাম ধর্মের আলোকে বিশ্বাস করবেন।
আসলেই এখানে মানব জাতির বিশ্বাস অবিশ্বাসের একটি তর্ক বিতর্ক, মানা না মানার এক বৃহৎ সংঘাত। কারণটা এই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মুখেই শুনা যায় যে, তাদের আদি মানব মানবী “এডাম ও ইভ”। কিন্তু মুসলিমরা বলছেন আদম (আ:) কেই “এডাম” বলছেন। আর হাওয়া (আ:) কে “ইভ” নামে তাঁরা স্মরণ করছেন। এখানেই এই মানব জাতির তর্কের শেষ হবার নয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও বলছেন, প্রথম আদি সৃষ্টি মানব “মহর্ষি মনু” আর প্রথম মানবী হচ্ছে “শতরূপা”। তারাও বিশ্বাস করেন, এক পুরুষ আর এক নারীর মাধ্যমেই মানব জাতির সৃষ্টি। আসলেই কি হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ কিংবা মুসলমান দিয়েই এ আলোচনা শেষ করা সম্ভব। হয়তো বা সম্ভব নয়? মৌলিক চারটি ধর্ম দিয়ে আলোচনাকে দাঁড় করানোতে গিয়েই চলে আসছে আরো ধর্ম। তাঁদের ধর্মের মধ্যেও ছিল সংঘাত, ধর্ষণ, মৃত্যুর মতো অজস্র কাহিনী। সুতরাং বর্তমানের এই মানুষ কি পিছনের দিকেই ফিরে যাচ্ছে। একটু পরিস্কার আলোচনা না করলেই নয়, এই মানুষ সৃষ্টির রহস্য বা ধর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ ভাবে না জানতেও এক সময় জেনে ছিলাম যে, শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ (সা:)। আরো ধীরে ধীরে আরও জানা যায় যে, অন্যান্য ধর্মেরও প্রবর্তকও আছে। খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক “যীশু খ্রিষ্ট বা ঈসা নবী”, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক “গৌতম বুদ্ধ”, তাঁর আগেও ইহুদি ধর্মের প্রবর্তক “মুসা”। আবার হিন্দু ধর্মের প্রবর্তক ছিল “ভগবান শ্রীকৃষ্ণ”। এই প্রবর্তকের হাত ধরেই ধর্মের শৃঙ্খলা বা মানুষ জীবন যাপনের পূর্ণ বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল। তখন ছিল অসভ্য বা বর্বর যুগ থেকে বাহির হয়ে সভ্য যুগে পদার্পণ করার জন্যেই মানুষের আপ্রাণ চেষ্টা। কিন্তু বর্তমানের মতো তখন তো কোনো শক্তিশালী আইনও ছিলো না। এই সকল প্রবর্তক ছাড়া তখন সেই রকম দুর্নীতিবাজ বা অন্যায়কারীর কোনো বড় গোষ্ঠী কিংবা কোনো বড় অসাধু নেতাও ছিলো না। ছিল শুধু মাত্রই ধর্মের প্রবর্তক আর তাদের কথাতেই নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজে যথারীতি চলতো ঈশ্বর প্রদত্ত বা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একমাত্র আইন। আস্তে আস্তেই এমন আইনের পাশা পাশিই তাদের গভীর সম্পর্কের মধ্যেই যেন সমগ্র পৃথিবীর মানুষজন ব্যক্তিগত ধন-সম্পদের চাহিদা বাড়াতে শুরু করে। উদ্ভব হওয়া বিভিন্ন ‘ফসল’ এই মানুষরাই চিহ্নিত করে এবং তা অরো বেশি ফলন ঘটিয়ে খারাপ চাহিদা পূরণ করতেও শুরু করেছিল। মানুষের চিন্তা চেতনার মাত্রা দিনে দিনেই যেন বাড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু আজকের এই মানুষ কেন এমন চিন্তা চেতনা থেকে দূরে সরে পড়ছে। শুধুই কি নিজের আমিত্ত্ব বা লোভ লালসাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। পৃথিবী জোড়া অনেক গুলো প্রচন্ড ক্ষমতাবান বা অতৃপ্ত এবং দ্বায়িত্ব জ্ঞানহীন ঈশ্বররূপী মানুষ নিজেরাই জানে না কী যে চায়, তাদের চাওয়ার শেষটাই কোথায়।
জানা যায় যে, এক সময় মানুষ বন্যপ্রাণীকে ব্যবহারে ফসল উৎপাদন ও তাদের খাওয়ার প্রক্রিয়া শিখে নিতো, পাশাপাশিও এই মানুষ জন হারাম হালাল কিংবা তাদেরকে কোনো কোনো ধর্মাবলম্বীরাও যেন নিজ পুজা অর্চনার ভিতরে প্রবেশ ঘটিয়ে আদর্শের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। তাদের মৃত্যুও চায় নি। কিন্তু এখন পাষন্ড পিতা কি করেই নিজের সন্তানকে পশুর মতো জবাই করছে। আসলেই ইতিহাসে যা হয়েছিল তাতো স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার নির্দেশেই হয়েছিল। এমন পাষন্ড গুলোর কে নির্দেশ দাতা হয়। অতীতে এ মানুষের আচার-আচরণ নির্ধারিত হয়েছিল বিভিন্ন ধর্মীয় অবকাঠামোকে লালন করে। তাদের চিন্তা, আবেগ, ইচ্ছা এবং সামাজিক ও প্রাকৃতিক নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞানের স্তরের দ্বারাই। মানুষের সঙ্গে প্রাণী জগতের বিভিন্ন সদস্যদের মূল পার্থক্যটা হলো, মানুষ প্রকৃতিকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করে ছিল, যা অন্য যেকোনো প্রাণীরা তা পারেনি। মার্কসীয় মতে, মানুষের চেতনা, আধ্যাত্মিকতা এবং বিচিত্র ধরনের শ্রমের হাতিয়ার ব্যবহার এবং বন্যপ্রাণী ব্যবহার করার ক্ষমতা সবকিছুই হলো সামাজিক শ্রমের ফসল। যখন থেকে মানব সভ্যতার সূচনা, তখন থেকেই রয়েছে মানব ধর্ম। সেই ধর্ম আজকের মতো এত প্রাতিষ্ঠানিকও ছিল না। যা যুগে যুগেই যেন বিকশিত হয়েছে, রূপান্তরিত হয়েছে, পরিবর্ধিত, পরিমার্জিত বা বিলুপ্ত হয়েছে। অনেক ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়েই যেন এসেছে বিভিন্ন ধর্ম ও মানুষ। আজও এই পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মানুষের জীবন যাপন বা তাদের পরলৌকিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বর্তমান পৃথিবীতে বিদ্যমান ৪৩০০ ধর্মের বাইরেও একটি ধর্ম রয়েছে যার অনুসারী প্রধান ৪টি ধর্মের মতোই বলা যায়। সেটি হলো ধর্মনিরপেক্ষ বা নাস্তিক মানুষজন, যাদের সংখ্যা ১২০ কোটিরও বেশি। এর বাইরে বিভিন্ন ধর্মের আকার নির্ধারণ করা হয় সেই ধর্মের অনুসারী সংখ্যার বিবেচনায়। মানুষ সৃষ্টিগত ভাবে যেমন রঙ-চেহারায় আকার-আকৃতিতেও বিচিত্র, যেমনটি মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা, কাজ-কর্মে এবং ধর্মীয় মতাদর্শেও বিচিত্র। কারো কারো মধ্যে পাশবিকতার প্রাধান্য কারো মধ্যে মানবিকতার প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। এককথায় নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ, নির্দোষ মানুষ যেমন পাওয়া কঠিন তেমনি প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু সুন্দর বা ভালো দিক রয়েছে। আর তার হয়তো প্রয়োজনও রয়েছে। কারণ, ভালো না থাকলে মন্দ চেনা যেত না। অনুরূপ মন্দ না থাকলেও ভালোত্ব বুঝা যেত না। ভালো-মন্দ আছে বলেই আমরা একটিকে অন্যটিকে সাথে তুলনা করে নিজেকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করি, পাশবিকতা পরিহার করে মানবিক বোধ অর্জনের চেষ্টা করি। কিন্তু সমাজে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের কাজই হলো পরচর্চা, পর নিন্দা, পর ছিদ্রোন্বেষণ করা, অন্যের দোষ-ক্রটি খুঁজে বের করা। তারা নিজেরা যেমন মন্দ চরিত্রের অধিকারী অন্যকে তেমনি মন্দ চরিত্রের মনে করাও তাদের কাজ।
বর্তমান পৃথিবীতে মানব সভ্যতার জয়জয়কার ঘোষিত হলেও তার মাঝে অনেক দুর্নীতি নামক কীট বাসা বেঁধেছে। শট, অসৎ ও প্রচারমুখী মানুষ আজ নেতৃত্বের আসনে। এ ক্রান্তিকালে মহৎ ও মঙ্গলকামী মানুষেরা নির্বাক, জ্ঞান ও আলোকিত জনও যেন অন্ধ। মানব সভ্যতার ব্যাপক বিকাশ সাধিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে। ফ্যাসিবাদের উদ্ভবে মানসিক সম্পর্কের অবনতি এবং সততার অভাব দেখা দিয়েছে। বিদগ্ধ মানুষকে এমন অবস্থা ভীষণ ভাবনায় ফেলেছে। মানুষ আজ তার নৈতিকতা ছুঁইয়ে লাজ-লজ্জারও মাথা খেয়েছে। যুদ্ধ-বিগ্রহ, ক্ষুধা, রোগশোকে একদিকে সাধারণ মানুষরাও কষ্ট পাচ্ছে অন্যদিকে নেতৃত্বাধীন কালো টাকাধারী নেতাদের ঘরে চলছে সুখের উৎসব। বিপন্ন মানুষকে যেন দেখেও দেখে না। মানুষের হৃদয়ে নীতিবোধ ও মমতা যেন লোপ পেয়েছে। যাদের শরীরে চর্মচক্ষু কার্যকর তাদের মনের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। তাই তারা ভালোমন্দের ব্যবধান ভুলে গেছে। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের আলোকরশ্মি তাদের অন্তরে প্রতিফলন হয় না। অথচ মূর্খ, অসৎ লোকেরাই পৃথিবীর পরিচালক। কিন্তু ইতিহাস বলছে প্রতিটা ধর্মের প্রবর্তক বা পরিচালক এমন ছিল না। আজকের এই পরিচালক গুলো প্রকৃত সত্য ও সুন্দরকে জানে না, অন্তরে কোনো গভীরতা নেই, প্রতিনিয়ত মানবতাকে পদদলিত করতে কুন্ঠিত হয় না।
তারা যেন সেই অন্ধকার যুগে ফিরে যাওয়া এক একটি বর্রবর যুগের মানুষ। জ্ঞানী ও বিচক্ষণ মানুষের কাছ থেকে কুটকৌশলে ক্ষমতা হরণ করে আধিপত্যবাদিরা নির্বিচারে অন্যায় অবিচার চালাচ্ছে, মানবাধিকারের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। সত্যের অন্তরালে অন্যায়ের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে দিয়েছে নিজ দেশসহ পৃৃৃথিবীর বুকে। এরাই বুুুুদ্ধিমান, বুদ্ধিজীবী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় মূর্খের মতো। সত্য, সুন্দর ও মঙ্গল বিষয়কে অন্ধকারের আড়ালে লুুকিয়ে রেখে মিথ্যাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। এমনতর মূর্খ এবং অসৎ লোকের পরামর্শ কিংবা নেতৃত্বে আজ পৃথিবী বিপন্ন। এরা পেশিশক্তির মাধ্যমেই নিজেদের জ্ঞানের প্রকাশ ঘটাতে চাচ্ছে। জাগতিক সকল সমস্যার সমাধান নিজের মতামতকেই যেন প্রাধান্য দিয়ে অন্ধকারময় এক পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এমন ধরার মধ্যে পড়ে না সেই মানুষের হৃদয় নিষ্কলুষ, দৃষ্টি তাদের প্রসারিত, তাদের সত্য ও ন্যায় লাঞ্ছিত ও অপমানিত। ফলে জ্ঞানীই নয়, শক্তিমানরাই আজকের সময়ে কোনো এক লোভ লালসায় অমানুষ হয়েই যেন নিজ থেকে দার্শনিকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।
লেখক:
নজরুল ইসলাম তোফা, ‘টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক’।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd