সিলেটের বিশ্বনাথের তরুণীকে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দুই আসামি। তারা হলেন জাহাঙ্গীর আলম ও বারিক মিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ভুইয়ার আদালতে আসামিরা জবানবন্দি দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার ওসি (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তি বলেন, গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি জাহাঙ্গীরকে গত ১৭ অক্টোবর র্যাব-৯ গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। গত ১৮ অক্টোবর জাহাঙ্গীরকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালতে তাকে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে শেষে ফের আরও তিনদিনের রিমান্ডে আনা পুলিশ। মামলার অপর আসামি বারিক গত ২০ অক্টোবর আদালতে আত্বসর্মপন করে। পরদিন তাকে আদালতে তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। গত ২২ অক্টোবর তাকে রিমান্ডে আনা হয়। তিনদিনের রিমান্ডের মধ্যে দুইদিনের মাথায় তারা ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে তারা ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা স্বীকার করেন, তরুনীকে রাতে ঘরের বাহিরে একা পেয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। জবানবন্দি দেওয়ার পর দুই আসামিকে কারাগারে পাঠান আদালত। ওই মামলার অপর দুই আসামি জেল হাজতে রয়েছেন বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, বিশ্বনাথের লালটেক গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে পপি বেগম গত ৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে তার বোনের বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী চেরাগী গ্রামে গণধর্ষণের শিকার হয়। পরদিন সকালে সে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। তাকে দাফনের দুইদিন পর তার ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগে নিজ হাতে লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় পরিবার। ওই চিরকুটে পপি উল্লেখ করেছে ৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে বোনের বাড়িতে অবস্থানকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে সে ঘরের বাহিরে যায়। তখন পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা বারিক ও জাহেদ (পপির) মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় বাড়ির পাশ্ববর্তী জঙ্গলে। তখন তাদের পায়ে ধরে কান্না কাটি করতে থাকলে বারিক-জাহেদ ও তাদের সহযোগীরা মারধর করে পপিকে পাশবিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের পর পপিকে বোনের বাড়িতে (যেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, সেই স্থানে) ফেলে রেখে যায় জাহাঙ্গীর। আর গণধর্ষণের লজ্জা সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে। এঘটনায় গত ১৪ অক্টোবর পপির বাবা শুকুর আলী বাদি হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, গণধর্ষণ করত: আত্মহত্যার প্ররোচনা এবং সাক্ষ্য ঘটনা আড়াল করার অপরাধ আইনে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন-সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেরাগী গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), একই গ্রামের মৃত আবদুল মন্নানের ছেলে ফয়জুল ইসলাম (৩৬) আবদুল মনাফের ছেলে বারিক মিয়া (৩৭) ও মৃত মতছির আলীর ছেলে জাহেদ মিয়া (২২)। এ মামলার পর পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। অপর আসামি আদালতে আত্বসর্মথন করেন।