সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্মাণাধীন ভবন সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন কাজের তত্বাবধানে থাকা এলজিইডি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
জানা যায়, ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে সরকারি বরাদ্দকৃত প্রায় ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ওই বছরের ৩১ মার্চ ভবনটির নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন তথকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি ও সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। নির্মাণ কাজের দায়িত্ব মেসার্স হিমানী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পেলেও ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্মাণ কাজটি করে যাচ্ছেন জসিম উদ্দিন নামের একজন ঠিকাদার। ইতিমধ্যে ভবনের প্রায় ৯০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র রঙ এর কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তরের অপেক্ষায়।
এলাকাবাসী ও ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগ, বিদ্যালয়ের ভবনটি যেভাবে নির্মাণ কাজ করার কথা রয়েছে, সেই ভাবে না করে দায়সারাভাবে করা হচ্ছে নির্মাণ কাজ। ভবনের ফ্লোরে নুড়ি পাথর (চিপ পাথর) দিয়ে নেট ফিনিসিং ঢালাই এর নিয়ম থাকলেও তা শুধু বালু ও সিমেন্ট দ্বারা করা হয়েছে। বারান্দার ফ্লোরের ঢালাই বাহিরের দিকে ঢাল না দিয়ে ক্লাসরুমের ভিতরের দিকে ঢাল হওয়ায় বৃষ্টির পানি বাহিরের দিকে না গড়িয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে আটকে থাকে। গ্রীল, দরজা ও জানালা খুবই নিম্নমানের। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার আগেই জানালায় বসানো ফ্রেইম থেকে খুলে পড়ছে পাল্লা। কাচা কাঠ দিয়ে দরজা তৈরী করায় কাটগুলো শুকিয়ে ব্যান্ড হয়ে যাচ্ছে। জানালার নীচে নেই কার্নিংস ও জলপট্রি। ভবনের বাহিরের গ্রেড ভিমের নীচের অংশ সিমেন্ট দিয়ে ফিনিশিং হওয়ার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়েছে বালি ও সিমেন্ট দ্বারা। ভবনের রঙের কাজ ভিতরের অংশ প্লাস্টিক পেইন্ট, আর বাহিরের অংশ সিলার ওয়েদার কোট দিয়ে করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে শুধুমাত্র চক পাউডার এর সঙ্গে লিকুইড মিশ্রণ করে। যা খুবই নিম্নমানের। ফলে ভবনের প্লাস্টার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্খা বেশী। কলাপসিবল গেইট ফ্লোরের লেবেল না করে প্রায় ৬ ইঞ্চি উপরে করা হয়েছে, এতে বাচ্চারা হাটার সময় পায়ে আঘাত পেতে পারে। এছাড়া ভবনের ভিম, পিলার, ভেনটিলেটর, সানসেট ও গ্রীল করা হয়েছে অগুছালোভাবে, যেন একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। একটু দূর থেকে দেখলেই তা দেখা যায়।
এদিকে, এলাকাবাসী ও ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন নির্মাণাধীন ভবনটি পরিদর্শন করেন কাজের তত্বাবধানে থাকা এলজিইডি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ উপজেলা এলজিইডি অফিসের সাবেক উপ-সহকারী (বর্তমানের বালাগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত) মোশারফ হোসেন। এসময় তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, এলাকার মুরব্বি ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভবনের ফ্লোর ভেঙে দেখেন এবং অভিযোগগুলোর সত্যতা পান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হান্নান ও এলাকার মুরব্বি কবির আহমদ কুব্বার বলেন, বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেক টাকারও কাজ হয়নি। ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যদিয়ে দ্রুত ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করতে চাইছেন ঠিকাদার। তাই নিয়মানুযায়ী ভবনের কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
নির্মাণ কাজের ঠিকাদার জসিম উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলেন, আমি নিয়মানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। চক পাউডারের সাথে লিকুইড মিশ্রন করে রঙ করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি রঙ করার জন্য যাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম সে টাকা বাঁচানোর জন্য লিকুইড দিয়ে রঙ করতে থাকে। তবে সেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে, সঠিক নিয়মেই কাজ সম্পন্ন করা হবে। কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডি’র উপজেলা উপ-সহকারী মোশারফ হোসেন আমার কাছ থেকে উৎকোচ দাবি করেন। কিন্ত আমি তা না দেওয়ায় তিনি অফিসে আমার কাজের বিল আটকে রেখেছেন এবং বলছেন কাজে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন।
এব্যাপারে নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধানে থাকা এলজিইডি’র বালাগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী মোশারফ হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলেন, আমি ভবনটি পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। যেভাবে রঙের কাজ করা হচ্ছে তা বন্ধ করে নিয়মানুযায়ী রঙ করতে এবং ফ্লোর ভেঙে নতুন করে কাজ করার জন্য আমি ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি। তাই সে নিজেকে রক্ষার্থে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে। আমার বিরুদ্ধে উৎকোচ দাবির কোন প্রমাণ সে না দেখালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী (অঃদঃ) হারুনুর রশীদ বলেন, সঠিকভাবে ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। এরপরও কাজে যদি কোন অনিয়ম থেকে থাকে তাহলে নিয়ামানুযায়ী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Sharing is caring!