প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় ১৮ দিন ধরে অনশনে প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা

প্রকাশিত: ২:০৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় ১৮ দিন ধরে অনশনে প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদচারণা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে সংগ্রাম করে টানা ১৮ দিন ধরে অনশন করছেন মেয়েটি। চায় মমতাময়ী মায়ের (প্রধানমন্ত্রীর) সাক্ষাত। টানা অনশনের কারণে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

মেয়েটির নাম ‘চাঁদের কণা’। বাবা-মা আদর করেই হয়ত নাম রেখেছিল। তবে চাঁদের যেমন নিজস্ব আলো নেই তেমনি নামের সঙ্গে প্রতিবন্ধী এই মেয়ের জীবনের গল্পটাও যেন মিলে গেছে। আলো-আঁধারিতে চলছে জীবন। ক্রমাগত সেটি নিভু নিভু। উচ্চ ডিগ্রী নিয়েও এখনও কাক্সিক্ষত কোন ভাল চাকরি পায়নি। চাকরির বয়সও শেষের দিকে। আগামীর দিনগুলো কেমন হবে ভেবে কান্নায় ভিজে আসে দুচোখ। ভাল চাকরি না হলে প্রতিবন্ধী এই জীবন আরও বিভীষিকাময় হবে ভেবে সারাক্ষণই দুশ্চিন্তায় থাকেন আর অপেক্ষা করছেন এই বুঝি মমতাময়ী মায়ের (প্রধানমন্ত্রীর) কাছ থেকে কোন ডাক এলো…।

জানা গেছে, জন্মের নয় মাস পরই পোলিও আক্রান্ত হয়ে হাঁটার ক্ষমতা হারানো ইডেন মহিলা কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করা এ ছাত্রীর ভবিষ্যত অন্ধকার। জীবনে একটু আলোর খোঁজ পেতে একটি ভাল চাকরির আশায় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত পেতে ১৮ দিন ধরে অনশন করছেন। গত কয়েক দিনে বৈরী আবহাওয়াও দমাতে পারেনি তাকে। রোদ-বৃষ্টির পরিবেশেও একই জায়গায় বসেছিলেন তিনি। টানা অনশন আর বৈরী আবহাওয়াতে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ১৮ দিন শেষে রবিবার রাতে জাতির পিতার সমাধিতে অনশনে বসার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর আগেও অনশনে বসেছিলেন। তবে সে সময় চাকরির আশ^াস দেয়া হলেও তার সঠিক কোন সুরাহা হয়নি। কাছে প্রতিবন্ধী হয়েও কিভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন সেই কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। মেয়েটি বলেন, আমি একটা মেয়ে হয়ে হামাগুঁড়ি দিয়ে পরীক্ষা দিতে কখনও ৫তলায় উঠেছি সিঁড়ি দিয়ে। ভেবে দেখুন আমার জীবনটা কেমন!

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার বিয়াড়া গ্রামে জন্ম মেয়েটির। বাবা আবদুল কাদের ও মা মৃত হাসনাহেনার তিন সন্তানের মধ্যে তিনি বড়। জন্মের নয় মাস পরই পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। তাই হাতের ওপর ভর দিয়ে বা হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয় তাকে। রাজশাহীর মাদারবক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করেছেন এবং ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর করেছেন ২০১৩ সালে। স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় চাকরির জন্য এই তরুণী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চেয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমবার আমরণ অনশন করেন গত ২৬ জুন। অনশন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। চাঁদের কণা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে চাকরির আশ্বাস পেয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্যারের কাছ থেকে। তাই অনশন ভেঙ্গে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির আশ্বাস পেলেও পরে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়।

জানা যায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট মৈত্রী শিল্পের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাঁদের কণাকে অস্থায়ীভাবে চাকরি দেয়া হলেও তিনি যোগদান করেননি। কারণ, প্রতিবন্ধী হিসেবে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেও তাকে অস্থায়ীভাবে হাজিরাভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি করতে হবে। এটা অপমান মনে হয়েছে তাই আর সেই চাকরি করা হয়নি।

চাঁদের কণা বলেন, বাবা স্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে আছেন। মা নেই। খুব কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করেছি। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও কোন ভাল চাকরি হয়নি। চাকরির বয়সও শেষেরদিকে। তাই গত জুনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারী চাকরি চেয়ে ও তার সাক্ষাত পাওয়ার জন্য আমরণ অনশন করি। চাকরির আশ্বাস পেয়েছিলাম। তবে আমার যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরিটি দেয়া হয়নি। আমাকে সিরাজগঞ্জ জেলা সমাজসেবা অফিসে অস্থায়ীভাবে হাজিরাভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণীর একটি চাকরি দেন এবং কাক্সিক্ষত চাকরি থেকে বঞ্চিত করেছেন। তাই চাকরিটি করিনি এবং নিয়োগপত্র নিতে যাইনি। পরে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু শত চেষ্টা করেও তার কাছে পৌঁছতে পারিনি। তাই নিরুপায় হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমরণ অনশনে নেমেছি।

চাঁদের কণা জানান, আমার মা নেই- প্রধানমন্ত্রীই আমার মা। তিনি আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। আমি আশা করি, তার সঙ্গে দেখা হলে, আমার কথাগুলো বলতে পারলে, তিনি একটা সরকারী চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। মেয়ের কষ্ট শুনে মা কখনও মুখ বুজে বসে থাকবে না। মা মেয়ের বাঁচার পথ তৈরি করে দেবেন। আমি আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই। অশ্রুজলে মায়ের সঙ্গে দেখা করার আর্তনাদ করে কথাগুলো বলেন প্রতিবন্ধী তরুণী চাঁদের কণা। মমতাময়ী মায়ের কাছে বলতে চান তার সংগ্রামী জীবন-যাপনের কথা।

চাঁদের কণা যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখন তার মা মারা যান। কয়েক বছর পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ছোট দুই ভাই আছে। চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। শিক্ষা জীবনের সংগ্রামমুখর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি যখন মাদার বক্স কলেজে পড়তাম, পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হতো। ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে। কারণ, হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত এমন লক্ষকোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়া। গণমাধ্যমের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বপ্নের বার্তা পৌঁছে দিতে চান। তিনি বলেন, এখন থেকে আগামীর দিনগুলোর কথা ভাবলেই আমার চোখ ভিজে আসে। কারণ, যদি ভাল চাকরি না হয় তবে আমার কোন জমানো অর্থ থাকবে না। আমার বিয়েও হবে না। তাহলে আমার কি হবে, কে দেখবে প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, আমি স্বাভাবিক মেয়ে হলে হয়ত এতদিনে আমার বিয়েও হতো। আমার সমবয়সীদের বাচ্চাকাচ্চাও আছে। আর আমার জীবনযুদ্ধ করতে হচ্ছে এই পথে বসে।

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত কেন চান সে বিষয়ে চাঁদের কণা বলেন, আমি প্রতিবন্ধী। সবার মতো সব জায়গায় যেতে পারি না। স্বাভাবিকভাবে অন্য কাজও করতে পারি না। প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনাও করতে পারি না। সংসারের সব দিকে আমাকেই খেয়াল রাখতে হয়। তাই বিশেষ বিবেচনায় আমি প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা প্রার্থনা করছি। প্রধানমন্ত্রী যখন সবার পাশে আছেন, আমার পাশেও থাকবেন বলে আমার বিশ^াস।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2019
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

সর্বশেষ খবর

………………………..