সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : গত ২১ দিন ধরে নিখোঁজ স্বামীকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন স্ত্রী মাজেদা খাতুন। জিডি ও মামলা করে কোথাও খোঁজ পাচ্ছিলেন না। অবশেষে মুক্তিপণ চাওয়া পুলিশের আটককৃত কয়েক যুবকের স্বীকারোক্তিতে গতকাল শুক্রবার রাত দুটার পর বাড়ির পেছনে এক পরিত্যক্ত শৌচাগারের সেফটি ট্যাংকির ভেতর কাঁথা মোড়ানো গলিত লাশের সন্ধান পায় পুলিশ।
এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের রাধাবল্লভপুর গ্রামে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শনিবার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, ওই গ্রামের মো. হাসিম উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩৫) স্থানীয় উচাখিলা বাজারে পান-সুপারির ব্যবসা করেন। গত ১৮ জানুয়ারি রাতে বাড়ি ফেরার পর থেকে নিখোঁজ হন তিনি। সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে গত ২০ জানুয়ারি ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন নিখোঁজ ব্যবসায়ীর স্ত্রী মাজেদা খাতুন। পরদিন রাতে নিখোঁজ হেলালের বড় ভাই মো. দুলাল মিয়ার মোবাইল ফোনে কল আসে। ফোনের অপর প্রাপ্ত থেকে বলা হয়- ‘তোর ভাই কি হারানো গেছে? তোর ভাইকে আমরা নিয়ে গেছি। ফেরত পেতে হলে ২ লাখ টাকা লাগবে।’
তখন দুলাল মিয়া এতো টাকা দিতে পারবে না অনুনয় বিনয় করলে এক লাখ টাকায় রফা হয়। টাকা নিয়ে যেতে বলা হয় উচাখিলা-লক্ষীগঞ্জ সড়কে। ওই দিন কিছুদূর গিয়ে মুঠোফোনে ওই নম্বরে কল দিয়ে তা বন্ধ পান দুলাল। ওই অবস্থায় বিষয়টি ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ কে জানালে তারা মুঠোফোনের নম্বরটি দিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় উচাখিলা ইউনিয়নের মঘা গ্রামের নুর ইসলাম ও তার ছেলে আজিজুলকে আটক করে। মুঠোফোনের ওই নম্বরটি নুর ইসলামের নামে থাকায় এবং ফোনটি আজিজুল ব্যবহার করায় তাদের আটক করা হয়।
কিন্তু ঘটনার অন্তত ১৫ দিন আগে ফোনটি হারিয়ে যাওয়ায় এবং তাদের কাছ থেকে কোনো ধরণের ক্লু না পাওয়ায় পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দু’জনকে ছেড়ে দেন। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একই গ্রামের আক্কাস ও আকাশ, কাঞ্চন, ফারুক, রিপন, খাইরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে সিলেট থেকে একই গ্রামের উত্তম আর্চায্য (১৮) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার রাত দশটার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে উত্তমের স্বীকারোক্তিতে রাত ২টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসির নেতৃত্বে উত্তমকে নিয়ে অভিযানে যায় পুলিশের একটি দল। এ সময় উত্তমের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে নিখোঁজ হেলালের বাড়ির পেছনে জনৈক কামরুল ইসলামের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে হেলাল উদ্দিনের কাঁথা মোড়ানো গলিত লাশ উদ্ধার করে।
নিহতের স্ত্রী মাজেদা খাতুন জানান, বাড়ির পাশের মো, রতনের ছেলে তার দলবল নিয়ে এক মাস আগে তার স্বামীর কাছে যায় একটি মোবাইল বিক্রি করতে। স্বামী হেলাল কিনতে অস্বীকার করলে উচ্চ-বাচ্য করে চলে আসে। পরদিন রিপন ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলে আব্দুল্লাহকে (১৫) চড় থাপ্পর দিয়ে গুরুতর আহত করে। সেই সাথে স্বামী হেলালকেও দেখে নেওয়ার হুমকী দেয়। এর কিছুদিন পরেই ২০ হাজার টাকা ধার চায়। না দেওয়া ফেন হুমকী ধামকী দেয়।
মাজেদা জানান, রিপন, উত্তম আক্কাছ, কাঞ্চনসহ ১৫/২০ জনের একটি দল মাদকাসক্ত। মাদক সেবনের জন্য এরা বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম-কুকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে। এরাই তার স্বামীকে অপহরণ করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আমার কাছেই যে স্বামী আছে তা তো আমি জানি না। এরা আমার কি বড় সর্বনাশ করছে। আমি এরার ফাঁসি চাই।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ জানান, আটকৃতরা স্বীকার করেছে নেশার টাকা চেয়ে না পেয়ে ব্যবসায়ী হেলালকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd