সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৫৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা। সীমান্তের ওপার থেকে চোরাকারবারীদের মাধ্যমে চালান আসায় সহজলভ্য হয়ে পড়েছে মাদক। সিলেট সীমান্ত দিয়ে আসা ইয়াবার চালান হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর এ কাজে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী ‘নারী সিন্ডিকেট’। মাদক পাচার, বিক্রি ও বহনের কাজ করছে এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অসচ্ছল পরিবারের নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে যুক্ত করা হচ্ছে এ সিন্ডিকেটে। সম্প্রতি এরকম একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। আটক করা হয়েছে ইয়াবা ব্যবসার নারী সিন্ডিকেটের মূল তিন হোতাকে। এছাড়া গত কয়েক মাসে র্যাবের হাতে আটক হয়েছে ওই সিন্ডিকেটের আরও অন্তত ২৫ সদস্য। মাদকের এই থাবা থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় সামাজিক প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকাগামী একটি বাস থেকে ৬১ হাজার পিস ইয়াবাসহ নাহিদা আক্তার ও শাহীনা বেগম নামের দুই নারীকে আটক করে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। নাহিদার বাড়ি মাদারীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে ও শাহীনার বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বালিউড়া গ্রামে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশ সিলেটে নারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কের সন্ধান পায়। ওই সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থেকে আটক করা হয় বিশ্বনাথের পাঠাকইন গ্রামের তবারক আলী সুমনের স্ত্রী ইয়াবা সম্রাজ্ঞী সাবিনা আক্তারকে।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সাবিনা সিলেটের সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতো। নারীদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা কম সন্দেহ করায় ইয়াবাবহনকারী হিসেবে সে তাদেরকে বেছে নিতো। এছাড়া সাবিনার সাথে আরও কয়েকজন নারী সরাসরি ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা সদস্যরা।
শুধু সাবিনা সিন্ডিকেট নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ইয়াবা ব্যবসার সাথে নারীদের অন্তত ১০টি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। যারা ভারত থেকে ইয়াবার চালান এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে ব্যবসা করছে। এই সিন্ডিকেটে শতাধিক নারী ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে।
র্যাব ও পুলিশের সাথে আলাপকালে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের মূল হোতারা শহরের বস্তি ও গ্রামের গরীব নারীদের টার্গেট করে। তাদেরকে লোভ দেখিয়ে ইয়াবার চালানের বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করে। সিন্ডিকেটের মূলহোতারা সবসময় থাকেন আড়ালে। এক পর্যায়ে ক্যারিয়াররা নিজেরাই গড়ে তুলেন সিন্ডিকেট। ফলে দিন দিন নারী মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
গত কয়েক মাসে সিলেটে ইয়াবাসহ র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন অন্তত ২৫ নারী। এর মধ্যে রয়েছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সিলেট নগরীর কাস্টঘরের পাখি রানী, শান্তি ভাস্কর, টিবি গেইট এলাকার আনিছ মিয়ার কলোনির আসমা জাহানারা বেগম, জকিগঞ্জের লোহারমহল গ্রামের হামিদা বেগম, দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলার একটি কলোনির ভাড়াটে রোহেলা আক্তার রোকেয়া ও শাহানা বেগম, মাধবপুরের শিবরামপুরের আসমা বেগম ও ছাতক দক্ষিণ বাগবাড়ির সুফিয়া বেগম।
এ ব্যাপারে র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গত কয়েক মাসে ইয়াবাসহ অন্তত ২৫ জন নারীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। আবার কেউ কেউ ইয়াবার চালানের বাহক। ইয়াবার ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় অনেক গরীব পরিবারের নারীরা মাদক পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, যা উদ্বেগজনক। সামাজিক সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া মাদকের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব নয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd