সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৩৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বৈধভাবে সিগারেট খুব একটা আমদানি করা না হলেও রাজধানীসহ সারাদেশেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি সিগারেট। উচ্চশুল্কযুক্ত এসব সিগারেট শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে ঢুকছে দেশের বাজারে। বিমানবন্দরগুলোতে মাঝে মধ্যে সিগারেটের এসব অবৈধ চালান ধরা পড়লেও মাঠ পর্যায়ে অবৈধ এই সিগারেটের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো তৎপরতা।
একসময় নির্দিষ্ট কিছু দোকানে বিদেশি সিগারেট বিক্রি হলেও এখন পাড়া-মহল্লার ছোট দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে এসব বিদেশি সিগারেট। চোরাকারবারীরা বিভিন্ন কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসছে এই পণ্য। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে।
জানা যায়, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বাংলায় সতর্কীকরণ লেখা ও ছবি ছাড়া কোনো সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ। এছাড়া বাধ্যবাধকতা রয়েছে রাজস্ব ষ্ট্যাম্প থাকারও। কিন্তু চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা সিগারেটের ক্ষেত্রে এসব নিয়মের কোনো বালাই নেয়। কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে চলছে এ অনিয়ম।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান বলেন, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বাংলায় ছবিযুক্ত সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লেখা থাকতে হবে। এছাড়া পেকেটের গায়ে এনরোলমেন্ট বা রাজস্ব স্ট্যাম্প ছাড়া যেকোনো ধরনের বিদেশি সিগারেট আমদানি করা অবৈধ। বিদেশি সিগারেট আমাদানির জন্য প্রায় ৪৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। মূলত শুল্ক ফাঁকি দিতেই চোরাচালান করা হচ্ছে এসব বিদেশি সিগারেট।
তিনি আরো বলেন, চোরাই পথে বাজারে চলে আসা অবৈধ সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে এমন অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এছাড়া, শুল্ক গোয়েন্দা ও কাস্টমসের যেকোনো বিভাগ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত ও ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী চক্র মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এসব সিগারেট দেশে নিয়ে আসছে। আবার সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর ও ওসমানি বিমানবন্দর দিয়েও এসব সিগারেট দেশে আসছে। বিমানবন্দর ছাড়াও স্থল সীমান্ত ও সমুদ্রপথেও এসব সিগারেট ঢুকছে দেশের বাজারে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে চোরাকারবারীরা দুবাই থেকে সরাসরি না এসে মুম্বাই হয়ে দেশে প্রবেশ করছে বলে জানা যায়।
বিদেশি সিগারেটের চোরাকারবারীরা ফ্ল্যাট, বাসা ভাড়া নিয়ে মজুদ করছে এসব সিগারেট। পরে বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে তা মাঝারি ও ক্ষুদ্র দোকানীদের কাছে বিক্রি করছে।
সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩৬০ কার্টন বিদেশি সিগারেট নিয়ে আটক হন খোরশেদুল নামে এক ব্যক্তি। তিনি কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানান, গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে দুবাই থেকে সরাসরি ফ্ল্যাইটে না এসে মুম্বাই হয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন।
মিরপুর, নিউমার্কেট, ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশান এলাকার খুচরা সিগারেট বিক্রেতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুব সহজেই তারা এসব বিদেশি সিগারেট সংগ্রহ করতে পারেন। এজন্য কোথাও যেতে হয় না। সাইকেলে করে বিক্রয় কর্মীরা এসে সিগারেট দিয়ে যায়। আবার ফোন করলেও সিগারেট পৌঁছে দেয়। বিদেশি সিগারেট বিক্রি করলে তাদের লাভ অনেক বেশি থাকে। দিন দিন এসব সিগারেটের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তারা।
তবে বিক্রয় প্রতিনিধিরা কোথা থেকে এসব সিগারেট সংগ্রহ করে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা নেই বিক্রেতাদের। তাদের মতে, লাগেজ পার্টির মাধ্যমে কিংবা বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীরা এসব সিগারেট নিয়ে আসে। তবে বিদেশি সিগারেট বিক্রি করা যে অবৈধ তা স্বীকার করেন তারা। এসব সিগারেট বিক্রি করতে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, আগে খুব বেশি হতো, তখন তারা লুকিয়ে এসব সিগারেট বিক্রি করতেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারা এখন প্রকাশ্যেই প্রদর্শন করে বিক্রি করতে পারছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর কাপ্তান বাজার, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারী বাজার এবং চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ ও মাদুনাঘাটে বিক্রি হচ্ছে এসব বিদেশি সিগারেট।
বাংলাদেশে সাধারণত ইউএস এর ৩০৩, কোরিয়ান ইজি, ব্ল্যাক, ডানহিল, ৫৫৫, সুপার স্লিম, লাক্সারি ফিল্টার্স, আমেরিকার ব্লেন্ড, ষ্ট্রবেরি, জাভা ব্র্যান্ডের সিগারেটগুলো অবৈধভাবে বেশি আসছে।
এসব সিগারেট কাতারের দোহা, আরব আমিরাতের দুবাই, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও চীন থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সবচে বেশি আসছে দোহা ও দুবাই থেকে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আনা আরো ৩২৮ কার্টন আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেটসহ একজনকে আটক করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ (এএপিবিএন)। আটক সিগারেটের মধ্যে রয়েছে ইজি স্পেশাল গোল্ড, ৩০৩ এসএস ব্রাউন, ৩০৩ এসএস ব্ল্যাক ব্র্যান্ডের সিগারেট। আটক সিগারেটের মূল্য নয় লাখ ৮৪ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে গাল্ফ এয়ারের একটি ফ্লাইটে বাহারাইন থেকে আসা মো. মন্জুর আলীকে (২৬) বিমানবন্দরের ক্যানোপি-১ (বিমানবন্দরের বাইরে গাড়িতে উঠার যাত্রী ছাউনি) এলাকা থেকে এসব নিষিদ্ধ সিগারেটসহ আটক করা হয়।
এএপিবিএন এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন্স অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আলমগীর হোসেন শিমুল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দুবাইয়ের ব্যবসায়ী আজগর আলী (৪৫) চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মো. পারভেজের কাছে এই চালান পৌঁছানোর জন্য মন্জুরকে দিয়েছে বলে সে জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।
এদিকে, ওই দিন সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের তিন যাত্রীর কাছ থেকে ৯ পিস সোনার বার ও ২৪০ কার্টন অবৈধ বিদেশি সিগারেট উদ্ধার করে কাস্টমস কর্মকর্তারা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd