ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত

প্রকাশিত: ১০:৪৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০

ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/আজ বসন্ত…।’ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন আজ। ফুল ফোটানোর পুলকিত সময় আজ। মাতাল হাওয়া, উড়াল মৌমাছিদের গুঞ্জরন, গাছের কচিপাতা আর কোকিলের কুহুতানে জেগে ওঠার দিন আজ। মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যি সত্যি সে ঋতুর রাজা। বসন্ত তারুণ্যেরই ঋতু। স্বাগত বসন্ত। প্রাণ খুলে তাই যেন কবির ভাষায় বলা যায়, ‘আহা আজি এ বসন্তে/ এতো ফুল ফোটে/এতো বাঁশি বাজে/এতো পাখি গায়…’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির মনকেও বারবার দুলিয়েছে ঋতুরাজ

বসন্ত। বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি অনাদিকাল থেকেই। কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায় আছে বসন্তের বন্দনা।

ষড়ঋতুর দেশে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিতেই মূলত বসন্ত জানান দেয় তার আগমনী বার্তায়। গ্রামের মেঠোপথ, নদীর পাড়, গাছ, মাঠভরা ফসলের ক্ষেত বসন্তের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। চোখ বুজলেও টের পাওয়া যায় এসব দৃশ্যপট। তবে নগর জীবনেও বসন্ত ছন্দ তোলে মৃদু হিল্লোলে। কংক্রিটের নগরীতে কোকিলের কুহুস্বর ধ্বনিত হয় ফাগুনের আগমন সামনে রেখে। যানজট, কোলাহল ছাপিয়েও যেটুক প্রকৃতি খুঁজে পাওয়া যায় নগরে, একেই অতি আপন করে নেন নগরের কর্মব্যস্ত মানুষ।

ফাগুন হাওয়ার দোল লেগেছে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতিতেও। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে উঠছে প্রকৃতির সবুজ অঙ্গন। মাঘের শেষ দিক থেকেই গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। বসন্ত শুধুু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ¡াসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপরও রং ছড়ায়। বায়ান্ন সালের আট ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ¡াস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। অন্যবারের মতো ফাগুনের প্রথম দিনে আজ তারা মিলিত হবেন মনকে বসন্তের রঙে রাঙিয়ে। প্রীতির বন্ধনে আপন মহিমায় খুঁজে নেবেন বসন্তকে। তরুণ-তরুণীরা বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাতিয়ে রাখবে সারাদিন। তারা বাসন্তী রঙের পোশাকে নিজেকে রাঙিয়ে নেবে। তরুণীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় গাঁদা, পলাশসহ নানা ফুল গুঁজে আর তরুণরা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় নতুন করে নিজেদের সাজিয়ে নেমে আসবে পথে পথে। নগরীর বিভিন্ন উদ্যান, ফাস্টফুড, ক্যাফেও মুখর থাকবে। মুঠোফোন, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলবে তাদের বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। গাছ কাটা আর ফ্ল্যাট সংস্কৃতির প্রবল চাপের মুখে রাজধানীতে যেটুকু সামান্য সবুজ আছে, সেখানে আজ জড়ো হবে তরুণ-তরুণীরা। বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, বনানী লেক, ধানমন্ডি লেক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, বলধা গার্ডেন, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণে আজ দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ¡াস প্রকাশ।

এদিকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ আজ নানা আয়োজনে বরণ করে নেবে ঋতুরাজকে। পরিষদের বর্ণাঢ্য এই উৎসবের আয়োজনে বসন্তের প্রকৃতি বর্ণনা ও বন্দনা করা ছাড়াও এসব মঞ্চ থেকে বাঙালির জীবনে বসন্তের প্রভাব নানা ব্যঞ্জনায় ফুটিয়ে তোলা হবে। আয়োজকরা জানান, একযোগে অনুষ্ঠান চলবে চারুকলার বকুলতলা, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর ও বাহাদুরশাহ পার্কে। চারুকলার বকুলতলায় ভোর সোয়া ৭টায় শুরু হবে উৎসব।

উল্লেখ্য, বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে।

জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ : বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি প্রতিবাদী নাচ, গান ও আবৃত্তিরও আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। সকাল ৭টায় চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শুরু হবে এই উৎসব। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একযোগে এ অনুষ্ঠান চলবে চারুকলা অনুষদের বকুলতলা, পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক, লক্ষীবাজার এবং ধানমণ্ডি ৮ নম্বর রোড সংলগ্ন রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে। পুরনো ঢাকায় বসন্তের দোলা পৌঁছে দেয়ার জন্য দ্বিতীয়বারের মতো বাহাদুর শাহ পার্কে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..