সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:২৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের ছাতকে স্থাপিত দেশের একমাত্র রজ্জুপথ (রোপওয়ে) অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এই রজ্জুপথ। এ অবস্থায় চুরি হয়ে যাচ্ছে এখানকার যন্ত্রপাতি।
রজ্জুপথের জন্যে বরাদ্ধ দেওয়া রেলওয়ের সাড়ে ৩শ’ একর ভূমিও বেদখল হয়ে পড়েছে। রেলের এই জমি থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে রজ্জুপথের ব্যাংকার, হেলে পড়েছে খুঁটি।খুুঁটি হেলে পড়ায় এরআগেও কয়েদফা বন্ধ হয় রজ্জুপথের কার্যক্রম। পরে সংস্কার কাজ শেষে আবার তা চালু করা হয়। তবে ২০১৪ সালে সর্বশেষ বন্ধ করার পর আর তা চালু করা হয়নি।
এ অবস্থায় গত রোববার এই রজ্জুপথ ও রেলওয়ের জমি পরিদর্শনে আসেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সুজন। এসময় তিনি বলেন, যে প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এই রজ্জুপথটি স্থাপন করা হয়েছিলো সেই প্রেক্ষাপট এখন আর নেই। তবে এটি এখন আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। তাই আবার সচল করা হবে, না এই অবস্থায়ই সংরক্ষণের উদ্যেগ নেওয়া হবে এ নিয়ে আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা করা হবে। সেখানেই এই স্থাপনার ব্যাপারে সিদ্ধন্ত নেওয়া হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ থেকে উত্তোলিত পাথর পরিবহনে স্থল ও জলপথের বিকল্প হিসেবে রজ্জুপথ স্থাপন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত ১৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ রজ্জুপথ নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। নির্মাণকাজ শেষে ১৯৭০ সালের গোড়ার দিকে এটি চালু হয়। পুরো রজ্জুপথ ১১৯টি খুঁটির ওপর স্থাপিত। এসব খুঁটির উপর টানানো তার দিয়ে বাক্সতে করে পাথর পরিবহন করা হতো। প্রতি বাক্সে ৬০০ কেজি ওজনের পাথর পরিবহন করা হতো। রজ্জুপথে পাথর উত্তোলন ও খালাসের স্টেশন যথাক্রমে ভোলাগঞ্জ ও ছাতকে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রজ্জুপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেই বছর বর্ষা মৌসুম থেকে টানা আট বছর এটি বন্ধ থাকে। সংস্কারকাজ শেষে ১৯৭৯-৮০ অর্থবছর থেকে চালু হলেও পরের বছর থেকে কেবল বর্ষা মৌসুমে পথটি সচল রাখা হয়। ১৯৯০-৯১ অর্থবছর থেকে রজ্জুপথে পাথর পরিবহন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় রজ্জুপথের একটি খুঁটি হেলে পড়ায় ফের বন্ধ করে দেওয়া হয় পথটি। এরপর ২০১১ সালে আবার চালু হওয়ার পর ২০১৪ সালের জুলাইয়ে আরেকটি খুঁটি উপড়ে পড়ে। এরপর থেকে এটি বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে ভোলাগঞ্জে রজ্জুপথের বাংকার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাংকার ঘেঁষে রেলের জমি থেকে পাথর উত্থোলনের ফলে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনের ফলে হেলে পড়েছে প্রায় সবগুলো খুঁটি। রজ্জুপথের অনেক যন্ত্রপাতিও চুরি হয়ে গেছে গত কয়েকবছরে। শুরুতে ৪২৫টি বাক্স দিয়ে রজ্জুপথ চালু হলেও এখন তা শ’খানেকের মতো বাক্স রয়েছে। এই এলাকায় রেলে প্রায় ৩৫৯ একর জমিও দখল করে নিয়েছে পাথর ব্যবসায়ীরা।
সংশি¬স্ট সূত্রে জানা যায়, রজ্জুপথ ও রেলওয়ের জমি রক্ষায় ২০০০ সালে নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় আনসার বাহিনীকে। তবে অভিযোগ রয়েছে আনসার বাহিনীর সহযোগীতায় পাথর ব্যবসায়ীরা দখল করে নেয় রেলের জমি। ব্যাংকার থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে উত্তোলন করে পাথর। এরপর ২০১২ সাল থেকে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আসে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। তবু থামেনি লুটপাট। এ অবস্থায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী লিখিতভাবে এ বাংকার বিক্রির প্রস্তাব করে।
তবে ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ের এক যৌথসভায় রজ্জুপথটি ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে এখন পর্যন্ত এটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দিনদিন অনেকটাই অস্থিত্ব সঙ্কটে পড়েছে ব্যতিক্রমী এই স্থাপনাটি।
এ ব্যাপারে রজ্জুপথের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের ছাতক কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুন নুর বলেন, আরএনবি’র ৪৮ সদস্যের একটি দল রজ্জুপথের নিরাপত্তায় রয়েছে। তবে রজ্জুপথের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং পাথর উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের কারণে এখানকার রেলের অনেক সম্পদই বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো রক্ষায় স্থানীয়দের সচেতনতার পাশপাশি সবমহলের সহযোগীতা প্রয়োজন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd