সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:০২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক বাঙালি নারী ‘লৌহমানবী’ খেতাব অর্জন করেছেন। এই নারীর নাম দিয়া অরোরা (মুখোপাধ্যায়)। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার মেয়ে তিনি।
দিয়া অরোরা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করেন, সন্তান সামলান এবং জিতেছেন ‘লৌহমানবী’ খেতাবও। তিনি পেশায় একজন জিওলজিস্ট এবং পাঁচ বছর বয়সী এক সন্তানের মা।
সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাঁতার, সাইকেল চালানো আর দৌড়ের ট্রায়াথলন। এই প্রতিযোগিতা সাফল্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ করে দিয়া অরোরা জিতেছেন ‘লৌহমানবী’র খেতাব।
ভারতের অ্যাথলেটিক্স মহলের অভিমত, বাঙালি মেয়েদের মধ্যে এমন খেতাব জয়ের নজির খুব একটা দেখা যায় না।
কলকাতার হোলি চাইল্ড স্কুলে পড়াশুনোর সময়ই স্পোর্টসে চৌকস ছিলেন দিয়া। কিন্তু তারপর যোগমায়াদেবী কলেজ, আইআইটি খড়্গপুরে জিওলজিস্ট হওয়ার স্বপ্নপূরণ করতে গিয়ে পিছনে পড়ে যায় সেসব। মুম্বাইতে নামকরা বেসরকারি তেল এবং গ্যাস সংস্থায় চাকরি করেছেন তিনি। দিল্লির সৌরভ অরোরার সঙ্গে প্রেম, একমাত্র মেয়ে সানভির জন্ম-এসব নিয়েই কেটে যাচ্ছিল দিন বেশ।
বছর পাঁচেক আগে দিয়ার জীবনের মোড় পাল্টে যায়। সে সময় চাকরি সূত্রে কুয়েতে থাকা শুরু করেন তিনি।
কুয়েত থেকে টেলিফোনে দিয়া বলেন, কুয়েত খুব ছোট একটা দেশ হলেও তাদের অ্যাথলেটিক্সের ওপর খুব ঝোঁক। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতাও আয়োজন হয় এখানে। শুরুর দিকে সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এবং স্থানীয়দের সঙ্গে পরিচয় বাড়ানোর ইচ্ছাতেই একটা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় সেটাই।
তিনি বলেন, একের পর এক দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিতেই তৈরি হয়ে যায় বন্ধুও। কলেজ স্কোয়ারে সাঁতার শেখা আমার। আইআইটিতে পড়াশোনার সময় ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য সাইকেল চালানোও শিখতে হয়েছিল। বন্ধুরা যখন জানল, আমি সাঁতার, দৌড়, সাইক্লিং তিনটাই পারি, তখন তারা পরামর্শ দেয় ট্রায়াথলনের জন্য তৈরি হতে।
ট্রায়াথলনের নিয়ম হলো প্রতিযোগীদের প্রথমে সাঁতার কেটে এসে সাইকেল চালিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব পেরোনোর পর দৌড়াতে হয়। সবটারই দূরত্ব এবং সময় বাঁধা। আয়রনম্যান পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে একজন প্রতিযোগীকে পেরোতে হয় সুপার স্প্রিন্ট, স্প্রিন্ট, অলিম্পিক, হাফ আয়রনম্যানের পর্যায়। যে ট্রায়াথলনের খেতাব জিতেছেন দিয়া, সেখানে তাঁকে সমুদ্রে ১ দশমিক ৯ কিমি সাঁতার কেটে এসে ৯০ কিমি সাইক্লিং এবং তারপর ২১ দশমিক ১ কিমি দৌড়াতে হয়েছে। গোটা পর্যায়টি দিয়া শেষ করেছেন ৭ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে। বিশ্বের ৫৩টি দেশে বিভিন্ন সময়ে বসে এই আয়রনম্যান প্রতিযোগিতার আসর। গত বছর ভারতের গোয়ায় প্রথমবার আয়োজিত হয়েছিল ভারতীয় আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগিতা।
দিয়া বলছেন, কুয়েতে আমাদের দিন শুরু হয় বেশ তাড়াতাড়ি। আমি ভোর চারটায় উঠে আগে রান্না সেরে নিই স্বামী-মেয়ের। তারপর তৈরি হয়ে চলে যাই ট্রেনিং সেন্টারে। সেখানে সাঁতার আর বাকি ট্রেনিং সেরে সকাল সাতটা-সাড়ে সাতটার মধ্যে অফিসে চলে যাই। সপ্তাহান্তে সাইক্লিং করি।
দিয়া নিজের প্রস্তুতি চূড়ান্ত বুঝে স্থির করেন ৭ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে আয়োজিত আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। কিন্তু স্বামীর ছুটি নেই। তাই বন্ধুদের সঙ্গেই কুয়েত থেকে উড়ে যান দুবাইতে।
দিয়া বলেন, আমি এর আগে সমুদ্রে কখনও সাঁতার কাটিনি। সেটা নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম। কারণ, অধিকাংশ দুর্ঘটনাই সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় ঘটে। খুব সৌভাগ্যবান আমার বন্ধুদের সঙ্গে পেয়ে। তাদের উৎসাহ না থাকলে এতদূর পৌঁছতেই পারতাম না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd