সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৩১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : দাকোপের বাজুয়ায় অনুমোদনহীন প্রতিবন্ধী স্কুল পরিচালনার অন্তরালে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। “শেখ হাসিনা নাকি বাজুয়া” প্রতিবন্ধী স্কুল, আলোচিত ওই স্কুলের নাম নিয়ে দাকোপবাসী আছে ধোয়াশার মাঝে।
অভিযুক্ত সজল গাইন অপকর্মের দ্বায় এড়াতে ঢাল হিসাবে মহিলা এমপিকে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। তবে তিনি সে দ্বায় নিতে অস্বীকার করেছেন। নিজেই সভাপতি নিজেই পরিচালক আবার নিজেই স্ব ঘোষিত প্রধান শিক্ষক ঘোষণা দিয়ে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার এক অভিনব কারবার। নেই কোনো পরিচালনা কমিটি।
প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে ভুয়া নিবন্ধনে দাকোপের বাজুয়ার চড়ারধারে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিবন্ধী স্কুল। স্কুল ঘরের বেড়ার সাথে শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ব্যানার টানানো। অথচ স্কুলের প্রবেশদ্বার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে টানানো প্যানায় লেখা আছে বাজুয়া প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।
খোজ নিয়ে দেখা যায় শিক্ষার নামে সেখানে চলছে বিতর্কিত সজল কান্তি গাইনের বেআইনী স্বেচ্ছাচারী অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিনব কারবার। অতীতের নানা কুকীর্তির কারণে এলাকায় এই সজল বহুলালোচিত। নিজে ভুমি দাতা, সভাপতি, পরিচালক এবং প্রধান শিক্ষক সেজে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে এই প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন এমন দাবি তার।
যেখানে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নেই কোনো অনুমোদন, মানা হয়নি কোন নিয়মনীতি।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১২ জুন খুলনার একটি স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক কর্মচারীর বিভিন্ন পদে দরখস্ত আহবান করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঢাকা লালমাটিয়া প্রতিবন্ধী সোসাইটি বিদ্যালয় নামের একটি স্কুলের নিবন্ধন নাম্বার ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে। স্থানীয় অপর একটি স্কুলের জনৈক প্রধান শিক্ষকের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে প্রতিটি দরখস্তের বিপরীতে ৫ শ’ থেকে ৭ শ’ টাকা করে পে অর্ডার/ব্যাংক ড্রাপট চাওয়া হয়। এভাবে কয়েক শ’ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় লক্ষাধীক টাকা।
স্থানীয় কলেজের শিক্ষকদের মাধ্যমে নেয়া হয় বিতর্কিত নিয়োগ পরিক্ষা। যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিক্ষক এবং পরীক্ষা পদ্ধতি কোনটাই আইনসিদ্ধ ছিলনা। বাজুয়া সরকারি এল বিকে মহিলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক নিলাদ্রী শীল এবং বিবিধ ভূষণ সেই নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে না পেয়ে কথা হয় কলেজ অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ হাবীবের সাথে।
তিনি বলেন, আমার অনুমতি নিয়ে কেউ এমন নিয়োগ পরিক্ষায় দায়িত্ব পালন করেনি। তবে আমার অজান্তে নিয়েছে কিনা সেটে জেনে জানাতে পারবো। আবার সেই পরিক্ষার কোনো ফলাফল ঘোষণা না দিয়ে জনপ্রতি পদ অনুসারে ৩ থেকে ৬ লক্ষ করে টাকা নিয়ে ১১ জন শিক্ষকসহ কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে শতাধীক শিক্ষার্থী আছে দাবী করে সজল গাইন বলেন, ১২ জন শিক্ষক ও ৪ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর সমন্বয়ে স্কুলটি পরিচালনা করছি। জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক সজলের স্ত্রী, শ্যালক আছে এই শিক্ষক তালিকার মধ্যে।
অপরদিকে অভিযুক্ত সজল গাইন ইতিপূর্বে জাল সনদে বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষক হিসাবে চাকরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে চাকরিচ্যুত হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার মন্ডল বলেন, আপনিতো সবই জেনেছেন, আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাইনা। উল্লেখিত দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সজল গাইন উত্তেজিত হয়ে বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিলা এমপি এ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। সকল বিষয়ে তিনি জানেন, পারলে তার কাছ থেকে জেনে নিবেন। তাছাড়া নিজেকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যান মিহির মন্ডলের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে বলেন “আমি আপনাকে কোনো তথ্য দিবোনা, এখানে হাবলা পাড়ায় নোট ভাঙানো যাবেনা”।
উল্লেখিত বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা এমপি এ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, আমি জানি অনেকেই আমার নাম ভাঙানোর চেষ্টা করছে। কেউ যদি অপকর্ম করে তার সাথে আমি নেই এটা স্পষ্ট কথা। আমাকে ওই স্কুলের সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিলে আমি বলেছি স্কুলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে হলে রাজি আছি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। তারা আমাকে ওই স্কুলে নেয়ার চেষ্টা করলে আমি বলেছি সকল কাজ স্বচ্ছতার সাথে করে এলাকার সুধী সমাজকে সাথে নিয়ে আমি স্কুলে যাবো। এর বাইরে আমি কিছু জানিনা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বিধান অনুযায়ী এমন কোনো বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্ব প্রথম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের জানার কথা। কিন্তু বাজুয়ার প্রতিবন্ধী স্কুলের বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। আইনতভাবে আমি বা আমার দপ্তর এ বিষয়ে কিছু জানেনা। অর্থাৎ সরকারি হিসেবে দাকোপে কোন প্রতিবন্ধী স্কুলের অস্তিত্ব নেই।
তবে উপজেলা প্রাথমিক দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক যারা নাকি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন তারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে নিজেদের বেতন ভাতার বিষয়ে জানতে এসে বাস্তব তথ্য জেনে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। শিক্ষাকে পণ্য হিসাবে পুঁজি করে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে এর সাথে কোনো কোনো রাঘব বোয়াল জড়িত আছে।
বর্তমান সরকার যেখানে নিজ দলের প্রভাবশালীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন, সেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে প্রতিবন্ধী স্কুল পরিচালনার নামে অর্থ বাণিজ্যের এই অভিযোগের সঠিক তদন্ত এবং আইনত ব্যবস্থা গ্রহণের দারি জানিয়েছে দাকোপবাসী।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd