বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: পুরোদস্তুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অথচ, প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩জন। এর মধ্যে প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণিতে নেই কোনো শিক্ষার্থীই। ১৩ শিক্ষার্থীর জন্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ আছেন মাত্র দু’জন শিক্ষক। ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবার সিলেট শহরের বাসা থেকে এসে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন দেরিতে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই কম হওয়ার অজুহাতে দুপুর হলেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয় বিদ্যালয়। আলোচিত এই বিদ্যালয়টির নাম কচরাকেলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের কচরাকেলী গ্রামে বিদ্যালয়টি অবস্থিত।
জানা গেছে, ৩০শতক জমির উপর কচরাকেলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল মতিন চৌধুরী নামে একজন শিক্ষানুরাগী। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে শূন্য রয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ। বিদ্যালয়ের সামনে পরিত্যক্ত ভবন থাকায় নেই পর্যাপ্ত খেলাধুলা, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন বা সমাবেশের জায়গা। একমাত্র ল্যাপটপটিও নষ্ট। বিশুদ্ধ পানির সংকটতো রয়েছেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানান, প্রায় প্রতিদিনই দেরিতে বিদ্যালয়ে আসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। প্রতিদিনই দুপুরে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বিদ্যালয়টির এসব অনিয়মের অভিযোগ সরেজমিনে যাচাই করতে সংবাদকর্মীরা সেখানে গিয়ে এর সত্যতা পান। তবে, তাদের পড়তে হয় নানাধরণের বাঁধা-বিপত্তিতে। পরিচালনা কমিটির কোনো কোনো দায়িত্বশীল বিদ্যালয়ে ‘সাংবাদিক নিষিদ্ধ’ বলেও দাপট দেখান।
সরেজমিন কচরাকেলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায় অফিস কক্ষসহ পুরো বিদ্যালয়ই তালাবদ্ধ। এর আগে একাধিকবার দুপুরে গিয়ে বিদ্যালয়টি তালাবদ্ধ অবস্থায় পান সংবাদকর্মীরা। ওইদিন দুপুরে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি জানতে পেরে দু’জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ছুটে আসেন সহকারি শিক্ষক গীতা দে। অসময়ে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আমার শাশুড়ী অসুস্থ থাকায় ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছিলাম। আপনাদেরকে দেখে ফিরে এলাম। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোথায়?-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বর্তমানে বল্লভপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছেন। বিদ্যালয়েরই কাজে তিনি সেখানে গিয়েছেন।’ এসময় গীতা দে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে প্রায় আধাঘন্টা পর পার্শ্ববর্তী বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছুটে আসেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুক্তা রায়। কথা হয় তার সাথে। অসময়ে বিদ্যালয় ছুটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। তবে, প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে দেরী করে আসা ও প্রতিদিন দুপুরেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, কচরাকেলী গ্রামে জনসংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় ও আশপাশে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়-মাদ্রাসা থাকায় এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম।
সংবাদকর্মীরা যখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলছেন, ঠিক সে সময়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে উপস্থিত হয়েই তাদের সাথে রূঢ় ভাষায় কথা বলা শুরু করেন পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম। বিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য ও বক্তব্য দেয়া যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে (বিদ্যালয়ে) সাংবাদিক নিষিদ্ধ। আপনারা কার অনুমতিতে এখানে এসেছেন? বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছাইম উল্লাহকে মুঠোফোনে কল দিলেও পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিদ্যালয় ছুটি দেয়ার কারণে দুই শিক্ষককে শোকজ করা হবে। এছাড়াও, শিগগিরই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান বিষয়টি জানা নেই উল্লেখ করে বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখছি। কথা বলতে সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বায়েজীদ খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটা রিসিভ হয়নি।
Sharing is caring!