সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া গ্রেপ্তারের পর দুই দফায় সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদেও এত টাকার তথ্য গোপন রাখার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের এ কর্মকাণ্ড ইঙ্গিত করে কতটা ধূর্ত এ দুই ভাই। এ ছাড়াও দেশের বাইরে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা, অর্থ পাচার ও লুকিয়ে রাখা এবং জব্দকৃত অর্থের মালিক তারাই নাকি অন্য কেউ? এমন অনেক প্রশ্ন জন্ম নেয়ায় সেগুলোর উত্তর খুঁজছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুতই দুই ভাইকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমখি করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায় র্যাব গতকাল বুধবার ওয়ারী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেছে। এছাড়াও পুলিশের বিশেষ অপরাধ তদন্ত শাখাকে (সিআইডি) মানিলন্ডারিং মামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পুরান ঢাকার ১১৯/১ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনু ও রুপনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর, প্রায় এক কেজি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, ৯ হাজার ৩০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, পাঁচ হাজার ৩৫০ ইন্ডিয়ান রুপি, এক হাজার ১৯৫ চাইনিজ মুদ্রা, ১১ হাজার ৫৬০ থাইবাথ ও ১০০ দিরহাম ইউএই জব্দ করা অর্থও ওয়ারী থানায় জমা দেয়া হয়েছে।
বিষয়টির সত্যতা ভোরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সুজয় সরকার। এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে ২৪ সেপ্টেম্বর গেণ্ডারিয়ায় এনু ও রুপনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিন্দুকভর্তি প্রায় ৫ কোটি টাকা, আট কেজি স্বর্ণ ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছিল র্যাব। সে সময় পলাতক থাকলেও চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি নাটকীয়ভাবে কেরানীগঞ্জ থেকে এনু ও রুপনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এরপর দুই দফায় সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা সিআইডিকে অঢেল সম্পদের তথ্য দেন। এখন পর্যন্ত এনু-রুপন সিআইডিকে ২৪ বাড়ির তথ্য দিয়েছেন। এসব বাড়ির ফ্ল্যাটসহ ঢাকায় ১২১টি ফ্ল্যাট, ১২ প্লটে ৭২ কাঠা জমি ও পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন তারা। তবে প্রায় ২৭ কোটি টাকার কথা চেপে যান তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদেও এত টাকার কথা এড়িয়ে গেছে তারা। এটি ইঙ্গিত দেয় কতটা ধূর্ত এ দুই ভাই। তারা হয়তো অনেক তথ্য এখনো গোপন রেখেছেন।
এছাড়াও গত মঙ্গলবারের অভিযানে এনু-রুপনের লালমোহন স্ট্রিটের মমতাজ ভিলায় নিচতলার পাঁচটি সিন্দুক থেকে টাকা পাওয়া গেলেও, দ্বিতীয় তলার বড় দুটি সিন্দুক ফাঁকা পাওয়া যায়। তাই তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন এখান থেকে টাকা সরানো হয়েছিল কিনা। আর তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই এরকম একটি ভবনে কোটি-টাকা লুকিয়ে রেখেছিল তারা বিষয়টি ভাববার মতো। তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র বলছে, নেপাল ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। আর ক্যাসিনোর ম্যাজিকম্যান নেপালি নাগরিক হ্যারির মাধ্যমেই ওয়ান্ডার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসান এ দুই ভাই।
ক্যাসিনোর সরঞ্জাম ক্লাবে ঢোকে তার মাধ্যমে। লাভের নির্দিষ্ট অঙ্ক হ্যারি পেতেন। বাকিটা পেতেন তারা। আর দুই ভাই নেপালে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাই তাদের নেপালে ক্যাসিনো ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে কিনা বা সেখানে তারা টাকা পাচার করেছেন কিনা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, আসামির কাছ থেকে তথ্য বের করে আনা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ দুই ভাইকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে আমরা তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান বের করেছি। আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনো জানার রয়েছে। র্যাবের টাকার উদ্ধারের ঘটনায় একটি মানি লন্ডারিং মামলা হবে। তখন এনু ও রুপন দুই ভাইকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব আমরা। আশা করছি তখন আমরা আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd