পাঁচ বছর আগে পরিচয়, এক রাতেই শেষ দুই বান্ধবীর জীবন

প্রকাশিত: ১:৩৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০

পাঁচ বছর আগে পরিচয়, এক রাতেই শেষ দুই বান্ধবীর জীবন

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পাঁচ বছর আগে সনিয়া (৩০) ও দুলদানা আক্তার কচির (৩২) পরিচয়। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। এরপর দুজনের একসঙ্গে পথচলা শুরু। রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন তারা। কচির মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। সনিয়ার মা-বাবাকেই তিনি মা-বাবা বলে ডাকতেন।

এর মধ্যে সনিয়ার নয় মাস আগে ভারতে এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। সেখানেই ছিলেন সনিয়া। ছুটিতে বাবা-মা ও ভাইবোনের সঙ্গে সময় কাটাতে দেশে আসেন। একমাস ধরে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।

বান্ধবী কচির স্কুটিতে ঢাকার বিভিন্ন পুরনো বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে কচির স্কুটি করে বনানীতে তাদের এক সিনিয়র বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন সনিয়া। সেখান থেকে বাসায় ফেরার সময় গাড়িচাপায় দুই বান্ধবী নিহত হন। মৃত্যুই আলাদা করলো তাদের দুজনকে।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দেখা গেছে সনিয়ার মা মনোয়ারা বেগম, নানী, দুই ভাই, এক খালা, তার বোন এবং ভাইয়ের স্ত্রী বসে আছেন। তখন মর্গে সনিয়ার ময়নাতদন্ত চলছিল।

সনিয়ার গ্রামের বাড়ি ভোলা সদরের মাছবেদুরিয়া এলাকায়। তার বাবার নাম রুহুল আমিন। মঙ্গলবার রাতে (২৫ ডিসেম্বর) রাতে সড়কে সনিয়ার মৃত্যুর পর তার মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের নম্বর পেয়ে বাসায় ফোন দেয় পুলিশ। তাদের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয় স্বজনদের। তবে কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বারবার হাসপাতালে আসতে বলার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে মেয়ের লাশ পান মনোয়ারা বেগম।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আমি সনিয়াকে ফোন দেই। বাসায় কয়েক প্যাকেট বিরিয়ানি আনিয়েছিলাম। তাই সনিয়াকে ফোন দিয়েছিলাম, যাতে দ্রুত বাসায় আসে। তখন সনিয়া ফোন ধরে বলে, মা আমি বনানী মিনু আপার বাসায়। আমার সঙ্গে কচিও আছে। আমরা একটু পরে বাসায় আসছি। এরপর আমার সঙ্গে আর কথা হয়নি।

মনোয়ারা বেগম তার মেয়ের বিভিন্ন স্মৃতি মনে করে কান্নায় ভেঙে পরেন। সনিয়ার ভাই মো. ফারুক বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ভোলাতে হলেও আমরা দীর্ঘদিন ধরে শাহআলী এলাকায় বসবাস করছি। এখানেই আমাদের বেড়ে ওঠা। সনিয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতো। কচি তার বান্ধবী। তারা একসঙ্গে চাকরি করতো। ভারত থেকে আমদানি করা কসমেটিক্সের দোকানে চাকরি করতো সনিয়া। সেখানে চাকরি করার সময় সৈয়দ মহসিন নামে ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার সঙ্গে নয়মাস আগে ভারতেই বসে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে ছুটিতে বেড়াতে এসেছিল। তার স্বামীরও আসার কথা ছিল।

এদিকে দুলদানা আক্তার কচির বাবার নাম সৈয়দ ফজলুল হক, মা রেখা আক্তার। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর এলাকায়। তারা দুই বোন। বড়বোন চুমকি গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থাকেন। তবে বাড়িতে বেশি একটা যান না কচি।

কচির মামা নুরুল ইসলাম বলেন, কচি ও সনিয়া কল্যাণপুরের একটি একরুমের বাসায় ভাড়া থাকতো। তার বাবা-মা কেউ নেই। আপন বলতে তার বড়বোন। কচি পার্ল ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানির ট্যারিটরি ম্যানেজার ছিল। তবে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে সে কাজ করতো আমরা তা জানি না। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বাড়িতে নিয়ে এসেছি।

মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনের সামনে স্কুটার আরোহী সনিয়া ও কচিকে চাপা দেয় একটি গাড়ি। পরবর্তীতে পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকরা রাত দেড়টার দিকে দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় বনানী থানায় দুর্ঘটনাজনিত মামলা হয়েছে। তবে চাপা দেওয়া গাড়িটি এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা ঘাতক গাড়িটি শনাক্তে কাজ করছি। ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ফুটেজ দেখে ঘাতক গাড়িটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..